হাফলং (অসম), ১ আগস্ট (হি.স.) : দুর্গাপূজার আগেই উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের কর্মচারীদের দশ মাসের বকেয়া মিটিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন সিইএম দেবোলাল গারলোসা। তাছাড়া পার্বত্য পরিষদের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের গ্র্যাচুয়িটি বাবদ ১৭ কোটি টাকাও পুজোর আগে মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে আজ বুধবার ঘোষণা করেছেন তিনি। উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের কর্মীদের বেতন সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে বুধবার থেকে স্বেচ্ছাবসর (ভিআরএস) প্রকল্প চালু করা হচ্ছে।
এদিন উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদ কার্যালয় প্রাঙ্গণে পরিষদের কর্মচারীদের সঙ্গে এক সভায় সিইএম দেবোলাল গারলোসা বলেন, পার্বত্য পরিষদের কর্মচারীদের স্থায়ী বেতন সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতা দেখাচ্ছে পার্বত্য পরিষদ। তবে এর জন্য ভিআরএস প্রকল্প চালু করে পরিষদে কর্মচারীর সংখ্যা কমাতে হবে। সিইএম বলেন, রাজ্য সরকার পার্বত্য পরিষদ কর্মচারীদের দশ মাসের বকেয়া-সহ পরিষদের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের গ্র্যাচুয়িটির টাকা মিটিয়ে দিতে এককালীন আর্থিক সাহায্য প্রদান করবে। মোট ৭৭ কোটি টাকা রাজ্য সরকার দেবে এর জন্য। এছাড়া পরিষদের ৪০০ কর্মচারীর ভিআরএস সেচ্ছাবসরের জন্য আর্থিক সাহায্য দিতে রাজি হয়েছে। আজ কর্মচারীদের সঙ্গে সভায় সিইএম দেবোলাল গারলোসা বলেন, যাঁদের ২০ বছর চাকরি হয়ে গেছে তাঁরা ভিআরএসের জন্য আবেদন করতে পারেন। তাছাড়া যে সব কর্মচারীর স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে তারাও ভিআরএসের জন্য আবেদন জানাতে পারেন। তবে যাঁরা ভিআরএসের জন্য ১ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্টের মধ্যে আবেদন জমা দিতে হবে। তার জন্য পার্বত্য পরিষদের অর্থ বিভাগে একটি ভিআরএস সেল খোলা হবে। কারণ কতজন কর্মচারী ভিআরএস নিতে আবেদন করেন তার রিপোর্ট রাজ্যের অর্থ দফতরে পাঠাতে হবে।
সিইএম বলেন, সেপ্টেম্বরে রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশনের আগেই ভিআরএসের তালিকা রাজ্যের অর্থ বিভাগের কাছে পাঠাতে হবে। কারণ বিধানসভার বাজেট অধিবেশনে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তাই ভিআরএসের বিষয়টি নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কথা জানান সিইএম দেবোলাল গারলোসা।
তবে যে সকল কর্মচারী ভিআরএসের জন্য আবেদন জানাবেন ওই সব কর্মচারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ভিআরএসের টাকা না আসা পর্যন্ত ভিআরএস কার্যকরী হবে না বলে স্পষ্ট করে দেন পার্বত্য পরিষদের সিইএম।
এই সভার পর পরিষদ সচিবালয়ের কনফারেন্স হল-এ সিইএম দেবোলাল গারলোসা বলেন, পূর্বের কংগ্রেস সরকারের আমলে পরিষদের রাজস্ব বছরে সংগ্রহ হত ১৭ কোটি টাকা। তবে পার্বত্য পরিষদে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ বেড়েছে। এ বছর পার্বত্য পরিষদের রাজস্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ কোটিতে। আগে উমরাংসোতে নিপকো-র কাছ থেকে কোনও রাজস্ব আসত না। পার্বত্য পরিষদে নিকপোর কপিলি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে মেঘালয় সরকার ৬ শতাংশ ও অসম সরকার ৬ শতাংশ রাজস্ব নিয়ে যেত।
দেবোলাল গারলোসা বলেন, রাজ্য সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করার পর অসম সরকার নিপকো থেকে প্রাপ্ত ৬ শতাংশ রাজস্বের মধ্যে ৩ শতাংশ পার্বত্য পরিষদকে দিতে রাজি হয়েছে। এছাড়া উমরাংসোর লোয়ার কপিলি হাইড্রো প্রকল্প নিয়ে এপিজিসিএলের সঙ্গে এক চুক্তি হয়েছে। এই প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫ শতাংশ রাজস্ব পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদে আসবে। তাছাড়া স্থানীয়দের ৮০ শতাংশ নিযুক্তি দেওয়া ব্যাপারেও চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদের সঙ্গে। বর্তমানে ১৯৯ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা-সহ পার্বত্য পরিষদের বেতন মিটিয়ে দিতে মাসে প্রায় সাত কোটি টাকার প্রয়োজন। তবে রাজ্য সরকার পরিষদের আড়াই হাজারের বেশি কর্মচারীর বকেয়া দশ মাসের বেতন ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের গ্র্যাচুয়িটি মিটিয়ে দিতে ৭৭ কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য দিতে রাজি হয়েছে বলে জানান সিইএম দেবোলাল গারলোসা।
এদিন পার্বত্য পরিষদের ইএম স্যামুয়েল সাংসন বলেন, যেখানে পরিষদে ১ হাজার কর্মচারী হওয়ার কথা, সেখানে বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে অতিরিক্ত নিযুক্তি দেওয়ার জন্যই এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ভিআরএসের মাধ্যমে রাজ্য সরকার এককালীন আর্থিক সাহায্য দিতে রাজি হয়েছে। তাই যে সব কর্মচারী ভিআরএস নিতে চান তাঁদের এ মাসেই সিন্ধান্ত নিতে হবে বলে সভায় জানান করেন স্যামুয়েল।
পরিষদ সচিবালয়ে কর্মচারীদের সঙ্গে সভায় অনান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক বীরভদ্র হাগজার, পরিষদের চেয়ারপার্সন রানু লাংথাসা, প্রধানসচিব নরেশ ঘোষ এবং মুকুট কেম্প্রাই, ইএম কুলেন্দ্র দাওলাগাপু প্রমুখ।