নয়াদিল্লি, ১৭ ডিসেম্বর (হি.স.): শিখ-বিরোধী হিংসায় (১৯৮৪) দিল্লি হাইকোর্টে দোষীসাব্যস্ত হয়েছেন কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমার| সোমবার ১৯৮৪-র শিখ-বিরোধী হিংসায় কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে দিল্লি হাইকোর্ট| পাশাপাশি দিল্লি হাইকোর্টের নির্দেশ, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে হবে সজ্জন কুমারকে| এর আগে ট্রায়াল কোর্টের রায়ে বেকসুর খালাস হয়েছিলেন সজ্জন কুমার| সেই রায়কে সোমবার খারিজ করে দিয়েছে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি এস মুরলীধর এবং বিচারপতি বিনোদ গোয়েলের ডিভিশন বেঞ্চ| শিখ-বিরোধী হিংসায় দিল্লি হাইকোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)| দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর মুখপাত্র ড. সুরেন্দ্র জৈন জানিয়েছেন, ‘স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে নৃশংস এই গণহত্যার অপরাধী অবাধেই ঘোরাফেরা করছে এবং নিহতদের পরিজনরা বিচারের দাবিতে চোখের জল নিয়ে প্রশাসনের দরজায় কড়া নাড়ছে| ভারতের ইতিহাসে এমন কখনও হয়নি| যদিও, মূল দোষী এখনও সাজা পায়নি| কিন্তু, সজ্জন কুমারের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড শিখ সম্প্রদায়কে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিল|’ ভিএইপি মুখপাত্র ড. সুরেন্দ্র জৈন আরও জানিয়েছেন, আমাদের দীর্ঘ বিশ্বাস শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় সমস্ত দোষীকে পাকড়াও করা হবে এবং প্রত্যেককে কঠোর থেকে কঠোরতম সাজা দেওয়া হবে|
সোমবার ১৯৮৪-র শিখ-বিরোধী হিংসার রায়দানে দিল্লি হাইকোর্ট জানিয়েছে, ‘১৯৪৭ সালে, দেশভাগের সময় বহু মানুষকে হত্যা করা হয়| ৩৭ বছর পর একইরকম ট্রাজেডির সাক্ষী থেকেছে দিল্লি| অভিযুক্ত রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা উপভোগ করেছে|’ সজ্জন কুমার ছাড়াও ক্যাপ্টেন ভাগমল, গিরিধারী লাল এবং প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর বলওয়ান খোকরকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে দিল্লি হাইকোর্ট| পাশাপাশি কিশান খোক্কর এবং প্রাক্তন বিধায়ক মহেন্দ্র যাদবকে ১০ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে|
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পর দিল্লি জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল শিখ হত্যা| সেই দাঙ্গায় মদত দেওয়ার অভিযোগে কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমারকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দণ্ডিত করেছে দিল্লি হাইকোর্ট| ২০০৫ সালে নানাবতী কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে সজ্জন কুমারের বিরুদ্ধে মামলার পুর্নতদন্ত শুরু করে সিবিআই| গত ১৬ নভেম্বর শুনানি চলাকালীন চ্যাম কৌর নামে এক সাক্ষী আদালতে জানান, ১৯৮৪ সালে দাঙ্গার সময়ে দিল্লির সুলতানপুরী এলাকায় কি ভাবে উত্তেজনা ছড়িয়েছিলেন সজ্জন| সেখানে সজ্জন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার জন্য শিখদেরই দায়ী করেছিলেন বলে জানান ওই সাক্ষী| সজ্জনের শিখ-বিরোধী ভাষণের পরই দুই ব্যক্তিকে গুলি করে মারা হয় বলেও জানান তিনি| এছাড়াও শীলা কউর নামে আরও এক সাক্ষী আদালতে দাঁড়িয়ে সজ্জন জিন্দলকে শিখ দাঙ্গার অন্যতম প্ররোচনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন| সজ্জন ছাড়াও এই মামলায় আরও যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তাঁরা হলেন প্রাক্তন কংগ্রেস কাউন্সিলর বলওয়ান খোকর, অবসরপ্রাপ্ত নৌসেনা আধিকারিক ক্যাপ্টেন ভাগমল, গিরিধারী লাল, কিশান খোক্কর ও প্রাক্তন বিধায়ক মহেন্দ্র যাদব| ট্রায়াল কোর্ট বাকিদের কারাদণ্ড দিলেও সজ্জন কুমারকে বেকসুর খালাস করে দেয়| সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই ২০১৩ সালে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করা হয়|
বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর পাশাপাশি দিল্লি হাইকোর্টের রায়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন শিরোমণি অকালি দলের নেতা মণজিন্দর সিং সিরসাও| তাঁর কথায়, ‘আমাদের ন্যায়বিচার দেওয়ার জন্য আদালতকে ধন্যবাদ| সজ্জন কুমার এবং জগদীশের মৃত্যুদণ্ড না হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে|’ আবার রায় শোনার পরই দিল্লি হাইকোর্টের বাইরে আনন্দে মেতে ওঠেন এইচ এস ফুলকা এবং মনজিন্দর সিং সিরসা|