বাসুদেব ধর ঢাকা ১১ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : বাংলাদেশ সরকারের জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে খবর প্রকাশিত হওয়ার পর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গরুর দুধ, দই এবং গো-খাদ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক, সিসা রয়েছে, তা নিরূপণের জন্য একটি সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল এ আদেশ দেন। দুধ, দই ও গো-খাদ্য নিয়ে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে সরকারের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রতিবেদনে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে।
আদালতের নির্দেশে আগামি ১৫ দিনের মধ্যে খাদ্য সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নিরাপত্তার খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সব সদস্য, কেন্দ্রীয় নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি এবং বিএসটিআইর চেয়ারম্যানকে জরিপের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া দুগ্ধজাত খাবার ভেজাল প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে রুল জারি করেছেন আদালত। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তিপ্রদানের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। পরবর্তী শুনানির জন্য ৩ মার্চ দিন ঠিক করেছেন হাইকোর্ট।বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আইনজীবী মামুন মাহবুব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক। এ সময় শুনানিতে আদালত বলেছেন, খাদ্যে ভেজাল মেশানো একটি বড় দুর্নীতি। এ ধরনের ভেজালে মানুষের কিডনি, লিভার নষ্ট হচ্ছে; ক্যানসার হচ্ছে। কোর্ট উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মানুষ এখন শুধু টাকার পেছনে ঘুরছে। দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে কেউ ভাবছেন না।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। প্রতিবেদনে জানানো হয়, গাভীর খোলা দুধের ৯৬টি নমুনা পরীক্ষায় ৯৬ শতাংশ দুধেই রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর অণুজীব। ১৫ শতাংশ দুধে মিলেছে মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি সিসা। ১৩ শতাংশে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি টেট্রাসাইক্লিন, ৯ শতাংশে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি কীটনাশক ও ৩ শতাংশে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি আফলাটক্সিনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বাজারে থাকা প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনার ৬৬ থেকে ৮০ শতাংশে বিভিন্ন অণুজীব, ৩০ শতাংশে একইভাবে মানুষের শরীরের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রার টেট্রাসাইক্লিন, একটিতে বেশি মাত্রার সিসা, কয়েকটিতে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও এনরোফ্লোক্সাসিন পাওয়া গেছে।