সিউড়ি, ১৪ আগস্ট (হি.স.) : “ভারতের অনুপ্রবেশ কারীদের দেশ ছাড়া করবই। কারন আমরা দেশের জন্য রাজনীতি করি। দেশ আমাদের কাছে আগে। যারা অনুপ্রবেশকারিদের হয়ে চিৎকার করছে তারা ভোটের রাজনীতি করছে। মঙ্গলবার বীরভূমের রামপুরহাটে একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসে একথা বলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
এদিন সকালে রামপুরহাট শহরের মহাজন পট্টি এলাকায় ভারত মাতার পুজোর আয়োজন করা হয় বিজেপির পক্ষ থেকে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দিলীপ বাবু। সেই অনুষ্ঠানের শেষে তিনি সংবাদ মাধ্যমের সামনে বলেন, “দিনের পর দিন ভারতকে বিভাজিত করা হয়েছে। আমরা কোনো দেশকে আক্রমণ করিনি। আমাদের ওপরেই আক্রমণ হয়েছে। সেই কারনে আমাদের দূর্বল ভাবা হচ্ছে। তাই আশেপাশের দেশ আমাদের অশান্ত করার চেষ্টা করছে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজন হয়েছে একবার। পাকিস্তান কাশ্মীরের কিছুটা অংশ দখল করে রেখেছে। আগে বিদেশিরা ভারতবর্ষে লুঠ করত। এখন জঙ্গি কার্যকলাপ চলছে। আমরা প্রতিরোধ করার চেষ্ঠা করেছি।” এই পরই দিলীপ ঘোষ ভারতে অনুপ্রবেশ এবং এনআরসি-র গ্রহণ যোগ্যতা এবং প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “সারা দেশে এখন শান্তি আছে। অশান্তি শুধু পশ্চিম বাংলায়। লক্ষ লক্ষ মানুষ অনুপ্রবেশ করছে। বোমা বন্ধুক নিয়ে তারা প্রবেশ করছে। প্রতিদিন রাজ্যে অস্ত্র কারখানার হদিস মিলেছে। বাইরে থেকে লোক ঢুকে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরী করার চেষ্ করছে। দেশকে আবার বিভাজন করার চেষ্ঠা করা হচ্ছে। তাই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরী হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের পরে যারা ভারতে এসেছে তাদের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে।”
এদিন জেলার রামপুরহাটে ভারত মাতার পুজো অনুষ্ঠান শেষ করে তিনি সোজা চলে যান মহম্মদ বাজারের গনপুরে একটি দলীয় সভায়। গনপুরে মহম্মদ বাজার এলাকার থেকে যারা পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বিজেপি প্রতিকে জয় লাভ করেছে তাদের এদিন সম্মানিত করেন দিলীপ ঘোষ। তারপর মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে লক্ষ রেখে সরাসরি লোকসভা নির্বাচনের প্রচার করেন। তুলে ধরেন একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের কথা। যে সব প্রকল্পের দ্বারা সাধারন মানুষ সুবিধা পাচ্ছেন। সেই সঙ্গে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারি প্রকল্পকে রাজ্য সরকার নিজের নাম দিয়ে চালানোর চেষ্ঠা করছে বলে একাধিক প্রকল্পের কথা তুলে ধরে রাজ্যে সরকারের সমালোচনা করেন তিনি। তারপর তিনি মঞ্চা থেকেই তার বক্তব্যের মাধ্যমে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্ট পঞ্চায়েত নির্বাচন করার পক্ষেই রায় দেবে। তাই তিনি কর্মীদের প্রস্তুতিও নিতে বলেন। তিনি বলেন, “আমরা এবার পুরো ক্ষমতা দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াই করেছিলাম। চেয়ে ছিলাম যাতে ভাল মানুষরা ক্ষমতায় আসে। এবং কেন্দ্র সরকারের সুবিধা গুলো সাধারন মানুষ পায়। কেন্দ্র সরকার যে টাকা পাঠাচ্ছে সেই টাকা যেন গ্রামে পৌছায়। কিন্তু এই পঞ্চায়েত নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে এই তৃনমূল সরকার আমাদের মনোনয়ন করতে দেয় নি। মারপিট করেছে, বিডিও অফিস এসডিও অফিস ঘিরে রেখেছে। মনোনয়নের পর প্রচার করতে দেয় নি। বাড়ি ছেড়ে পালাতে হয়েছে প্রার্থীদের। ভোটের দিন ভোট দিতে দেয় নি মানুষকে। হাতে কালী লাগিয়ে দিয়ে বলেছে তোমার ভোট হয়ে গেছে। এমন কি ভোটের গণনার দিনও বাক্স ভেঙ্গে টিপ ছাপ দেওয়া হয়েছে। ব্যালট ছিড়ে দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের নির্বাচন আমরা সারা ভারতবর্ষে কোথাও দেখতে পায়নি। যেখানে সাধারন মানুষ ভোটে অংশ গ্রহণ করতে পারে না। ৩৪ শতাংশ আসনে ভোট হল না। তার পর যেখানে ভোট হল সেখানে ভোট দিতে দেওয়া হল না।” তিনি বলেন, “আজকে সুপ্রিম কোর্টে যে আসন গুলিতে নির্বাচন হয় নি। সেই আসন গুলিতে নির্বাচনের জন্য শুনানি হচ্ছে। আমাদের আশা সুপ্রিম কোর্ট আদেশ দেবেন যেখানে ভোট হয় নি সেখানে ভোট হোক। আর যদি ভোট হয় তাহলে যত গুন্ডা নিয়ে এসো আর যতই পুলিশ নিয়ে এসো তৃণমূল এবারে বিজেপিকে আটকাতে পারবে না। আমরা মনোনয়নও করব, ভোটও করব আর ভোটও জিতব। ওই বিডিও অফিস ঘিরে রেখে সাতদিন ধরে বিড়িয়ানি রান্না করে খাওয়া আর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জিতে গিয়ে যারা গামলা গামলা রসোগোল্লা খেয়েছে আমি তাদের বলে দিচ্ছি দিন খারাপ আসছে। যত গুলো রসগোল্লা খেয়েছ তোমরা তত গুলো করলা খাওয়াবো তোমাদের গুনে গুনে। আতে সুগার ঠিক হয়ে যায়। সেই ভয়ে তৃণমূল আছে।”
এর পর তিনি লোক সভা নির্বাচনকে লক্ষ রেখে তৃণমূল সরকারের দূর্নীতিকে তুলে ধরে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “তৃণমূলের দূর্নীতির বিরুদ্ধে দিলীপ বাবু তীব্র আক্রমণ করেন। ইনি বলেন, “দেশের এতোগুলো রাজ্যে বিজেপির সরকার আছে। এতো এতো এমএলএ এমপি চেয়ারম্যান মেয়র আছে। কারোর দিকে দূর্নীতির জন্য কেউ আঙ্গুল তুলতে পারবে না। অথচ সরকারি টাকায় তৃণমূলের ছোট খাটো নেতা থেকে বড় বড় মাথারা কোটি কোটি টাকা লুঠ করছে। সরকারি টাকায় বাড়ি গাড়ি করছে। দামি দামি সিগারেট খাচ্ছে। কার পয়সায়? এই গরিবের টাকায়। তৃণমূল পুলিশ দিয়ে আইন দেখাচ্ছে। আইন কিসের এবার আমরা দেখাবো। সব কটাকে জেলে ঢুকিয়ে মোটা চালের ভাত খাওয়াবো। এই গরিবের পয়সা মেরে যে বাড়ি গাড়ি করেছেন কাউকে ভোগ করতে দেওয়া হবে না। সব জেলের ভাত খেতে হবে। আপনারা লালু প্রসাদ যাদবের কথা জানেন। তিনি ১৫ বছর বিহারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। পশুখাদ্য কেলেঙ্কারিতে এক হাজার কোটি টাকা লুঠ করেছেন। সিবিআই তদন্ত হয়েছে সবকে জেলে ঢুকেছে। কাউকে ছাড়ব না আমরা। যে মানুষের টাকা লুঠ করেছে কাউকে ছারব না। বউ বাচ্চার মুখ দেখতে দেব না। সেই ব্যবস্থা হবে। যেদিন ধরা শুরু হবে আর চিঠি আসা শুরু হবে সেদিন কোনো বাচ বিচার হবে না। সবকে ভেতরে যেতে হবে।” এদিনের সভায় বিজেপির পক্ষ থেকে দাবী করা হয় প্রায় কুড়ি হাজার লোকের জমায়েত হয়েছিল মহম্মদ বাজারের গনপুরের সভায়। এদিনের সভায় উপস্থিত ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায়, জেলা নেতা নির্মল মণ্ডল সহ আরো অনেকে।
অন্যদিকের এদিনের সভা মঞ্চে প্রকাশ্যে এলো বিজেপির গোষ্ঠি কোন্দল। এদিন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সামনেই বিজেপির জেলা নেতৃত্ব দলের জেলা সভাপতি রামকৃষ্ণ রায় এবং জেলা সাধারন সম্পাদক কালোসোনা মণ্ডলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন। জেলা নেতৃত্বের অভিযোগ রামকৃষ্ণ রায় এবং কালোসোনা মণ্ডল নিজের ইচ্ছা মতো দল চালানোর চেষ্ঠা করছেন। তাতে দলের নিচু তলার কর্মীদের ক্ষোভ বাড়ছে। আর ক্ষোভ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পড়তে চলছে বলে দাবী করেন তারা। বিজেপির কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের সদস্য সুকুমার দাসের নেতৃত্বে দলের বেশ কয়েকজন জেলা নেতা দিলীপ বাবুর কাছে এই অভিযোগ তোলেন। এর আগে জুলাই মাসে দলের রাজ্য সাধারন সম্পাদক সায়ন্তন বসুর সামনেও দলের জেলা নেতারা একই ক্ষোভ উগড়ে দেন। বেশির ভাগ জেলা নেতৃত্বের দাবী দলের বর্তমান জেলা সভাপতি এবং সাধারন সম্পাদককে পদ থেকে সরাতে হবে এবং দলের প্রাচীন লড়াকু নেতাদের সামনে আনতে হবে। যদিও এই বিষয়ে দিলীপ বাবু কোনো মন্তব্য করতে চান নি।