ক্রিরি, ১৫ জুন (হি.স.) : চোখের জলে অন্তিম বিদায় | শুক্রবার জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় রাইসিং কাশ্মীরের সম্পাদক
সুজাত বুখারির। প্রবল বৃষ্টি ও প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই নিহত সাংবাদিকের শেষযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন পরিবার, বন্ধুবান্ধব, অনুরাগী ও সমব্যথী সহ | এদিন প্রয়াত সাংবাদিকের শেষযাত্রায় অংশ নেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, শাসক পিডিপি-বিজেপি, বিরোধী দলগুলির একাধিক নেতারা।

গতকাল শ্রীনগরের লালচৌকে সংবাদপত্রের দফতরের বাইরে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতিদের গুলিতে নিহত হন রাইজিং কাশ্মীর পত্রিকার প্রধান সম্পাদক বুখারি। একইসঙ্গে নিহত হন তাঁর দুই দেহরক্ষী। বৃহস্পতিবার ভরসন্ধ্যায় অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের গুলিতে প্রাণ হারান ‘রাইজিং কাশ্মীর’-এর প্রধান সম্পাদক সুজাত বুখারি| তিনি ইফতারে যোগ দেওয়ার জন্য যখন প্রেস এনক্লেভ ছেড়ে বেরোচ্ছিলেন, তখনই তাঁকে ও তাঁর দুই দেহরক্ষীকে অটোমেটিক রাইফেল থেকে গুলি করা হয়| গাড়ির মধ্যেই লুটিয়ে পড়েন সুজাত বুখারি, পরে তাঁর মৃত্যু হয়| মৃত্যু হয়েছে বুখারির দেহরক্ষীরও|
শুক্রবার জম্মু ও কাশ্মীরের বারামুল্লা জেলায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় রাইসিং কাশ্মীরের সম্পাদক সুজাত বুখারির। প্রবল বৃষ্টি ও প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই নিহত সাংবাদিকের শেষযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন পরিবার, বন্ধুবান্ধব, অনুরাগী ও সমব্যথী সহ | এদিন প্রয়াত সাংবাদিকের শেষযাত্রায় অংশ নেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, শাসক পিডিপি-বিজেপি, বিরোধী দলগুলির একাধিক নেতারা। অনেকেই, বুখারির গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিবারকে সমবেদনা জানিয়ে আসেন। বারামুল্লা জেলার ছোট্ট, জনপদ ক্রিরি। এমনিতে শান্ত। কিন্তু, সেখানে তিন ধরার জায়গা নেই। বুখারির অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দিতে মানুষের ঢল নেমে আসে।
বিশিষ্ট সাংবাদিক সুজাত বুখারির হত্যার তীব্র নিন্দা করল আমেরিকা| মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার মারফত ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত কেনেথ জাস্টের জানিয়েছেন, ‘শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক এবং রাইজিং কাশ্মীর-এর সম্পাদক সুজাত বুখারি এবং নিরাপত্তা অফিসার হামিদ চৌধুরী এবং মুমতাজ-এর হত্যার কঠোরভাবে নিন্দা করে ভারতে নিযুক্ত মার্কিন মিশন| পরিজন, বন্ধুবান্ধব এবং সহকর্মীদের প্রতি সমবেদনা|’
এদিকে, ‘রাইজিং কাশ্মীর’-এর প্রধান সম্পাদক সুজাত বুখারিকে খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজনদের ছবি প্রকাশ করল পুলিশ| শুধু তাই নয়, সন্দেহভাজন তিন মোটরবাইক আরোহীকে শনাক্ত করতে সাধারণ মানুষের সাহায্য চাওয়া হয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের তরফে| পুলিশ সূত্রের খবর, সিসিটিভি ফুটেজ থেকে ওই তিনজন সন্দেহভাজনের ছবি পাওয়া গিয়েছে| দুষ্কৃতীদের ছবি প্রকাশের পর এক বিবৃতিতে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘শ্রীনগরে জঙ্গি হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজনদের শনাক্ত করার জন্য সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করা হচ্ছে| যিনি তথ্য দিয়ে সাহায্য করবেন তাঁর নাম গোপন রাখা হবে|’
এই ঘটনার পর অনান্য দিনগুলির মতো এদিনও প্রকাশিত হয় ‘রাইজিং কাশ্মীর’। প্রথম পৃষ্ঠা জুড়ে সাদা-কালোয় নিহত সম্পাদকের ছবি ছাপা হয়। পাশে বার্তা দেওয়া হয়, তারা সেই সব কাপুরুষদের ভয় পাবে না, যারা তাদের প্রিয় সম্পাদককে ছিনিয়ে নিয়েছে। এদিন পত্রিকার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, আপনি আচমকা ছেড়ে চলে গেলেন। কিন্তু, পেশাদারি দায়বদ্ধতা ও অসীম সাহসিকতার মাধ্যমে চিরকাল আপনি আমাদের পথপর্দর্শক হয়ে থাকবেন। যারা আপনাকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিল, আমরা তাদের ভয় পাই না। শুনতে যতই খারাপ লাগুক, আমরা সত্যি কথা বলার নীতি থেকে সরে আসব না।
প্রসঙ্গত, গত তিন দশকে এই নিয়ে কাশ্মীরে চারজন সাংবাদিক খুন হলেন। ১৯৯১ সালে, আলসাফা-র সম্পাদক মহম্মদ শবন বকিলকে হত্যা করে হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গিরা। ১৯৯৫ সালে প্রাক্তন বিবিসি সাংবাদিক ইয়ুসুফ জামিলের দফতরে বিস্ফোরণ ঘটায় জঙ্গিরা। কপালজোরে প্রাণে বাঁচেন ইউসুফ। মারা যান এএনআই চিত্রসাংবাদিক মুস্তাক আলি। ২০০৩ সালে নাফা-র সম্পাদক পারভেজ মহম্মদ সুলতানকে তাঁর দফতরে হত্যা করে হিজবুল জঙ্গিরা।