নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা,৮ জুলাই৷৷ সীমান্তের উভয় দিকের জনগণের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্য দিয়ে ভারত- বাংলাদেশ বাণিজ্যিক সম্পর্কের উন্নতি সাধনে গুরুত্ব আরোপ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি বাংলাদেশের সাথে ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের চলতি জটিলতা হ্রাস করতে কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সামনে গুচ্ছ প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন৷
রবিবার সরকারী আবাসে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ত্রিপুরা ও বাংলাদেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে৷ কিন্তু, বাংলাদেশে থেকে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি হয় সেই পরিমাণ অর্থের পণ্য ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে সরাসরি রপ্তানি হয় না৷ ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়৷ অথচ ১০৩ কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়৷ তিনি বলেন, রাজ্য সরকার চায় রাজ্য থেকে সরাসরি যেমন আদা, গুলমরিচ, আনারস, রাবারশিট, কাজুবাদাম, কাঁঠাল সহ অন্যান্য পণ্যসামগ্রী বাংলাদেশে রপ্তানি করা যায়৷ রাজ্য থেকে বাংলাদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে পূর্বতন সরকারের সৃষ্ট জটিলতার কারণে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধকতা জারি করে রেখেছে৷ ত্রিপুরা সরকার চায় কম করে ১৭টি পণ্যের উপর থেকে প্রতিবন্ধকতা তুলে নিক সেই দেশের সরকার৷ অন্যদিকে, ত্রিপুরায় ভারত-বাংলাদেশে সীমান্তে আরও বর্ডার হাটের প্রয়োজন বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন৷
খারিফ ফসলের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের জন্য নূ্যনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধি করায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের জন্য যেভাবে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়ে চলেছেন তা ঐতিহাসিক৷ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এর আগেই ঘোষণা করেছেন যে ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা হবে৷ নূ্যনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই লক্ষ্যে একটা বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে কাঙ্খিত সাফল্য আসবে বলে আশা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আয় বাড়ানোর জন্য খরচ কমাতে হয়৷ নূ্যনতম সহায়ক মূল্য অন্য সরকারগুলিও বাড়িয়েছিলো৷ কিন্তু কৃষকের খরচ কমানোর জন্য তার কোনও পদক্ষেপ নেয়নি৷ সয়েল হেলথ কার্ড চালুর মধ্য দিয়ে এ ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদির সরকার নতুন দিশা দেখাচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপরায়ও ১ লক্ষ ৬৯ হাজাার সয়েল হেলথ কার্ড দেওয়া হবে৷ এর মাধ্যমে কৃষক জানতে পারবেন কোন ফসলের জন্য কীী ধরনের সার ব্যবহার করা যাবে৷ সয়েল হেলথ কার্ড তৈরীর সিদ্ধান্ত হওয়ায় কৃষকদের একটা বড় ধরনের খরচ কমে যাবে বলে মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে ত্রিপুরায় কৃষক বন্ধু কেন্দ্র তৈরী করা হচ্ছে৷ এই কেন্দ্রগুলি হয়ে গেলে কৃষকরা দারুণভাবে উপকৃত হবেন৷ প্রধানমন্ত্রী শস্য বীমা যোজনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় ২১৫ হাজার হেক্টর হাইরিস্ক জোনে এই যোজনা কার্যকর করা হবে৷ এই যোজনা চালু হওয়ায় কৃষকরা দারুণ লাভবান হবেন৷ ফসল নষ্টের তিন মাসের মধ্যেই রাজ্যে কৃষক যাতে বীমার টাকা পেয়ে যান তার জন্য চেষ্টা করা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের জন্য বীমার ব্যবস্থা আগে থাকলেও এতে কৃষকদের খুব একটা লাভ হতো না৷ বীমা কোম্পানীগুলিই বেশি লাভবান হতো৷ মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব বলেন, মানুষের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে মানসিকতা থাকতে হবে৷ দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী তার প্রতিটি পদক্ষেপের ক্ষেত্রে মানুষের জন্য ভাবছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত দুই মাসে রাজ্যে ১ লক্ষ ৬ হাজার গরীব মবিলাকে প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনায় বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রেও বিশেষ করে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বর্তমান রাজ্য সরকার মহিলাদের অগ্রাধিকার দিতে চায়৷ এ নিয়ে আলোচনা চলছে৷
মুখ্যমন্ত্রী জানান, আয়ুষ্মান ভারত যোদনার আওতায় ত্রিপুরায় ৭১ শতাংশ মানুষকে আনা হবে৷ এর জন্য ট্রাস্ট গঠন করা হবে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নাড্ডা এই প্রকল্পের ব্যয়ভার কেন্দ্র নববই শতাংশ এবং রাজ্য ১০ শতাংশ বহন করা প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন৷ ওয়াটার এফিসিয়েন্ট ফার্মিং এর ক্ষেত্রে ত্রিপুরা উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন৷ তিনি জানান, পি কে ভি ওয়াই অর্র্গানিক ফার্মিং এ সিকিম উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে এক নম্বরে রয়েছে৷ ত্রিপুরা এক্ষেত্রেও সামনের সারিতে চলে আসার চেষ্টা করছে৷ রাজ্যের উৎপাদিত আনারসকে এজন্য বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শুধু আনারস নয়, কাঁঠাল, কাজু বাদামের মতো অন্যান্য উৎপাদিত সামগ্রীও যাতে রাজ্যের উন্নয়নে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে সেজন্য কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার একসঙ্গে কাজ করছে৷
2018-07-09