মাধববাড়ির ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট তদন্তে অসঙ্গতি রয়েছে ঃ আইএনপিটি

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা ৫ মার্চ৷৷ জিরানিয়ার মাধববাড়িতে গত ৮ জানুয়ারি নেসুর ডাকা বনধ চলাকালে বনধ সমর্থকদের ওপর হিংসাত্মক কার্যকলাপের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত রিপোর্টকে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে দাবি করেছে আই এন পি টি৷ বিধানসভার বাজেট অধিবেশন চলাকালে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এ ব্যাপারে যে বিবৃতি দিয়েছেন তা থেকেই তা প্রমাণিত বলে দাবি করেছেন বিজয় রাঙ্খলরা৷ হাইকোর্টের একজন কর্মরত বিচারপতিতে দিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্ত করার জন্য দাবী জানিয়েছে সংগঠন৷

মঙ্গলবার আগরতলায় আইএনপিটির রাজ্য কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে মাধববাড়িতে গত ৮ জানুয়ারি সংঘটিত ঘটনা সম্পর্কে রাজ্য সরকারের তরফে যে ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ে তদন্ত করা হয়েছে সেই তদন্ত রিপোর্টকে অসঙ্গতিপূর্ণ বলে দাবি করেছেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ৷ ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের এই তদন্ত রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করা না হলেও বিধানসভা অধিবেশন এ তদন্ত রিপোর্ট পেশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এই তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে বিবৃতি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে তথ্য উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন তার সঙ্গে প্রকৃত ঘটনার অনেক ফারাক রয়েছে বলে আইএনপিটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে৷

আইএনপিটি সভাপতি বিজয় কুমার রাংখল বলেন, ওই দিনের ঘটনায় গুলিতে যারা আহত হয়েছিলেন তারা রাইফেলের গুলিতে নাকি পিস্তলের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন সে সম্পর্কে বিবৃতিতে স্পষ্ট ভাবে কিছু বলা হয়নি৷ কতজন গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন তাও বলা হয়নি৷ টিএসআর, পুলিশ নাকি সিআরপিএফ গুলি চালিয়েছিল তারও কোন করেননি মুখ্যমন্ত্রী৷ সাথে যোগ করেন, ঘটনার পর যে অ্যাম্বুলেন্সে করে রোগী নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সেই অ্যাম্বুলেন্স এবং রোগীকে মারধর করা হয়৷ শুধু তাই নয় পার্শ্ববর্তী দশরাম পাড়ায় বাড়ি ঘরে হামলা চালানো হয়েছিল৷ কেন এই হামলা চালানো হয়েছিল এবং কারা এই হামলার সঙ্গে যুক্ত সে সম্পর্ক মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতিতে কিছুই উল্লেখ নেই বলে অভিযোগ করেন আইএনপিটির সভাপতি৷ তাঁর অভিযোগ, নিরাপত্তা কর্মীরাই এই হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে৷ তিনি বলেন, তারাই মহারাজা বীর বিক্রম কিশোরের স্ট্যাচু নষ্ট করে দিয়েছে৷ তাঁর কথায়, বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে এসব বিষয় স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন ছিল বলে মনে করে আইএনপিটি৷ তাই, অসঙ্গতিপূর্ণ এই তদন্ত রিপোর্ট এর বিরোধিতা করে হাইকোর্টে কর্মরত একজন বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত না করলে আইএনপিটি বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে৷ এমনকি আইনের আশ্রয় নেবেন বলেও শ্রীরাঙ্খল হুশিয়ারী দিয়েছেন৷

শ্রীরাঙ্খল আরো বলেন, গত ৮ জানুয়ারি মাধব বাড়িতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ পোশাকে কিছু লোকজন সন্ত্রাস চালিয়েছে বলে অভিযোগ৷ তারা বিজেপির শ্রমিক সংগঠন বিএমএস সমর্থক বলেও দাবি করেন তিনি৷ তাঁর কথায়, ১৯৮০ সালে দূর্গা চৌমুহনী ভিলেজে যেভাবে হিংসাত্মক কার্যকলাপ সংগঠিত করা হয়েছিল সেই ধাঁচেই মাধববাড়িতে ওইদিন হিংসাত্মক কার্যকলাপ সংগঠিত করার চেষ্টা করা হয়েছিল৷

এদিন আইএনপিটি সাধারণ সম্পাদক জগদীশ দেববর্মা অভিযোগ করেন, ৮ জানুয়ারি মাধববাড়িতে শান্তিপ্রিয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বিজেপি আইপিএফটি জোট সরকার হিংসাশ্রয়ী আখ্যায়িত করেছে৷ এ ধরনের মন্তব্যের মধ্য দিয়ে জনজাতিগোষ্ঠীকে সন্ত্রাসবাদি আখ্যায়িত করার চেষ্টাও করা হয়েছে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷

এদিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গত ২৩ জানুয়ারি দেশের দশটি স্ব-শাসিত জেলা পরিষদকে অধিক ক্ষমতা প্রদানের অনুমোদন দিয়েছে৷ মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিলেই ক্ষমতা বাড়ানো যায় না বলে উল্লেখ করেন আই এন পি টি নেতৃবৃন্দ৷ এজন্য লোকসভায় বিল পাস করার প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *