সবাইকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার দিকে নজর দিতে হবে ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ এপ্রিল৷৷ প্রশাসনে কোনও ব্যক্তি যে পদে বা দায়িত্বে রয়েছেন তা যদি তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন তবেই সর্বশ্রেষ্ট সরকার উপহার দেওয়া সম্ভব হবে৷ কারণ রাজ্য সরকারের যে বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি রয়েছে তা বাস্তবায়িত হয় বিভিন্ন দপ্তরের পদাধিকারিকদের মাধ্যমেই৷ আজ প্রজ্ঞাভবনে সিভিল সার্ভিস ডে উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি বলেন, দেশের সংবিধান অনুসারে আমাদের যে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করাই আমাদের কর্তব্য৷ আই এ এস, আই পি এস দের মধ্যে অনেছকে ডাক্তার, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারি ও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রয়েছেন৷ কিন্তু তাদের যদি সিভিল সার্ভিসের অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে দেশ বা সমাজকে আরও উন্নতর করে গড়ে তুলতে পারা যাবে৷ কারণ আজকের দুনিয়ায় যারা সব বিষয়ে পারদর্শী হন সমাজে তাদের চাহিদাই বেশি থাকে৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের কৃষি ব্যবস্থায় একসময় গতানুগতিক পদ্ধতি প্রচলিত ছিল৷ বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা কৃষিব্যবস্থা সহ বিভিন্ন বিষয়ে উন্নতি লাভ করেছি৷ আর এই উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে প্রশাসনের দক্ষ আধিকারিকদের মাধ্যমেই৷ আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশকে উন্নতির দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দিশাতে কাজ করছেন৷ তিনি বলেন, আধিকারিকদের মধ্যে যে গুড মেনার রয়েছে তা সমাজের প্রান্তিক মানুষটির নিকট পৌঁছাতে হবে৷ এজন্য আমি জেলা শাসকদের বলব মাসে অন্তত ১৫ দিন তাঁর নিজ এলাকা পরিদর্শন করার জন্য৷ আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকারের যে প্রকল্পগুলি রূপায়ণের কাজ চলছে তা যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার জন্যই এই কাজটি তাদের করতে হবে৷ কারণ জেলা প্রশাসনের প্রধান যদি প্রত্যক্ষভাবে কাজের তদারকি করেন তাহলে নিশ্চয়ই কাজেরও গতি আসবে৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আদর্শ গ্রামই আদর্শ ভারত গঠন করতে পারে৷ তাই দেশের প্রধানমন্ত্রী গ্রাম স্বরাজের জন্য বিভিন্ন যোজনা নিয়ে ১৪ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু করে দিয়েছেন৷ রাজ্য সরকারের কাজ হল সেই যোজনাগুলি সমাজের সকল অংশের মানুষের  নিকট সঠিকভাবে পৌঁছানো৷ সেজন্য জেলা শাসক, বিডিও সহ জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের আধিকারিকদেরও সেই দিশাতে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, আমরা জনতার দরবার চালু করে জনগণের বিভিন্ন সমস্যার কথা জেনে তা সমাধান করার চেষ্টা করছি৷ এতে জনগণ যেমন উপকৃত হচ্ছেন ঠিক তেমনি প্রশাসনও উপকৃত হচ্ছে৷ কারণ এর মাধ্যমে জনগণ সরাসরি প্রশাসনের কাছে চলে আসতে পারছেন এবং প্রশাসনের সচিব পর্যায়ের আধিকারিকরাও সরাসরি জনগণের সমস্য সম্পর্কে জানতে পারছেন৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যেকোনও সরকারের মূল শক্তি হল জনগণ৷ আমাদের রাজ্যের ৩৭ লক্ষ জনগণই হল আমাদের সরকারের মূল শক্তি৷ জনগণ আমাদের যে শক্তি দিয়েছেন সেই শক্তির উপর নির্ভর করেই আমাদের জনগণের জন্য পানীয় জল, যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ পরিষেবাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ সম্পাদন করতে হবে৷ তাছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার সকলের জন্য জনধন যোজনা, ই-পিডিএস ব্যবস্থা, গরিবদের জন্য আয়ুম্মান ভারত যোজনা, কৃষকদের জন্য ফসল বীমা যোজনা ইত্যাদি চালু করেছে৷ তা নির্ভর করে জনগণের নিকট সঠিকভাবে পৌঁছানোই রাজ্য সরকারে অন্যতম সর্বশ্রেষ্ঠ সরকার দিতে পারবে৷

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রত্যেককেই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার উপর দৃষ্টি দিতে হবে৷ পাশাপাশি অফিসে বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাশ্রয়ের উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, আমরা যদি অফিসে প্রতিমাসে অন্তত ১০ শতাংশ বিদ্যুতের খরচ সাশ্রয় করতে পারি তাহলে সেই টাকা গরিবদের উন্নয়নের কাজে লাগানো যেতে পারে৷ এই ধারণাটা যদি উন্নত করা যায় তাহলে সরকার ও উৎকৃষ্টতর হবে৷ পাশাপাশি অফিসে কর্মসংসৃকতি বজায় রাখাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ ইজরায়েল দেশ তাদের কর্মসংসৃকতির জন্য দুনিয়ায় সেরা৷ আমাদেরও ইজরায়েলের মতো কর্মসংস্কৃতি তৈরি করা দরকার৷ রাজ্যে কর্মসংসৃকতি ফিরিয়ে এনে ত্রিপুরাকে আগামী তিন বছরের মধ্যে উন্নয়নের দিশায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি৷ এজন্য জনগণের পাশাপাশি প্রশাসনে অধিষ্ঠিত বিভিন্ন পদাধিকারিকদেরও সহযোগিতা চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জীব রঞ্জন বলেন, আমরা যারা প্রশাসনে আছি সবাই জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ৷ স্বচ্ছ প্রশাসন প্রদানের ক্ষেত্রে দশ প্রশাসকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ জনগণের জন্য যে কল্যাণমূলক কর্মসূচি রয়েছে তা আমাদের গুরুত্ব সহকারে পালন করতে হবে৷ এবছর দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে ১২তম সিভিল সার্ভিস ডে উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রে অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জনের জন্য আমাদের রাজ্যের পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলা শাসক ডা মিলিন্দ রামটেকেকে পুরস্কার প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজি৷ এটা আমাদের নিশ্চয়ই অনুপ্রেরণা যোগাবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন৷

অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন প্রধান সচিব ডা রাকেশ সারোয়াল এবং সিপার্ডের ডিজি কে নাগরাজ৷ এছাড়াও অনুষ্ঠানে জনগণের অভাব-অভিযোগ সংক্রান্ত বিষয় দ্রুত প্রতিকার করার লক্ষ্যে ত্রিপুরা স্টেট গ্রিভেন্স রিড্রেস এন্ড মনিটরিং সিস্টেম নামে একটি ওয়েব পোর্টাল চালু করেন মুখ্যমন্ত্রী৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *