নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৪ এপ্রিল৷৷ ভারতের মতো নানা জাতি, নানা মত, নানা পরিধান ও নানা সংসৃকতির মানুষের জন্য সংবিধান রচনা করা সহজ কাজ ছিলনা৷ ড বি আর আম্বেদকর আমাদের নজ্য এমনই একটি সংবিধান রচনা করে দিয়েছেন যা দেশের প্রতিটি মানুষের জীবন রেখা৷ আজ বিকেলে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ড বি আর আম্বেদকরের ১২৮ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভার উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথাগুলো বলেন৷ আজকের আলোচনাচক্রের বিষয় ছিল সামাজিক ন্যায় ও ড বি আর আম্বেদকর৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আলোচনা সভার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন৷ তিনি এবং অতিথিগণ আম্বেদকরের প্রতিকৃতিত্বে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান৷
আলোনায় অংশ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেন, আজ ১৪ এপ্রিল দিনটিতে সারা পৃথিবীতে যারাই জন্ম গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে আম্বেদকরই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি৷ আজকের দিনটি আম্বেদকরের দিন৷ এমন একজন মহান ব্যক্তির জন্মদাতা হিসেবে আমি তাঁর পিতা মাতাকে শ্রদ্ধারে সঙ্গে স্মরণ করছি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সংবিধানই হলো আইনের মাপকাঠি৷ তিনি ভারতবর্ষের জন্য দিশা তৈরী করে দিয়েছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ দেব ২৬ নভেম্বর দিনটিকে কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধান দিবস ঘোষণা করার জন্য৷ গত ৭০ বছরে দেশে বিভিন্ন সরকার এসেছে কিন্তু ২৬ নভেম্বর দিনটিকে সংবধিান দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন৷ তাঁর ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে ১০০ জনকে স্কলারশিপ দিয়ে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হয়েছিল আন্তর্জাতিক স্তরে বাবা সাহেবের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার জন্য৷ এই উদ্যোগ আগেও নেওয়া যেত৷ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জন্যই এই কাজগুলি অপেক্ষা করছি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জাতপাত এক সময়ে ভারতে প্রবল হয়ে উঠেছিল৷ বাবা সাহেবকে অনেক অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে হয়েছে৷ কিন্তু তিনি ছিলেন মহান ব্যক্তিত্ব৷ মহান ব্যক্তিদের দূরদৃষ্টি থাকে৷ আজ থেকে ৫০/৬০/১০০ বছর পর কি হতে পারে তা তারা বুঝতে পারেন৷ এত বছর আগে রচনা করা সংবিধান তাই এখনো গ্রহণযোগ্য৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যারা সহেবের ১২৮ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ১৪ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ সেই কর্মসূচিকে গ্রামস্তর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হবে৷ আজকের দিনটি সামাজিক ন্যায় দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রী আজ বাবা সাহেবের জন্মদিনে ছত্তিশগড়ে গিয়ে আয়ুস্মান ভারত যোজনা নামে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছেন৷ এই প্রকল্পে ১০ কোটি গরীব ভারতবাসী ৪ লক্ষ টাকা বীমার সুযোগ পাবেন৷ত্রিপুরার ৫ লক্ষ পরিবার বিনামূল্য এই বীমার সুযোগ পাবেন৷ আগামী ৩০ এপ্রিল থেকে তা চালু হবে৷ আমাদের রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ভাল না হওয়ায় হাজার হাজার রোগীকে বহিঃরাজ্যে যেতে হচ্ছে চিকিৎসার জন্য৷ গরীবরা চিকিৎসার জন্য যেন কষ্ট না পায় ভারত সরকার সেই ব্যবস্থ্য করেছে৷ তিনি জানান, রাজ্যের প্রতিটি জেলায় আম্বেদকর জয়ন্তী পালন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ এ কর্মসূচি অনুযায়ী ১৮ এপ্রিল স্বচ্ছ ভারত পর্ব উদযাপন করা হবে৷ তাতে গ্রাম চিহ্ণিত করে যেখানে এখনো উন্মুক্ত শৌচালয় হয়েছে সেখানে ও ডি এফ করা হবে৷ ২০ এপ্রিল থেকে গ্রামের গরীব মহিলাদের জন্য উজ্জলা পঞ্চায়েত যোজনায় ১৫ হাজার নতুন এল পি জি কানেকশন দেওয়া, ২৪ এপ্রিল থেকে পঞ্চায়েতী রাজ দিবস, ২৮ এপ্রিল গ্রাম শক্তি দিবস, ৩০ এপ্রিল আয়ুম্মান যোজনা, ২ মে কিষান কল্যাণ কার্য সভা এবং ৫ মে কৌশল বিকাশ মেলা প্রভৃতি কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে৷ এই সব প্রকল্পই নেওয়া হয়েছে দেশের গরীব অংশের মানুষের জন্য৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নিপীড়িত, শোষিত মানুষকে অন্যদের মতো এক জায়গায় আনার জন্য সংবিধানে সংরক্ষণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ বাবা সাহেবেরও স্বপ্ণ ছিল সবকা সাথ সবকা বিকাশ৷ গান্ধীজি, আম্বেদকর, নেতাজী, বঙ্কিমচন্দ্র, স্বামী বিবেকানন্দ যে স্বপ্ণ দেখেছেন তারই ভাষাগত বহিঃপ্রকাশ হলো সবকা সাথ সবকা বিকাশ৷ তিনি বলেন, যে দেশে গান্ধীজী, বিবেকানন্দ, আম্বেদকরের জন্ম হয়েছে সেই দেশের মানুষ হয়ে আমরা গর্ববোধ করি৷ তিনি বলেন, নিজের জীবনের মধ্যে, নিজের কাজের মধ্যে বাবাসাহেবকে দেখতে হবে৷ তবেই আম্বেদকরের প্রতি, দেশের প্রতি আমরা নিষ্ঠা দেখাতে পারব৷
আলোচনা সভায় অংশ নেন প্রধান বক্তা ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন প্রফেসার সত্যদেও পোদ্দার, বিধানসভার অধ্যক্ষ রেবতী মোহন দাস, বিধায়ক ডাঃ দিলীপ দাস৷ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ জীতেন্দ্র সরকার৷ স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের আয়োজক তপশিলী জাতি কল্যাণ দপ্তরের সচিব এল এইচ ডার্লং৷ উপস্থিত ছিলেন পশ্চিম ত্রিপুরার জেলা শোসক মিলিন্দ রামটেকে৷ আলোচনা সভার পর আম্বেদকর জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরসৃকত করা হয়৷ পরে আয়োজিত হয় মনোজ্ঞ সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান৷
2018-04-15