গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জনসংযোগে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান, ৭৪তম জনশিক্ষা দিবসের অনুষ্ঠানে মানিক সরকার

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ ডিসেম্বর৷৷ ত্রিপুরা রাজ্য উপজাতি গণমুক্তি পরিষদ আয়োজিত ৭৪তম জনশিক্ষা দিবসের এক অনুষ্ঠানে

৭৪ তম জনশিক্ষা দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠানে বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার৷ ছবি- নিজস্ব৷

বৃহস্পতিবার বিরোধী দলনেতা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জনসংযোগ বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দিলেন৷ সাথে তিনি দেশে মৌলবাদ, সম্প্রদায়িকতা ও স্বৈরাচার রুখতে শপথ নেবার কথা বললেন৷

বিরোধী দলনেতা এদিন দেশের শাসক দলকে কটাক্ষ করে বলেন, মাথা যেখানে পঁচে গিয়েছে ল্যাজ তো সেখানে পঁচবেই৷ তাঁর কথায়, এই সরকারটা শুধু সাম্প্রদায়িক নয়, স্বৈরাচারী এবং সংবিধান বিরোধীও৷ পাশাপাশি এই সরকার দেশের জনগণের ১ ভাগ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য ৯৯ ভাগ মানুষের স্বার্থকে ওই ১ ভাগের পদতলে প্রবাহ দিচ্ছে৷ এ কারণেই ধারাবাহিকতা বজার রেখে যেখানে ২০১৪ সাল থেকে একের পর এক যে রাজ্যগুলিতে তাদের উত্থান হয়েছিলো, সেখানে তাদের পতন হচ্ছে৷ তিনি এদিন রাজ্যের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেন, রাজ্যের যে এক যাত্রায় পৃথক ফল হবে সেটা ভাবার কারণ নেই৷ কাজের যা হবার তাই হচ্ছে৷ সাংবিধানিক অধিকার বিঘ্নিত হচ্ছে৷ এই অবস্থায় আজকের দিনে জনশিক্ষা সমিতির শ্লোগান মনে করিয়ে তিনি বলেন, অনেকটাই সফলতা এসেছে কিন্তু অনেক বাকি রয়েছে৷ এজন্য সংগ্রাম, আন্দোলনও জারি রাখতে হবে৷

এদিন তিনি গণমুক্তি পরিষদের দিশা দেখিয়ে বলেন, স্মরণ করতেহবে কম্যুনিষ্টদের৷ সংগ্রাম থেকে সরে দাঁড়ালে তো শত্রুপক্ষেরই সুবিধা হবে৷ কাজেই তা না করে তিনি লড়াই আন্দোলন জারি রাখার কথা বলেন৷ পরিস্থিতির পরিবর্তন আনার কথা বলেন৷ আরও বলেন, মানুষের সাথে জনসংযোগ স্থাপন করতে হবে৷ যারা বিগত বিধানসভা নির্বাচনেও ভুল করে তাদের থেকে সরে দাড়িয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, মানুষই ভুল করে আবার মানুষই ভুল থেকে শিক্ষা নেয়৷ এজন্য মানুষ থেকে সরে না গিয়ে মানুষের সাথে আরও বেশি করে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে৷ বিশেষ করে তিনি এদিন জাতি-উপজাতি সহ সব অংশেরই যুব সম্প্রদায়ের উপর বিশেষ করে গুরুত্ব দিলেন৷ আরও বললেন, নিজেকে কম্যুনিস্ট ভেবে কেউ যদি নিজের ঘরকে নিশ্চিত ভাবেন, এটা হবে আরও বড় ভুল৷ জনসংযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে তিনি নিজের ঘরকেই আগে এসব বিষয়ে বিস্তারিত বুঝাবার কথা বলেছেন৷

তিনি বুঝিয়ে বলেন, ঘরে সকলকে বুঝাবার চেষ্টা করতে হবে৷ বিশেষ করে কেউ যদি মনে করেন আমি বামপন্থী, আমি কম্যুনিস্ট, আমি জন্ম থেকেই বামপন্থায় বিশ্বাসী, আমি জিএমপি, তাহলে কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভুল হবে৷ সবার আগে নিজের ঘর থেকে জনসংযোগ স্থাপনের কাজটি শুরু করে তারপর প্রতিবেশী এবং আস্তে আস্তে এর ব্যাপ্তি ঘটাতে হবে৷ বিশেষ করে তরুণ তরুণীদের উপর নজর রাখার কথা বলেন তিনি৷
এদিন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে তিনি বলেছেন, বৃহস্পতিবারই তো রাজ্যের পুর সংস্থার উপভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে৷ ১০ মাস আগে যেখানে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে এখনই কেন ভোটদানে বাধা দেওয়া হচ্ছে, প্রশ্ণ তুলেন তিনি৷ তাঁর মতে, মানুষকে তারা বিশ্বাস করতে পারছে না৷ তারা ভালোই জানেন নির্বাচনের সুযোগ করে দিলে কী অবস্থা হবে, কটাক্ষের সুরে বলেন তিনি৷ মানিক সরকারের কথায়, গত ১০ মাসে কোনও জনমুখী কাজে ভূমিকা রাখতে পারেননি শাসকদল৷ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিই সার, কাজের কাজ কিছুই নয়৷ সহায়ক কোনও কর্মসূচিও নেই, বলেন বিরোধী দলনেতা৷ সাথে তিনি রাজ্যে শান্তি বিঘ্নিত বলে মন্তব্য করেছেন৷ বলেছেন, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা চালু হবার পর আজ অব্দি ৫০ শতাংশের উপর আসনে নির্বাচন হবার নজির নেই৷ কাজ এবং খাদ্যের অভাবে মানুষ বিদেশ চলে যাচ্ছেন কেন, শাসক দলের কাছে জবাব চেয়েছেন তিনি৷