BRAKING NEWS

চৈত্র যেন হিসাবের মাস

৷৷ সুবোধ ঘোষ৷৷

বাজারে অনেক আগে থেকে বেরিয়ে গেছে শ্রী মদন গুপ্তের ফুল পঞ্জিকা৷ এ পঞ্জিকা প্রতিটি হিন্দু বাঙালী পরিবারের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ বাজারে পঞ্জিকা মানেই বাংলা বছরের শেষ ঘন্টা বাজানো৷ আর একটি বাংলা বর্ষ সমাগত৷ তাই বাংলা বছরের শেষ মাস নানা দিক থেকে বৈচিত্র্যে ভরা থাকে৷ এ বৈচিত্র্য হিন্দু বাঙালীর জীবন চর্চায়৷ দৈনন্দিন জীবনে বাংলা বছরের গুরুত্ব নেই বললেই চলে৷ কেননা, অফিস, আদালত কিংবা সুকল কলেজে বাংলা বছরের কোনও গুরুত্ব নেই৷ তাইতো আমরা চট করে ইংরেজি তারিখ বলতে পারি৷ কিন্তু, বাংলা তারিখ শত চেষ্টা করেও মনে করতে পারি না৷ নিত্য কাজে বাংলা বছর তাই গুরুত্বহীন৷ কিন্তু দৈনন্দিন কাজ ছাড়াও জীবনের আরও একটা অধ্যায় রয়েছে৷ তা হল ধর্মীয় ভাবনায় উদ্দীপ্ত৷ এবং এ কারণে হিন্দু বাঙালীদের কাছে শ্রী মদন গুপ্তের ফুল পঞ্জিকা অত্যন্ত জরুরী৷ ধর্মীয় বাতাবরণের মাঝে আমাদের সমাজ জীবন৷ জন্ম-মৃত্যু থেকে শুরু করে বিবাহ, অন্নপ্রাশন, ব্যবসা বাণিজ্য সবই বাংলা বছরের পঞ্জিকা নির্ভর৷ চৈত্র মাস এলে এ সময়টা বোঝা যায়৷ পুরনোকে বিদায় দিয়ে নতুনকে আগমনের তোড়জোর শুরু হয়ে যায়৷ ঘরবাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শুরু হয়ে যায় ঝাড়া মোছার কাজ৷ চৈত্র মাস যেন নিজেকে উপলব্ধি করার মাস৷ এমাসে ব্যবসায়ীদের হিসাব নিকাশের মাস৷ সারা বছরের আয় ব্যায়ের হিসাবের মাস৷ মুদি দোকান থেকে শুরু করে বড় বড় ব্যবসায়ী৷ চৈত্র মাসে নিজেদের পাওনা গন্ডা বুঝে নিতে চান৷ বাকির গ্রাহকদেরকে তাগাদা দেয়া শুরু হয়৷ অনেক সময় বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রাহকদের হাতে স্লিপ ধরিয়া দিতে হয়৷ তারপরও ব্যবসায়ীরা যে, সারা মাসের পুরো বাকির টাকা ঘরে তুলতে পারে তা কিন্তু নয়৷ তাইতো চৈত্র মাস হল ব্যবসায়ীদের কাছে তাগাদার মাস৷ আবার অন্যদিকে চৈত্র মাস ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের জন্য রোজগারের মাসও৷ চৈত্র মাসে রাজ্যের নানা স্থানে বসে চৈত্র মেলা৷ গৃহিনীদের বড় কাছে টানে এ মেলা৷ চৈত্র মাসের মাঝামাঝি রাজ্য জুড়ে বসে চৈত্র মেলা৷ মাসের শেষ দিন চৈত্র সংক্রান্তির দিনে রয়েছে বাঙালিয়ানার স্নিগ্দ পরশ৷ ঘরে ঘরে চলে মিস্টান্ন খাবার ধুম৷ এখন অবশ্য চৈত্র সংক্রান্তিতে এমন চিত্র তেমন দেখা যায় না৷ হাইটেকের যুগে সবই যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছে যেন৷ নেই তেমন চিড়া, মুড়ি, খই আর দধি দিয়ে ফলাহার খাবার ধুম৷ বড়জোর মিস্টির দোকান থেকে কয়েকটা মিস্টি আনা৷ তারপর বিভিন্ন সব্জি দিয়ে নিরামিষ রান্না৷ তবে এটা সত্যি যে, চৈত্র সংক্রান্তির আমেজটা এখন আর তেমন নাই৷ এ যেন নিয়ম রক্ষার নিয়মে পরিণত হয়েছে৷

যেমনটি সেই চৈত্র মাসে আগের মত শিব পার্বতীর নৃত্য৷ একটা সময় ছিল যখন রাতে দল বেঁধে ঢাকির দল বাড়ি বাড়ি যেত৷ উঠান ভরিয়ে দিত শিব পার্বতীর নৃত্য আর ধর্মীয় গানে৷ গৃহকর্তা খুশি হয়ে যা দিত তা নিয়ে আবার চলে যেত অন্য বাড়িতে৷ এক সময় চৈত্র মাসে গ্রামে গঞ্জে এ দৃশ্য ছিল সুখকর৷ এখন আর নেই সেই ঢাকির দল৷ জীবনের তাগিদে যুবকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছে৷ তাই গভীর রাতে ঢাকের আওয়াজ আর তেমন শোনা যায় না৷ তবুও চৈত্র মাস বলে কথা৷ বাংলা বছরের শেষ মাস হিন্দু বাঙালি সত্তায় যে গভীর ছাপ ফেলে যায়৷ হিন্দু বাঙালির ধর্মীয় সত্তায় চৈত্র মাসের যেমন গুরুত্ব রয়েছে তেমনি মন কেমনের হাওয়ায় দোলার মাস হল চৈত্র মাস৷ বসন্তের উতোল হাওয়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেলার মাস হল চৈত্র মাস৷ তাইতো রঙধনুর রঙে রাঙা এ চৈত্র মাস বড় বেশি কাছে টানে৷ চৈত্রের হাওয়ায় মন পবনের হাওয়ায় ভেসে বেড়ানোর মাস৷ হিসাব নিকেশ করার মাস৷ নিজেকে ফিরে পাবার মাস৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *