সায়ন্তক চৌধুরী
তিনি এলেন৷ অনাবিল হাসিতে ভরিয়ে দিলেন৷ উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলেন৷ উষ্ণ আতিথিয়তাও পেলেন৷ দুদিনের সফরের প্রতিটি মুহুর্ত ছিল স্মরণীয়৷ পেলেন প্রধানমন্ত্রী মোদির নিবিড় আপ্যায়ন৷ পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিবিড় ছোঁয়া৷ কিন্তু, এর পরও হৃদয়ের কোথাও যেন কাঁটা বিধে রইলো৷ বিদায় বেলায় তার মুখে হাসি থাকলেও হৃদয় ছিল রক্তাক্ত৷
সেই তিনি আমাদের বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ওয়াজেদ৷ দুইদিনের পশ্চিমবঙ্গ সফরে তিনি এসেছিলেন৷ বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন৷ ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলার রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা৷ পরদিন সাম্মানিক ডক্টরেট অব লিটারেচার (ডি লিট) ডিগ্রী গ্রহণের জন্য কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠানে যান৷ এই বিশ্ববিদ্যালয় কবির জন্মভূমি আসানসোলের চুরুলিয়ার অদূরে স্থাপিত৷ সেখানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডি লিট ডিগ্রী প্রদান করা হল৷ বক্তব্য রাখতে গিয়ে শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক চেতনার দ্বীপ জ্বালালেন৷ স্মৃতিচারণ করলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের৷ বারবার স্মরণ করলেন মুক্তিযুদ্ধে ভারতের মহান অবদানের কথা৷ দুই দেশের সম্পর্ক যে আরও সুদৃঢ় হচ্ছে তা বলতেও তিনি ভুললেন না৷ সেই সাথে বললেন আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের নানা সমস্যার সমাধানও সম্ভব৷
যদি বলা হয়, এ সম্ভাবনার আশা নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরে আসা- তা কিন্তু অতিরঞ্জিত হবে না৷ ইতিমধ্যে দীর্ঘ বছর ঝুলে থাকা ভারত বাংলাদেশে ছিটমহল চুক্তি বাস্তাবায়িত হয়েছে৷ শেখ হাসিনা এ চুক্তি বাস্তবায়নকে বিশ্বের মাঝে নজিরবিহীন ঐতিহাসিক বলেও উল্লেখ করলেন৷ শুধু তাই নয়, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রও যে প্রসারিত হচ্ছে তাও তিনি বললেন৷ এরপরও শেখ হাসিনার হৃদয়ে বিঁধে আছে একটা তীক্ষ্ন কাঁটা৷ এবছরের ডিসেম্বর মাসের কোনও এক সময় বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন৷ বর্তমানে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়৷ বিরোধী আসনে বিএনপি তথা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল৷ দলের সুপ্রিমো বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া৷ নির্বাচনী প্রচারণায় শেখ হাসিনা যে বাংলাদেশের উন্নয়নের যে ধবজা উড়াবেন তা বলাই বাহুল্য৷ পক্ষান্তরে, বিএনপি নেতারা হাসিনার গলায় বিঁধে থাকা সেই কাঁটাকে আর একটু জনসমক্ষে তুলে ধরবে ভারতের সাথে হাসিনার গভীর সম্পর্কের দিকটাকে সমালোচনায় বিদ্ধ করবে৷ দুই দেশের সুসম্পর্কের বিষয় নিয়ে বিএনপি নেতারা কুৎসা ছড়াতেও দ্বিধা করবে না৷ বাংলাদেশের প্রতিটি নির্বাচনে বিরোধী দল সবসময় ভারতের প্রতি বিষোদ্গার করে৷ এবারও যে তার ব্যতিক্রম হবে না তা নিশ্চিত বলা যেতে পারে৷ এর সাথে যুক্ত হবে হাসিনার সেই গলার কাঁটা৷ এ গলার কাঁটা একমাত্র তুলতে পারে পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতাজী৷ কিন্তু, এবারও হাসিনাকে ব্যর্থ হয়ে ফিরতে হল৷ মমতার সাথে হাসিনার অনেক সুখ দুঃখের কথা হল৷ দুইজনের পরিচিতি দীর্ঘদিনের৷ তাতেও কিন্তু চিড়া ভিজলো না৷ গলায় বিঁধে থাকা কাঁটা নিয়ে হাসিনা স্বদেশে ফিরলেন৷ সেই কাঁটার পরিশীলিত নাম হল তিস্তার জল বন্টন৷ এ তিস্তা চুক্তি ঝুলে রইলো৷ বিএনপি বিষয়টি লুফে নেবে৷ হাসিনাকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করবে৷ তাই বলা যেতে পারে ভারত বাংলাদেশের রিস্তায় এখনো এন্ট্রি পায়নি তিস্তা৷ মমতার হাতে তিস্তা চুক্তির চাবিকাঠি৷ তাই দেখার বিষয় মমতা কবে তিস্তা চুক্তির পথ সুগম করবে? বাংলাদেশ সরকার এখনো আশাবাদী৷ আগামীতে এ তিস্তার চুক্তির উপর নির্ভর করছে দুই দেশের আরও নিবিড় সম্পর্ক৷
2018-05-28