নিজস্ব প্রতিনিধি, বিলোনীয়া, ১৯ এপ্রিল৷৷ নেশার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ বাম জমানায় ত্রিপুরাকে নেশা কারবারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করা হয়েছিল৷ এই নেশা কারবারীদের বিরুদ্ধে এবার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷
আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদীজি ত্রিপুরা রাজ্যকে একটি শ্রেষ্ঠ রাজ্যে পরিণত করার স্বপ্ণ দেখেছেন৷ তাই ত্রিপুরা সহ উত্তর – পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে অষ্টলক্ষ্মী আখ্যা দিয়ে সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে৷ রাজ্য সরকারও প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ণকে পূরণ করার লক্ষ্যে সেই দিশাতে কাজ করছে৷ আজ বিলোনীয়া মহকুমার উত্তর ভারত চন্দ্রনগরের তৈছামায় দুই দিন ব্যাপী ১৯তম গড়িয়া উৎসব ও সংহতি মেলার উদ্বোধন করে এই কথাগুলি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি বলেন, আমরা যে ভূমিতে জন্মগ্রহণ করেছি তা একটি পবিত্র ভূমি৷ এখানে রয়েছে ভারতের অন্যতম পীঠস্থান ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির৷ মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব বলেন, এই পৃথিবীতে মানুষ কোনও না কোনও গুণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন৷ তার বিকাশ ঘটাতে হয়৷ সরকারেরও দায়িত্ব গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে সমাজের উন্নয়নের কাজে লাগানো৷ প্রত্যেক ব্যক্তির যেমন নিজেকে মা-র শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে ভাবা উচিত ঠিক তেমনি মা-ও তার সন্তানকে শ্রেষ্ঠ মনে করলে উৎকৃষ্ট সন্তান বেরিয়ে আসবে বলে মুখ্যমন্ত্রী মনে করেন৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা যেই দেশে বাস করি সেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি যদি নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করেন তাহলে দেশের কল্যাণ হবে৷ দেশের কল্যাণ হলে জনগণও এর সুফল ভোগ করতে পারবেন৷ আমরা গড়িয়া পুজা করছি রাজ্যের জনগণের সমৃদ্ধির জন্য৷ বর্তমান সরকারও সেই দিশাতে কাজ শুরু করে দিয়েছে৷ কারণ এই সরকার শুধু বিজেপি- আইপিএফটি- র সরকার নয়, এটি ৩৭টি লক্ষ ত্রিপুরাবাসীর সরকার৷ এটা বিশ্বাস করি-ত্রিপুরাবাসীকে একটি স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত সরকার উপহার দেবে বিজেপি-আইপিএফটি সরকার৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার গঠন করার পরপরই আমরা ত্রিপুরাকে নেশামুক্ত করার অঙ্গীকার করেছি৷ যারা নেশা কারবারীর সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে৷ তিনি বলেন, বিগত সরকার ২৫ বছর ধরে এদের বিরুদ্ধে কোনও ধরণের ব্যবস্থা না নেওয়ার ফলে তারা ত্রিপুরাকে নেশাকারবারীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিলো৷ বর্তমান সরকার নেশাকারবারী ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে রাজ্যকে সমৃদ্ধিশালী করার দিশাতে কাজ করবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মাতা ত্রিপুরেশ্বরী ধন্য এই ত্রিপুরাতে গ্যাস, বিদ্যুৎ সহ প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে৷ একে কাজে লাগিয়েই কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরী করতে হবে৷ সরকার সেই দিশাতেই কাজ করতে শুরু করেছে৷ তিনি বলেন, আগ্রা যেমন তাজমহলের জন্য বিখ্যাত, হিমাচল প্রদেস যেমন আপেলের জন্য বিখ্যাত ঠিক তেমনি আমাদের ত্রিপুরাও আনারসের জন্য বিখ্যাত৷ রাজ্যে ২৫ বছর ধরে শাসন করা বিগত সরকারের দায়িত্ব ছিলো একে দেশব্যাপী প্রচারে নিয়ে যাওয়ার ৷ কিন্তু তারা সেটা করেননি৷ বর্তমান সরকার রাজ্যের বিখ্যাত আনারসকে দেশব্যাপী প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ আনারসকে কেন্দ্র করে রাজ্যে বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যেও কাজ করছে বর্তমান রাজ্য সরকার৷ কৃষি দপ্তর ও উদ্যান দপ্তরকে বলা হয়েছে রেগার মাধ্যমে আরও বেশি আনারস চাষ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের রাজ্যে ঊনকোটি, নীরমহল, মাতাবাড়ি, ছবিমুড়ার মতো বহু দর্শনীয় স্থান রয়েছে৷ সেগুলিকে কেন্দ্র করে পর্যটন শিল্পকে আরও উন্নত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷ আগামী ৩ বছরের মধ্যে ত্রিপুরাকে পর্যটন সহ বিভিন্ন বিষয়ে উন্নত করে আমরা ত্রিপুরাকে মডেল রাজ্যে পরিণত করবো৷ রাজ্যের ৩৭ লক্ষ জনগণকে পাশে নিয়ে আমরা ইতিমধ্যেই সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ যে গ্রামে গড়িয়া উৎসব ও মেলা সংগঠিত করা হচ্ছে সেখানে বিগত সরকারের আমলে পানীয় জল, বিদ্যুৎ যোগাযোগ সহ কোনও কিছুরই উন্নয়ন হয়নি৷ তাই এই গ্রামে দ্রুত পানীয় জল, বিদ্যুৎ, সহ সার্বিক উন্নয়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ তিনি বলেন, শুধু এই গ্রামে নয়, রাজ্যের প্রতিটি গ্রামে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ আমরা জানি জল হলো জীবন৷ তাই জলের জন্য কোনও মানুষ যাতে কষ্ট না পান সেদিকেও আমরা দৃষ্টি দিয়ে কাজ করছি৷ ৩৭ লক্ষ ত্রিপুরাবাসীর সহযোগিতা নিয়েই আমরা প্রত্যেক রাজ্যবাসীর জীবনের মানোন্নয়নে কাজ করে রাজ্যকে উন্নয়নের দিশাতে এগিয়ে নিয়ে যাবো৷
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বিধায়ক অরুণ চন্দ্র ভৌমিক বলেন, গড়িয়া পুজা শুধু জনজাতিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়৷ বাঙ্গালীদের দুর্গাপূজার যেমন জাতি, জনজাতিদের নানা ধর্মের মানুষ অংশ গ্রহণ করেন ঠিক তেমনি জনজাতিদের গড়িয়া পুজায়ও জাত-পাত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল অংশের মানুষ অংশ গ্রহণ করেন৷
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক প্রমোদ রিয়াং, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক সি কে জমাতিয়া, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার পুলিশ সুপার জৈল সিং মিনা এবং রামঠাকুর কলেজের সহ অধ্যাপিকা বীণা দেববর্মা৷
2018-04-20