নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ সেপ্ঢেম্বর৷৷ শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য বদলি নীতি হবেই৷ তাতে কেউ রাজনীতির শিকার হবে না৷ রাজ্যের সরকারী শিক্ষক কর্মচারীদের এইভাবেই অভয় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তাঁর কথায়, রাজনৈতিক কারণে বদলি পছন্দ করি না৷ তাই চাইছি এই ব্যবস্থার পরিবর্তন হোক৷
বুধবার ৫৭ তম রাজ্য ভিত্তিক শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের রাজ্যের আয়তন খুব ছোট৷ সুতরাং রাজ্যে দূরবর্তী স্থান বলে কোন স্থানকে মনে করা ঠিক হবে না৷ তাই শিক্ষকদের নিজের কর্মস্থলকে মনে প্রাণে ভালবাসতে হবে৷ তবেই শিক্ষা প্রদানে শিক্ষকরা উৎসাহিত হবেন৷ শিক্ষক শিক্ষিকারা যে যেখানে রয়েছেন সেখানে সঠিকভাবে শিক্ষা প্রদানের আবেদন রাখেন মুখ্যমন্ত্রী৷ এদিন তিনি জানান, রাজ্যে নতুন বদলি নীতি হবেই৷ কিন্তু, এই নীতিকে কেউ ভয় পাবেন না৷ তাঁর কথায়, বর্তমান বদলি নীতির ঘোর বিরোধী আমি৷ কারণ, রাজনৈতিক কারণে বদলি হোক তা পছন্দ করি না৷ তাই বর্তমান ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে চাইছি৷
এদিকে, রাজ্যের শিক্ষার উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ত্রিপুরার মহারাজাদের স্মরণীয় অবদানের কথা তিনি বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বহুকাল আগে থেকে ত্রিপুরা রাজা মহারাজারা শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ শুরু করেছিলেন৷ বর্তমানে রাজ্য সরকারও শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ ইতিমধ্যেই সৈনিক সুকল, নবোদয় বিদ্যালয়, ট্রিপল আইটি, নতুন চারটি বি এড কলেজ স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ রাজ্যের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার মেধা তালিকায় স্থান পাওয়া কৃতি ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহদানের লক্ষ্যে এ বছর থেকে চীফ মিনিস্টার স্টেট অ্যানুয়েল অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে৷ এছাড়া নবম শ্রেণীতে পাঠরত সকল ছাত্রীদের বাইসাইকেল প্রদান করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে রাজ্য সরকার৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য ২০১৯ সাল থেকে রাজ্যে এনসিইআরটির সিলেবাস চালু করা হবে৷ এই সিলেবাস চালু হওয়ার ফলে রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জন করতে পারবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন৷ তিনি শিক্ষক শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে বলেন, তারা যাতে ছাত্রছাত্রীদের প্রতি এবং সমস্ত বিদ্যালয়ের প্রতি সমানভাবে আন্তরিক হন৷ তাহলেই কোনও বিদ্যালয়কেই শিক্ষক শিক্ষিকাদের কাছে দূরে বলে মনে হবে না৷ মুখ্যমন্ত্রী সমাজ ও সমস্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র স্থাপন করার জন্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করেন৷
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ভাষণে রাজস্ব দপ্তরের মন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মা বলেন, সারাদেশে এমনকি বিদেশেও ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণানের নাম আজও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়৷ তাঁর জন্মদিনকে কেন্দ্র করে বিগত দিনে আমাদের রাজ্যে শিক্ষক দিবস পালন করা হলেও এবারের শিক্ষক দিবস উদযাপন নতুন বাতাবরণ তৈরি করেছে৷ বর্তমানে রাজ্যে শিক্ষার অগ্রগতি অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য৷ সাক্ষরতার নিরিখে আমাদের রাজ্য দেশের মধ্যে ভালো অবস্থানে রয়েছে, এজন্য আমরা সকলেই গর্ববোধ করি৷ তিনি বলেন, বীরচন্দ্র মানিক্যের শাসনকালেই শিক্ষাক্ষেত্রে মেধার সম্মাননা জানানো হয়েছিল৷ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ৷ তিনি বলেন, রাজ্যের ছেলেমেয়েদের মধ্যে যে মেধাশক্তি রয়েছে তাকে বের করার দায়িত্ব শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিতে হবে৷
অনুষ্ঠানে দুজন শিক্ষাবিদ ও গবেষককে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্মান-২০১৮ প্রদান করা হয়৷ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও প্রশাসক ড জি এন চ্যাটার্জীকে মরণোত্তর এই সম্মানে ভূষিত করা হয়৷ তাঁর পক্ষে সম্মাননা গ্রহণ করেন অধ্যাপক গোপাল চক্রবর্তী৷ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড জগদীশ গণচৌধুরীও এবারের পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সম্মান পেয়েছে৷ নব ত্রিপুরার রূপকার মহারাজা বীরবিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদূরের শিক্ষা প্রসারের অবদানকে সম্মান জানাতে এ বছরই চালু করা হয় তাঁর নামাঙ্কিত সম্মাননা৷ এই বছর এই সম্মাননা মরণোত্তর প্রদান করা হয় রাজ্যের বিশিষ্ট সমাজসেবী ও শিক্ষাব্রতী শ্যামাচরণ ত্রিপুরাকে৷ তাঁর পক্ষে এই সম্মাননা গ্রহণ করেন তাঁর সহধর্মিনী শ্রীমতি বনলক্ষ্মী ত্রিপুরা ও কন্যা শ্রীমতি অজিতা ত্রিপুরা৷ নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে মহারাণী তুলসীবতির অসামান্য অবদানকে স্বীকৃতি জানিয়ে এবরাই চালু করা হয় মহারাণী তুলসীবতি সম্মান-২০১৮৷ বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবী মহারাজ কুমারী কমলপ্রভা দেবীকে এই সম্মাননায় ভূষিক করা হয়৷ মহারাজকুমারীর পক্ষে এই সম্মান গ্রহণ করে তাঁর সুযোগ্য পুত্র রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা৷