সন্ত্রাস বন্ধ না করলে জোট ভেঙ্গে যাবে, মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি আইপিএফটিকে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৫ মে৷৷ আইপিএফটির ঔদ্ধত্য কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না৷ বিএসির চেয়ারম্যান নিয়ে যে অচলাবস্থা তৈরী হয়েছে সারা রাজ্যে তা চবিবশ ঘন্টার মধ্যে সমাধান না হলে জোট ভেঙে দেওয়ার হুমকি আইপিএফটিকে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তাঁর কড়া হুঁশিয়ারি, বিএসির চেয়ারম্যানের দাবীতে সারা রাজ্যে যে আতঙ্ক ও সন্ত্রাস কায়েম করে রেখেছে আইপিএফটি  তা কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না৷ সূত্রের খবর মঙ্গলবার আইপিএফটি সভাপতি তথা রাজস্বমন্ত্রী এন সি দেববর্মাকে ডেকে নিয়ে এইভাবেই সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি আগামী ২০ মে গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিতব্য নেডার বৈঠকে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ আইপিএফটির আট বিধায়ককেই ডেকেছেন৷ সূত্রের খবর, রাজ্যে শরিকি বিবাদ নিয়ে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব খুবই বিরক্ত৷ তাই, যেকোন সময় জোট ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷ বিজেপির মতে, রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্বেও আইপিএফটির দুই সদস্যকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়েছে৷ তাকে বিজেপির দুর্বলতা ভাবলে আইপিএফটিকে এর চরম মাশুল দিতে হবে৷ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বিকালেই আইপিএফটি সভাপতি তথা রাজস্বমন্ত্রী এন সি দেববর্মা এবং সাধারণ সম্পাদক তথা উপজাতি কল্যাণমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া দলের শীর্ষ স্থানীয় নেতাদের সাথে জরুরী বৈঠক করেছেন৷ এই কঠিন পরিস্থিতিতে দলীয় কর্মী সমর্থকদের কীভাবে কড়া হাতে মোকাবিলা করা হবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷

সূত্রের খবর, রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে আইপিএফটি সমর্থকদের উশৃঙ্খল আচরণ, রাস্তা অবরোধ ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব রাজস্বমন্ত্রী নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মাকে মঙ্গলবার ফের তাঁর কার্যালয়ে ডেকেছিলেন৷ উভয়ের মধ্যে বেশ কিছুক্ষণ ধরে আলাপ আলোচনা হয়েছে৷ রাজ্য সচিবলায় সূত্রে জানা গিয়েছে, বৈঠকে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ স্থানীয় আধিকারীকরাও উপস্থিত ছিলেন৷ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় আইপিএফটির চলতি অবরোধ, হাঙ্গামা, ভাঙচুর ইত্যাদি বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে৷ আলোচনাকালে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে এবং তা নিষ্পত্তির বিভিন্ন পন্থা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রের খবর৷

সূত্রের দাবি, বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব রাজস্বমন্ত্রী তথা আইপিএফটির সভাপতি নরেন্দ্র চন্দ্র দেববর্মাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, এসব হাঙ্গামা ২৪ ঘন্টার মধ্যে শেষ করতে হবে৷ অন্যথায় বিজেপি একতরফা সম্পর্ক ছিন্ন করে দিতে বাধ্য হবে৷ বিজেপি জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছে৷

জানা গিয়েছে, তিনি তাঁকে আরও বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে আইপিএফটি জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি করছে৷ সরকার কোনও ভাবেই এসব চালিয়ে যেতে দেবে না৷ যেকোনও অবস্থায় জনদুর্ভোগ প্রতিহত করা হবে৷ এ নিয়ে কোনও ধরনের সমঝোতা হবে না৷ সমস্যা নিয়ে আলোচনার পথ খোলা আছে৷ কিন্তু, কোনও ভাবেই চাপ সৃষ্টি করার অনৈতিক প্রচেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না৷ রাজ্য সচিবালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, এন সি দেববর্মা মুখ্যমন্ত্রীর কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মন্ত্রিসভায় আইপিএফটির অপর সদস্য তথা দলের সাধারণ সম্পাদক মেবার কুমার জমাতিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলাপ আলোচনা করেছেন৷ আগামী কয়েকঘন্টা সংশ্লিষ্ট বিষয় যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে৷

আইপিএফটির বক্তব্য, বিএসি চেয়ারম্যান নিয়ে সারা রাজ্যে যে বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে তাতে সিপিএমের চক্রান্ত রয়েছে৷ কিন্তু, এই যুক্তি বিজেপি মানতে চাইছে না৷ বিজেপির বক্তব্য, আইপিএফটিতে সিপিএমের কর্মীরা ঢুকতেই পারেন, কিন্তু, তাদের সামাল দেওয়ার দায়িত্বও এন সি দেববর্মাদেরই নিতে হবে৷ কারণ, বেনোজল শুধু আইপিএফটি নয় বিজেপিতেও ঢুকছে৷

সূত্রের খবর, আগামী ২০ মে গুয়াহাটিতে নেডার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে৷ ঐ বৈঠকে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ অংশ নেবেন৷ তাছাড়া, পূর্বোত্তরের বিজেপির বরিষ্ট সদস্যরাও থাকবেন৷ পাশাপাশি বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মন্ত্রী ও বিধায়কদেরও ডেকেছেন অমিত শাহ৷ সূত্রের খবর, আইপিএফটির আট সদস্যদেরও ঐ বৈঠকে ডেকেছেন অমিত শাহ৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, রাজ্যে বর্তমান শরিকি বিবাদ নিয়ে আইপিএফটির সাথে ঝামেলা মেটাতে চাইছে বিজেপি৷ এই বিষয়ে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি আইপিএফটি সদস্যদের সাথে বিবাদ মেটাতে শেষ বারের মতো চেষ্টা করবেন৷ নইলে জোট ভেঙ্গে দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে বলে সূত্র অনুসারে জানা গিয়েছে৷

সামগ্রিকভাবে জোট নিয়ে রাজ্যে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল৷ রাজনৈতিক মহলের মতে, আইপিএফটির সঙ্গে বিজেপির জোট ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে৷ ব্লক উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যানদের নাম ঘোষণার পর থেকে আইপিএফটি বিভিন্ন এলাকায় টানা সংঘর্ষ শুরু করেছে৷ এতে বিজেপির বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন৷ এর আগেও অনুরূপ সংঘর্ষ হয়েছে৷ এমনকি বিজেপি বিধায়কের উপরও হামলা সংগঠিত করা হয়৷ এমতাবস্থায় এখন বিজেপি কড়া অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছে বলে দলীয় সূত্রের খবর৷ বলা হছে যদি জোট ভঙ্গ হয় তাহলে এতে বিজেপি পরিচালিত সরকারের ওপর কোনও সংকট আসবে না৷ কারণ বিজেপির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে৷ ব্লকের উন্নয়ন এবং যাবতীয় বিষয় তদারকিতে চেয়ারম্যানের বড় ভূমিকা থাকে৷ শাসক দলের তরফে এই সব পদে ‘উপযুক্ত’ প্রার্থীদের চয়ন করা হয়৷ সে অনুযায়ী রাজ্য সরকার ব্লক উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান পদে নাম ঘোষণা করে৷ কিন্তু, এতে ক্ষোভ দেখা দেয় জোটসঙ্গীদের মধ্যে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *