নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ এপ্রিল৷৷ দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা, স্বজনপোষণ এবং বিজেপির প্রলোভনই বামফ্রন্টের বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে চিহ্ণিত করল সিপিএম রাজ্য কমিটি৷
পরাজয়ের একমাস বাদে রাজ্যের সদ্য ক্ষমতাচ্যুত সিপিআইএম পরাজয়ের কারণ অনুসন্ধানে সমর্থ হল৷ যদিও পার্টির আভ্যন্তরীন বিষয়গুলিকে রাখঢাক করে বিজেপি এবং তাদের শারিক দল গুলির কর্মকাণ্ড নিয়েই বেশি দোষারোপ ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে পার্টি৷ পরাজয়ের দায়ভার বিজেপি উপরই চালানোর চেষ্টা হয়েছে৷ কিন্তু পার্টির এবং তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারেরর আমলে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির বিষয়গুলি পার্টি এখন আর চেপে রাখতে পারছে না৷
সিপিআইএম এর প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক তথা পলিটব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাতের উপস্থিতিতে আয়োজিত রাজ্য কমিটির বৈঠকের পর পার্টির রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর বুধবার রাতে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে দুদিনের বৈঠকে বিস্তর চর্চা হয়েছে৷ এই ফল অপ্রত্যাশিত ছিল৷ ত্রিপুরার রাজনীতিতে বামেদের এত বড় বিপর্যয় এর আগে কখনো ঘটেনি৷ তবে এই বিপর্যয়ে রাজ্যে ও দেশের বাম গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে সাময়িক কালের জন্য হলেও বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়েছে৷ তবে জনরায় মেনে নিতেই হবে৷ কিন্তু অপ্রত্যাশিত ফলের পেছনে কারণগুলি অনুসন্ধান করা হয়েছে৷
তিনি বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে সিপিআইএম সরাসরি কংগ্রেস ও তাদের বিভিন্ন আঞ্চলিক দল গুলির জোটের বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছে৷ জনগনেরও তাদের বিষয় অভিজ্ঞতা হয়েছিল৷ সকলেই তাদের সম্পর্কে ধারনা স্পষ্ট ছিল৷ কিন্তু বিজেপি এবং বিজেপি পরিচালিত জোটের বিষয়ে জনগণের প্রত্যক্ষ ধারনা ছিল না৷ তাই সাংগঠনিক প্রক্রিয়া, মতাদর্শগত প্রচার মাইক্রো ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তারা তাদের বিস্তার ঘটিয়েছে৷ সেই সঙ্গে ডিজিটাল প্রচার তাদের জন্য সহায়ক হয়েছে৷ সর্বোপরি বিশাল অংকের অর্থ ভোটারদের কেনার জন্য ব্যয় করা হয়েছে৷
সিপিআইএম এর শক্তিশালী গণ ভিত ছিল উপজাতি মহলে৷ কিন্তু সেখানে সাংগঠনিক কলা কৌশলে সিপিআইএম এবার বিজেপির মোকাবেলা করতে পারেনি বলেন বিজন ধর৷
বিজন ধর আরো বলেন, বাম বিরোধী মহাজোট করার চেষ্টা হয়েছিল বিজেপির তরফে৷ এই জন্য অনেক চেষ্টা হয়েছে৷ যদিও শেষ পর্যন্ত বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে৷ কিন্তু জাতি উপজাতি উভয় ক্ষেত্রেই বিজেপি ও তার শারিকদের পক্ষে ভোট পড়েছে৷ বামফ্রন্ট সরকারের উন্নয়ন কর্মসূূচীর ফলে রাজ্যে নতুন ধরনের মধ্যবিত্ত শ্রেণী, নতুন প্রজন্ম তৈরি হয়েছে৷ এদের মধ্যে নয়া উদারবাদী, আত্মকেন্দ্রীকতা এবং ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্খা তৈরি হয়েছে৷ যা কাজে লাগিয়েছে বিজেপি ও আরএসএস৷
তিনি আরও বলেন, আইপিএফটি বিচ্ছিন্নতা বাদের কথা বলে, পৃথক রাজ্যর দাবি তুলে উপজাতি জনপদে প্রভাব বৃদ্ধি করেছে৷ যদিও তা বাস্তবায়িত হওয়ার নয়৷ আলাদা রাজ্য সিপিআইএম এখনো সমর্থন করে না৷ কিন্তু এই শ্লোগান তুলে উপজাতিদের বামফ্রন্ট থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে৷
তিনি বলেন, বামশাসনের উন্নয়নের জোয়ারে শুধু উপজাতি এলাকাতেই নব্য শিক্ষিত, নব্য ধনী তৈরি হয়েছে এমনটা নয়, সমতলে তাই হয়েছে৷ তাই পৃথক রাজ্যের দাবী নিয়ে পাহাড় গরম করা হলেও নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিদেয় সমতলের ভোটে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা হয়েছে৷ যা বামপন্থী রাজনীতির গাইডলাইনে নেই৷ বামপন্থীরা সমষ্টিগত উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যক্তিগত উন্নয়ন চায়৷ কিন্তু এই ক্ষেত্রে বিপরীত অবস্থা নিয়েছে বিজেপি পরিচালিত শক্তি৷
তবে বিজন ধর সবশেষে রাখডাক করে নিজেদের ত্রুটির কথাও স্বীকার করেন৷ তিনি বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের সামনে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার৷ যাতে করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যায়৷ তবে সাংগঠনিক দুর্বলতাও ছিল৷ বামফ্রন্ট সরকারের সময়কালে স্থানীয় ভাবে কিছু রাজনৈতিক স্বজনপোষণ, দুর্নীতি হয়েছে৷ সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে এসবের মোকাবেলা করার সম্ভব হয়নি৷ ফলে বিরুদ্ধ শক্তি সুযোগ পেয়ে গেছে৷ সাংগঠনিক দুর্বলতার সৃষ্টির জন্য যারা দায়ী তাদের চিহ্ণিত করা হবে৷ উপযুক্ত ব্যবস্থাও নেওয়া হবে৷ ক্ষমতা পরিবর্তনের পর প্রচুক সংখ্যক কর্মী পার্টি ছেড়ে শাসকদলে যোগ দিচ্ছেন৷ পার্টিতে বেনোজল ডুকে যাওয়ায় এমনটা হয়েছে৷ আশা করা যায় আগামী দিনে পার্টির সদস্য সংখ্যাও হ্রাস পাবে৷ অনেকেই সদস্য পদ গ্রহণ করবে না৷ আর অনেকে সদস্য পদ খারিজও করবে পার্টি৷
বিজন ধর জানান, বামফ্রন্ট সরকারও সিপিআইএম এতদিন যে দাবি করে আসছিল, নীতি আয়োগের বৈঠক রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী একেই দাবি করেছেন৷ এখন কেন্দ্রীয় সরকার এই দাবি গুলি মেনে নিচ্ছে৷ বিষয়টি রাজ্যের জন্য ভাল৷ কিন্তু রাজনৈতিক কারণে ইতিপূর্বে রাজ্যকে যেভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে তা যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার জন্য ভয়ঙ্কর বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷ রাজ্যের চলতি রাজনৈতিক সন্ত্রাসের কথা উল্লেখ করে তিনি পার্টির তরফে মুখ্যমন্ত্রীর দরবারে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথাও উল্লেখ করেন৷
2018-04-12