সুবোধ ঘোষ
আরে মশায় আমার ছেলের বাংলায় কথা বলতে কষ্ট হয়৷ ছেলের গর্বে গর্বিত ভদ্রলোকের চোখে মুখে ফুটে উঠে তৃপ্তির হাসি৷ পাশে বসা আর একজন জানতে চায় – আপনার ছেলে কি বাঙালি না?
তার কথা শুনে গর্বিত বাবা রেগে গেলেন৷ বললেন দৃর মশায়, আমি কি অবাঙালি৷ বুঝলেন, বাঙালি বাবার খাঁটি বাঙালি ছেলে৷ ভদ্রলোক জানতে চাইলেন – তাহলে কেন বাঙলা বলতে পারে না?
গর্বিত বাবা চারিদিকে এক নজর দেখে বললেন – কি করে পারবে, বলুন? ছেলে যে ইংলিশ সুকলে পড়ে৷ তাই বাংলা ভুলে যাচ্ছে৷ আরে মশায়, কম্পিটিশনের যুগ৷ বাংলায় কথা বললে কি চলে? ইংরেজি ভাষা যে জানতে হবে৷
ভদ্রলোক ফের জানতে চাইলেন – ঘরেও কি আপনার ছেলে ইংরেজিতে কথা বলে? গর্বিত বাবার নির্লিপ্ত উত্তর – একটু আধটু বলে৷
বাঙালি ছেলের বাঙালি বাবার কথা শুনে আর এক বাঙালি ভদ্রলোক ভিরমি খাবার দশা৷ কেন বা ওই গর্বিত বাবা যে নিজ অজন্তে নিজ মায়ের ভাষাকে অশ্রদ্ধা করলেন তা তিনি বুঝতে পারলেন না৷ গর্বিত পিতা হয়তোবা জানেন না – ইউনেস্কো বাংলা ভাষাকে বিশ্বের মধুরতম ভাষা হিসাবে আখ্যায়িত করেছে৷ এবং বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে স্বীকৃত৷ বিশ্বের মধ্যে একমাত্র বাঙালি জাতি নিজ ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে৷ একটা দেশের রাষ্ট্রভাষা আজ বাংলা ভাষা৷ সেই দেশ আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ৷ ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী৷ তৎকালীন পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দিয়েছিল৷ পরবর্তীতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীন বাংলাদেশ হবার পর একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বাংলা ভাষা হয়৷ এবং প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস পালিত হয়৷ শুধু বাংলাদেশে নয়৷ বর্তমানে বিস্বের ১০৮ টি দেশে ভাষার প্রতি সম্মান দেখিয়ে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারী পালন করা হয়৷ তার সে ভাষা বিশ্বে মধুরতম ভাষা আজ সেই ভাষায় ছেলে তেমন কথা বলতে না পারায় তার বাবা গর্ববোধ করছে৷
অবশ্য তার উল্টো চিত্রটাও চোখে পড়ে৷ যেসব বাঙালি প্রবাসে থাকেন তারা কিন্তু নিজেদের সত্তাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন৷ বাঙালির কৃষ্টি সংসৃকতি বিদেশের মাটিতেও তুলে ধরার চেষ্টা করছেন৷ তাদের ছেলে মেয়েদেরকে বাংলা ভাষায় কথা বলার আদব কায়দা শিখিয়ে দিচ্ছেন৷ বাইরে অনর্গল তারা ইংরেজিতে কথা বললেও ঘরে মা বাবারা তাদের সাথে বাংলায় কথা বলছেন৷ তাই অনেক প্রবাসী মা – বাবা গর্বের সাথে বলেন আমাদের ছেলে মেয়েরা বাংলায় কথা বলতে পারে৷ বিদেশে আছি বলেই তাদেরকে বাংলা ভাষা থেকে দূরে সরিয়ে রাখিনি৷ কেন না, বাংলা যে আাবার মায়ের ভাষা৷ আমার অস্থি মজ্জায় মিশে আছে বাংলার কৃষ্টি সংসৃকতি এর সভ্যতা৷ তাইতো প্রবাসী বাঙালিরা বাঙালির বিভিন্ন পূজা পার্বনে এক জোট হয়ে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মেতে উঠে৷ প্রবাসীদের মন পড়ে থাকে, বনরাজিঘেরা সাগর মেঘলা বাংলার বুকে৷ অথচ স্বদেশে থেকে কিছু বাঙালি বাংলাভাষাকে অবজা করে নিজেদের আভিজাত্য বাড়ানোর চেষ্টা করেন৷ তারা ভুলে যান নিজ অস্তিত্ব৷ শিকড়ের সন্ধান তারা করেন না৷ ব্যস্ত থাকেন বিদেশি ভাষার চর্চায়৷ তবে এটাও সত্য যে, হাইটেকের যুগে ইংরেজি ভাষার কদর অনস্বীকার্য৷ তাই বলে, নিজ ভাষাকে অবহেলা করে নয়৷ যারা এমন করেন তাদেরকে জ্ঞানী মুর্খ ছাড়া আর কিইবা বলা যেতে পারে৷
2018-04-09