নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ জুন ৷৷ উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলে এবার বেড়েছে পাশের হার৷ কিন্তু, পরীক্ষায় অংশগ্রহণের হার এবছর নিম্নমুখী হওয়ায়, শিক্ষার হাল নিয়ে চিন্তা বেড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে৷ এবছর উচ্চমাধ্যমিকে পাশের হার ৭৮.৬২ শতাংশ৷ গতবছর পাশের হার ছিল ৭৭.৩১ শতাংশ৷ কিন্তু, এবার পরীক্ষায় নথিভুক্ত করেনি এমন ছাত্রছাত্রীদের হার গতবছরের তুলনায় নেমেছে ৪.৯৫ শতাংশ৷ এবিষয়ে চিন্তা প্রকাশ করে ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সভাপতি অধ্যাপক মিহির কান্তি দেব, দেশের শিক্ষা নীতিকে এর জন্য দায়ী করেছেন৷ পাশ-ফেল প্রথা তুলে দেওয়ার কারণেই আজ এই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে বলে উষ্মা প্রকাশ করেন তিনি৷
শুক্রবার ত্রিপুরা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত এ বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার কলা ও বাণিজ্য বিভাগের ফল প্রকাশিত হয়েছে৷ এদিন সকালে পর্ষদের কনফারেন্স হলে এক সাংবাদিক সম্মেলনে পর্ষদ সভাপতি অধ্যাপক মিহিরকান্তি দেব এই পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন৷ উল্লেখ্য, বিজ্ঞান বিভাগের ফল ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে৷
উচ্চমাধ্যমিকের এ বছরের পরীক্ষায় পাশের হার ৭৮.৬২ শতাংশ৷ পরীক্ষার্থী ছিল ২০ হাজার ৪১৮ জন৷ পরীক্ষা দিয়েছিল ২০ হাজার ৪১৬ জন৷ পাশ করেছে ১৬ হাজার ৫২ জন পরীক্ষার্থী৷ গত বছরে পাশের হার ছিল ৭৭৩১ শতাংশ৷ সাংবাদিক সম্মেলনে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার বিভিন্ন বিভাগের ফলাফলের তথ্য দিয়ে পর্ষদ সভাপতি জানান, এ বছর উচ্চমাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষার্থী ছিল ৩ হাজার ২৮ জন৷ পরীক্ষায় বসেছিল ৩ হাজার ২৭ জন৷ এর মধ্যে পাশ করেছে ২ হাজার ৫৫২ জন৷ পাশের হার ৮৪.৩১ শতাংশ৷ গত বছর পাশের হার ছিল ৮৩.৭৭ শতাংশ৷ কলা বিভাগে পরীক্ষার্থী ছিল ১৬ হাজার ৫৪৩ জন৷ পরীক্ষায় বসেছিল ১৬ হাজার ৫৪২ জন৷ পাশ করেছে ১২ হাজার ৯৩১ জন৷ পাশের হার ৭৮.১৭ শতাংশ৷ গত বছর পাশের হার ছিল ৭৬.৩১ শতাংশ৷ বাণিজ্য বিভাগে এ বছর পরীক্ষার্থী ছিল ৮৪৭ জন৷ পরীক্ষায় বসেছিল ৮৪৭ জন৷ পাশ করেছে ৫৬৯ জন৷ পাশের হার ৬৭.১৮ শতাংশ৷ উচচমাধ্যমিকের উল্লিখিত তিনটি বিভাগে ছেলেদের পাশের হার ৭৬৪৭ শতাংশ এবং মেয়েদের পাশের হার ৮০.৯৭ শতাংশ৷
অন্যদিকে, ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্ব-শাসিত জেলা পরিষদ এলাকায় এই পরীক্ষায় পাশের হার ৬৬.০০ শতাংশ৷ গত বছর এই হার ছিল ৬৪.২৪ শতাংশ৷ পরীক্ষায় বসেছিল ২ হাজার ৯৩২ জন৷ পাশ করেছে ১ হাজার ৯৩৫ জন৷ বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষায় বসেছিল ৭৭ জন৷ পাশ করেছে ৪৭ জন৷ পাশের হার ৬১.০৪ শতাংশ৷ গত বছর এই বিভাগে পাশের হার ছিল ৪৪.৯৩ শতাংশ৷ কলা বিভাগে পরীক্ষায় বসেছিল ২ হাজার ৮৪৮ জন৷ পাশ করেছে ১ হাজার ৮৮৭ জন৷ পাশের হার ৬৬.২৬ শতাংশ৷ গত বছর পাশের হার ছিল ৬৪৭৯ শতাংশ৷ বাণিজ্য বিভাগে ৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১ জন৷ পাশের হার ১৪.২৯ শতাংশ৷ উপজাতি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের পাশের হার ৬২.৮৭ শতাংশ৷ পরীক্ষায় বসেছিল ২ হাজার ৪৭৮ জন৷ পাশ করেছে ১ হাজার ৫৫৮ জন৷ মেয়েদের পাশের হার ৬৫.৮০ শতাংশ৷ পরীক্ষায় বসেছিল ২ হাজার জন৷ পাশ করেছে ১ হাজার ৩১৬ জন৷
তপশিলী জাতির পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছেলেদের পাশের হার ৭৮.৬৪ শতাংশ৷ পরীক্ষা দিয়েছিল ২ হাজার ২০৫ জন৷ পাশ করেছে ১ হাজার ৭৩৪ জন৷ মেয়েদের পাশের হার ৮২.৭৭ শতাংশ৷ পরীক্ষায় বসেছিল ২ হাজার ২০ জন৷ পাশ করেছে ১ হাজার ৬৭২ জন৷
এ বছর উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষায় রাজ্যের ৩৮০ টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ১০০ শতাংশ পাশ করেছে ১৭টি বিদ্যালয়৷ জেলা ভিত্তিক পাশের হার শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলা৷ পাশের হার ৬৭.৪২ শতাংশ৷ এর পরেই সিপাহীজলা জেলার স্থান৷ পাশের হার ৭৫.৫৯ শতাংশ৷ গোমতী জেলায় পাশের হার ৭২.৩৯ শতাংশ৷ অন্যান্য জেলাগুলির মধ্যে ঊনকোটি জেলায় ৬৯.৩৫ শতাংশ, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ৬৯.৩২ শতংশ, খোয়াই জেলায় ৬৯.০০ শতাংশ, উত্তর ত্রিপুরা জেলায় ৬৭.০৮ শতাংশ এবং ধলাই জেলায় পাশের হার ৬৩.২৫ শতাংশ৷
সাংবাদিক সম্মেলনে পর্ষদ সভাপতি এ বছরের উচ্চমাধ্যমিকের মাদ্রাসা ফাজিল আর্টস ও মাদ্রাসা ফাজিল থিওলজি পরীক্ষার ফলও প্রকাশ করেন৷ মাদ্রাসা ফাজিল আর্টস পরীক্ষায় বসেছিল ১০ জন পরীক্ষার্থী, পাশ করেছে ৯ জন৷ পাশের হার ৯০ শতাংশ৷ এই পরীক্ষায় সর্বোচ্চ ৪০৫ নম্বর পেয়েছে কূর্তি এইচ এস সুকলের আসমা বেগম৷ মাদ্রাসা ফাজিল থিওলজি পরীক্ষায় বসেছিল ১৬ জন৷ পাশ করেছে ১৪ জন৷ পাশের হার ৮৭৫ শতাংশ৷ এই পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে কৈলাসহর টীলা বাজার এইচ এস সুকলের মহম্মদ বদরুল হাসান৷ তার প্রাপ্ত নম্বর ৫২১৷
সাংবাদিক সম্মেলনে পর্ষদ সভাপতি জানান, আগামী ১২ জুন সকাল সাড়ে ৯টায় সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এ বছরের মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা করা হবে৷ তিনি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার কাজে যুক্ত পরীক্ষক, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক সহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দ জানিয়েছেন৷ সাংবাদিক সম্মেলনে পর্ষদের অন্যান্য আধিকারিকগণও উপস্থিত ছিলেন৷