অমিতের সভার দিনেই তৃণমূলের ধিক্কার দিবস, আশান্তির আশঙ্কা বিজেপির

কলকাতা, ১০ অগস্ট (হি. স.): বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সভার দিনেই নাগরিকপঞ্জির বিরোধিতায় আগামীকাল শনিবার রাজ্য জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেস ধিক্কার দিবসের ডাক দিয়েছে | অসমে নাগরিকপঞ্জির বিরোধিতায় শুক্রবার সাংবাদিক সম্মেলন করে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ধিক্কার দিবসের ঘোষণা করেন | তৃণমূল কংগ্রেসের এই ধিক্কার দিবস৷ তৃণমূলের ধিক্কার দিবসের ডাককে রাজ্যে অশান্তির করার চক্রান্ত দেখছে বিজেপি | তৃণমূল মহাসচিবের সাংবাদিক সম্মেলনের পর রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “ওরা ইচ্ছে করে এই কাজ করছে | আগামীকাল ব্যাপক একটা সংঘর্ষ হতে পারে| এর দায় কিন্তু আমরা নেব না|” শুধু তাই নয় মেয়ো রোডে আগামীকাল অমিত শাহের সমাবেশে যাতায়তের পথে দলীয় সমর্থকদের নিরাপত্তার দাবিতে রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে-র কাছে লিখিত আবেদন করেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি । একই সঙ্গে দিলীপবাবু চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকেও ।
রাত পোহালেই অমিত শাহর সভা | সার্চলাইট জ্বেলে চলছে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি | মেয়ো রোডে রাস্তা থেকে প্রায় ১০ ফুট উঁচুতে তৈরি হচ্ছে মূল মঞ্চ। গান্ধী মূর্তির প্রায় দেড়শ ফুট সামনে। আর মূর্তি ও মূল মঞ্চের মাঝে পাশাপাশি দুটি সুন্দর তাঁবু। ভিতরে আরামদায়ক আসবাব। মূলত বিশিষ্টদের জন্য। মূল মঞ্চের একটু আগে দু‘পাশে দুটি পৃথক মঞ্চ— সম্ভবত একটি বিজেপি নেতাদের, অপরটি যুব মোর্চার নেতাদের জন্য। মেয়ো রোডে দূর থেকে যাথে দেখতে বা শুনতে যাতে সমবেতদের অসুবিধা না হয়, পার্ক স্ট্রিট পর্যন্ত দীর্ঘ পথে দুপাশে বসছে ১২টি করে অর্থাৎ মোট ২৪টি টিভি সেট। প্রতিটি ১২ ফুট বাই ৮ ফুটের। ফুট চার উচু টেবিলের ওপর বসানো হচ্ছে এগুলি। সভাকে সফল করতে দু’দিন ধরে এ শহরে পড়ে আছেন দলের দুই কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ও মুরুলিধর রাও। সাংবাদিক ও সাংগাঠনিক সম্মেলনের পাশাপাশি তাঁরা একাধিকবার দেখে গিয়েছেন সভাস্থল। পাশাপাশি দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা, মুকুল রায়ের মত প্রদেশিক স্তরের নেতারা এবং যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি দেবজিৎ সরকার আলোচনা চালাচ্ছেন সভার সাফল্যের জন্য। অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আজ রাত সওয়া দশটার বিমানে কলকাতায় আসবেন বিজেপি যুব মোর্চার জাতীয় সভাপতি পুনম মহাজন।
কালকের সভায় অমিত শাহর ছাড়া অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হিসাবে বক্তৃতা দেবেন মুম্বই নর্থ সেন্ট্রাল থেকে নির্বাচিত পুনম। তাঁকে বিমানবন্দর থেকে কলকাতায় নিয়ে আসতে প্রস্তুত হয়েছে বিরাট বাইক বাহিনী। দেবজিৎ সরকার ছাড়াও এতে থাকার কথা বিজেপি যুব শাখার জাতীয় সাধারণ সম্পাদক সৌরভ চৌধুরী, জাতীয় সাধারণ সম্পাদক সৌরভ শিকদার, রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক তাপস ঘোষ প্রমুখ।
তবে এই সভা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে শুক্রবার আশান্তি ছাড়ানোর অভিযোগ তুললেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ | কারণ বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সভার দিনেই রাজ্য জুড়ে ধিক্কার দিবসের ডাক দিল তৃণমূল কংগ্রেসের | শুক্রবার দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি বলেন, কলকাতায় ‘ধিক্কার দিবস’ পালিত হবে রবিবার| জেলায় হবে শনি ও রবিবার| অসমে নাগরিক পঞ্জি তালিকা থেকে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম বাদ গিয়েছে। তার মধ্যে সাড়ে ১২ লক্ষ বাঙালি রয়েছে বলে দাবি করলেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এরই প্রতিবাদ জানিয়ে ধিক্কার দিবসের ডাক দিলেন তিনি। ধিক্কার দিবসে তৃণমূলের সমস্ত শাখা সংগঠন অংশ নেবে। কালো ব্যাজ, কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ দেখাবেন তৃণমূল কর্মীরা।
এদিকে তৃণমূলের ধিক্কার দিবসের ডাককে রাজ্যে অশান্তির করার চক্রান্ত দেখছে বিজেপি | তৃণমূল মহাসচিবের সাংবাদিক সম্মেলনের পর রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “ওরা ইচ্ছে করে এই কাজ করছে | আগামীকাল ব্যাপক একটা সংঘর্ষ হতে পারে| এর দায় কিন্তু আমরা নেব না|”
দিলীপ ঘোষ এ দিন আরও বলেন, কাল যে ব্যাপক জনসমাগম হবে, তাতে বাংলার পট পরিবর্তনের সূচনা হবে| বিজেপি-কে আটকানোর সব রাস্তা টিএমসি-র বন্ধ হয়ে গিয়েছে| গত পঞ্চায়েত ভোটে আমাদের প্রবল বাধা দেওয়া সত্বেও ৩০ হাজার জায়্গায় লড়েছি| জঙ্গলমহল ও উত্তরবঙ্গে ওই ভোটের ফলাফলে যে পরিবর্তন এসেছে, তাতে টিএমসি শেষ হয়ে গিয়েছে| ওরা দৌড়চ্ছে| ওরা ১১ তারিখে পুলিশ দিয়ে আমাদের গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করবে| আমরা সব রকমের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি|
সেই সঙ্গে কলকাতায় রবিবার ধিক্কার দিবস পালন নিয়ে তিনি বলেন, “অমিত শাহর অনুষ্ঠানের জন্য ওরা কাল কলকাতাকে বাদ দিয়েছেন, এটাই যদি ওদের সৌজন্য হয়, তাহলে বড় দুর্ভাগ্য | বিজেপি-কে ছাড় দেওয়ার কোনও দরকার নেই| ”
তবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ শুধু মুখে উত্তর দিয়ে থেমে থাকেন নি | আগামীকাল মেয়ো রোডে অমিত শাহর সমাবেশে যাতায়তের পথে নিরাপত্তা দিতে রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে-র কাছে লিখিত আবেদন করেন | সেই সঙ্গে দিলীপবাবু শুক্রবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংকেও এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছেন।
দিলীপবাবু রাজ্যের মুখ্যসচিবকে জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত সমাবেশে তাঁদের সমর্থকদের যাতায়তের পথে যেন নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও দিলীপবাবু চিঠিতে অনুরোধ করেছেন, রাজ্যকে যেন তিনি বিষয়টি জানিয়ে রাখেন।
এখন দেখার শনিবার রাজ্যকে অশান্তি মুক্ত রাখতে পুলিশ প্রশাসন ও রাজ্যের শাসক ও প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল কি ভূমিকা পালন করে |

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *