নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ মার্চ৷৷ ভারতবর্ষে নারীদের সব থেকে বেশি সম্মান করা হয়৷ নারীদের সম্মান করা এ দেশের পরম্পরাগত ঐতিহ্য৷ আজ সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ২০১৪ সালে কেন্দ্রে সরকার গঠিত হওয়ার পর থেকে নারীদের স্বশক্তিকরণের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের কল্যাণে যে প্রকল্পগুলি নেওয়া হয়েছে তার অধিকাংশই মহিলাদের কথা চিন্তা করে চালু করা হয়েছে৷ এরমধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় প্রকল্প হলো স্বচ্ছ ভারত অভিযান৷ এই প্রকল্পের অন্তর্গত প্রধানমন্ত্রী শৌচালয় যোজনা বিশেষ করে নারীদের সুুরক্ষার্থেই করা হয়৷ এই প্রকল্পে ছোট ছোট ছাত্র-ছাত্রীদের সুুবিধার্থে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শৌচালয় গড়ে তোলা হয়৷ এর ফলে বর্তমানে বিদ্যালয়গুলোতে ছেলেদের পাশাপাশি সমভাবে মেয়েদের উপস্থিতিও পরিলক্ষিত হচ্ছে৷ একই সঙ্গে বাড়ির মহিলাদের সুুবিধার জন্য তাদের নিজ বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে৷ ত্রিপুরাতেও ১ লক্ষ ৩৫ হাজার শৌচালয় নির্মাণ করা হয়েছে৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের মহিলাদের ক্ষমতায়ন এবং আরও সুুরক্ষার জন্য বর্তমান রাজ্য সরকার নেশামুক্ত ত্রিপুরা গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে৷ এই পদক্ষেপ নেওয়ার পর গত এক বছরে রাজ্যে নারী নির্যাতনের হার ৭ শতাংশ হাস পেয়েছে৷ নারীদের সার্বিক সহযোগিতায় এ কাজে সাফল্য এসেছে বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন৷ আগামী ৫ বছরে ত্রিপুরাকে নারী নির্যাতনমুক্ত রাজ্য হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে৷ গাঁজা সহ বিভিন্ন নেশা সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করার ক্ষেত্রেও ত্রিপুরাবাসী বিশেষ করে রাজ্যের মহিলারা সহযোগিতা করছেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষণ করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় বিদেশমন্ত্রী হিসাবে সুুষমা স্বরাজ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসাবে নির্মলা সীতারমন এবং লোকসভার অধ্যক্ষ হিসাবে সুুমিত্রা মহাজন সুুনামের সঙ্গে কাজ করে দেশকে গর্বিত করেছেন৷ একই সঙ্গে সুুপ্রিম কোর্টেও মহিলা বিচারপতি রয়েছেন৷ আমাদের রাজ্যের মহিলারাও সমভাবে এগিয়ে যাবেন বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন৷ তিনি বলেন, নারীদের স্বাস্থ্য সুুরক্ষায় বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী উজ্জলা যোজনার মাধ্যমে মহিলাদের রান্নার সুুবিধার জন্য গ্যাস সংযোগের ব্যবস্থা করেছেন৷ আমাদের রাজ্যেও ২ লক্ষ ১৫ হাজার পরিবারকে গ্যাস সংযোগ ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে মহিলাদের অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে৷ আগরতলায় মহিলাদের জন্য বি এড কলেজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ বি এড অনুপ্রেরণা অ্যাওয়ার্ড চালু করা হয়েছে৷ এছাড়াও নবম শ্রেণীতে পাঠরত প্রত্যেক ছাত্রীকে বাইসাইকেল প্রদান করা হচ্ছে৷ প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মাধ্যমে ৫ হাজার পরিবারকে গাভী প্রদান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন এক্ষেত্রেও মহিলাদের প্রাধান্য দেওয়া হবে৷
এবারের রাজ্য বাজেটে বিভিন্ন ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে৷ এতে করে বড় সংখ্যায় মহিলারা উপকৃত হবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান৷ তিনি আরও বলেন, অপরাধীদের দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি বিধানের ক্ষেত্রে ত্রিপুরার হার অনেকটাই বেড়েছে৷ রাজ্যে চুরি, ছিনতাই, বাইক চুরি ইত্যাদি অপরাধের ক্ষেত্রেও কঠোর শাস্তি বিধানের জন্য আইন এনেছে রাজ্য সরকার৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার নারীদের দুঃখ-কষ্ট মোচনে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ আগামীদিনে মডেল রাজ্য গঠনে চাই আদর্শ মা, আদর্শ বোন৷ রাজ্যের মহিলারাও সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে৷
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বলেন, সমাজের মূল নির্মাতা হচ্ছেন মহিলারা৷ তাই মহিলা ব্যতীত সমাজের উন্নয়ন সম্ভব নয়৷ তিনি বলেন, সমাজের অন্তিম স্থানে অবস্থানকারী ব্যক্তির উন্নয়ন না হলে রাজ্যের উন্নয়ন সম্ভব নয়৷ রাজ্য সরকারের এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা এই শ্লোগানটির স্বার্থকতা তখনই আসবে যখন নারীদের উন্নয়ন হবে৷ সবকা সাথ সবকা বিকাশ এই মূল মন্ত্রকে সামনে রেখে দেশ যেভাবে এগিয়ে চলেছে সেইক্ষেত্রে মহিলাদেরও সমানভাবে এগিয়ে আসতে হবে৷ নারী দিবসকেও স্বাধীনতা দিবসের ন্যায় উদযাপন করতে হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন৷ তিনি মহিলাদের কল্যাণে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্পগুলি তুলে ধরে মহিলাদের এসকল বিষয়ে সচেতন থাকতে আহ্বান জানান৷
অনুষ্ঠানের সভাপতি সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী সান্তনা চাকমা বলেন, মহিলাদের সম্মান এবং অধিকার রক্ষার্থে এই দিনটি উদযাপন করা হয় যাতে করে মহিলারা কোন অংশে পিছিয়ে না থাকে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরা রাজ্যের মহিলারা অগ্রসর হচ্ছে৷ সমাজে মেয়েদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে তবেই নারী পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে৷ তিনি বলেন, মহিলাদের উন্নয়নে নিজেদের একশ শতাংশ উদ্যোগী হওয়ার পাশাপাশি পুরুষদেরও সেই বিষয়ে ভূমিকা রয়েছে৷ তাদেরকেও মহিলাদের উন্নয়নের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে৷