BRAKING NEWS

রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের কাজে অসন্তোষ উপমুখ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৬ এপ্রিল৷৷  সরকারী কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা অনুযায়ী কাজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ তাঁদের কাজকর্ম সন্তোষজনক স্তর

উপমুখ্যমন্ত্রী যিষ্ণু দেববর্মা৷

অনুযায়ী হচ্ছে না৷ তাই, সরকারী কর্মচারীদের কাজকর্মে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা বিদ্যুৎ মন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মণ৷ তাঁর কথায়, সরকারী দপ্তরগুলিতে কর্মচারী ঘাটতি রয়েছে তা বিশ্বাস করিনা৷

শুক্রবার মহাকরণে উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা বিদ্যুৎ মন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মণ সাংবাদিকদের বলেন, বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে যথেষ্ট কর্মচারী রয়েছেন৷ বাজেটের ১০ শতাংশ অর্থ কর্মচারীদের বেতন খাতে খরচ হচ্ছে৷ তাঁর কথায়, সরকারী দপ্তরগুলিতে কর্মচারী ঘাটতি রয়েছে তা বিশ্বাস করিনা৷ তাই, সরকারী পরিষেবা সঠিকভাবে প্রদানের ক্ষেত্রে ঘাটতির পেছনে উপ-মুখ্যমন্ত্রী কর্মচারীদের কাজের ক্ষমতা সঠিক ভাবে ব্যবহার হচ্ছে না, সেই বিষয়টিকে দায়ি করেছেন৷ তাঁর কথায়, সরকারী কর্মচারীদের কর্মক্ষমতা অনুযায়ী তাদের কাছ থেকে কাজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ তাদের কাজকর্ম সন্তোষজনক স্তর অনুযায়ী হচ্ছে না৷ ফলে, জনগণকে সরকারী পরিষেবা সঠিকভাবে দেওয়া যাচ্ছে না৷

এবিষয়ে উপ-মুখ্যমন্ত্রী তথা বিদ্যুৎ মন্ত্রী বিদ্যুৎ দফতরের পরিষেবা প্রদানের বিষয়ে পূর্বতন সরকারের আমলের কিছু নিয়ম তুলে ধরে বিষোদগার প্রকাশ করেন৷ তাঁর কথায়, রাজ্যবাসীকে সঠিক ভাবে সরকারী পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ পরিষেবা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম৷ অথচ দেখা যাচ্ছে পূর্বতন সরকারের নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যুতের সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধানে মাত্রাতিরিক্ত সময় ব্যয় ধার্য্য করা হয়েছে৷ উদাহরণ হিসেবে তিনি তুলে ধরেন, নগর এলাকায় একটি ফিউজ বিকল হয়ে গেলে তা সারাইয়ের জন্য পূর্বতন সরকারের নিয়ম অনুযায়ী ৪ ঘণ্টা সময় ধার্য্য করা হয়েছে৷ কোন ট্রান্সফরমার বিকল হলে তা সারাই করতে ২৪ ঘণ্টা সময় ধরা হয়েছিল৷ আশ্চর্য্যের বিষয় হলো গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত এলাকায় পরিবাহি ট্রান্সফরমার বিকল হলে তা সারাইয়ে ৭২ ঘণ্টা সময় ধার্য্য করা হয়েছে৷ বিদ্যুৎ মন্ত্রীর কথায়, বিদ্যুৎ পরিবাহি ব্যবস্থায় গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত এলাকায় সমস্যা সমাধানে মাত্রাতিরিক্ত সময় ধার্য্য করা রয়েছে পূর্বতন সরকারের নিয়ম অনুযায়ী৷

এদিন তিনি বিদ্রুপের সুরে বলেন, গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত এলাকায় ফিউজ বদলাতে ২৪ ঘণ্টা সময় ধার্য্য করে রেখেছে পূর্বতন সরকার৷ তেমনি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় বা কোন কারণে বিদ্যুৎ পরিবাহি তার কিংবা খুঁটির উপর গাছ পড়লে তা সারাই করতে ২৪ ঘণ্টা সময় ধার্য্য করে রাখা হয়েছে৷ এছাড়াও বিভিন্ন সমস্যার ক্ষেত্রে নগর, গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত এলাকায় সমাধানে প্রয়োজনের থেকে অতিরিক্ত সময় ধার্য্য করে রাখা হয়েছে৷ এই পরিস্থিতিতে রাজ্যবাসীর সঠিক ভাবে বিদ্যুৎ পরিষেবা পাওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়৷ বিদ্যুৎ মন্ত্রীর কথায়, রাজ্য সরকারের নিয়ম অনুযায়ী সমস্যা সমাধানে মাত্রাতিরিক্ত সময় ধার্য্য করে রাখা হলে কর্মচারীদের কাজে ঢিলেমি দেওয়াই স্বাভাবিক৷ তাই বিদ্যুৎ পরিষেবায় যে কোন সমস্যা সমাধানে সময় ধার্য্য করার নিয়ম বদলানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷

তাঁর বক্তব্য, শুক্রবার বিদ্যুৎ দপ্তরের পর্যালোচনা বৈঠকে বিদ্যুৎ পরিষেবায় সমস্যা সমাধানে নতুন সময় সূচী নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে৷ তাতে নগর এলাকায় কেবলমাত্র পরিবাহি ট্রান্সফরমার বিকল হলে সবের্বাচ্চ ৫ ঘণ্টার মধ্যে সারাই করার সময় ধার্য্য করা হয়েছে৷ অন্যান্য সমস্যা গুলি ১ থেকে ৩ ঘণ্টার মধ্যে সমাধানের সময় সূচী বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷ একই ভাবে আধানগর এলাকা, গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত এলাকাতেও বিদ্যুৎ পরিষেবায় সমস্যা সমাধানে সময় আগের তুলনায় কমিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তাঁর কথায়, এবিষয়ে সময় সময়ে পর্যালোচনা করা হবে৷

এদিকে, বিদ্যুতের বিল সরবরাহের ক্ষেত্রে  গ্রাহক অসন্তুষ্টির কথা মাথায় রেখে বিল সংগ্রহকারীদের বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তাঁরা মূলত ঠিকেদারের অধীন বিদ্যুৎ নিগমে নিযুক্ত৷ পূর্বতন সরকারের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ১বছর অন্তর অন্তর তাদের কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হচ্ছিল৷ এখন থেকে কর্মক্ষমতার উপর ভিত্তি করে প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর তাদের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে৷ তিনি জানান, বিদ্যুতের বিল সরবরাহে গোলমাল হচ্ছে৷ তাই, রাজ্য সরকার প্রিপেড মিটার নিয়ে আসছে৷ দেড় লক্ষ প্রিপেড মিটারের অর্র্ডর দেওয়া হয়েছে৷ বিদ্যুৎ মন্ত্রীর কথায়, রাজ্যে ৬ লক্ষ ১১হাজার ৩৯২ টি গৃহস্থালী এবং ৫৬ হাজার ১৯টি বাণিজ্যিক সংযোগ রয়েছে৷

এদিকে, রাজ্যের প্রতিটি পরিবারকে বিদ্যুৎ পরিষেবার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ গরিব অংশের যে সমস্ত পরিবারকে এখনো বিদ্যুৎ পরিষেবায় আওতায় আনা যায়নি তাদের সকলকে নতুন একটি প্রকল্পের মাধম্যে নিঃশুল্ক বিদ্যুৎ সংযোগ দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ বিদ্যুৎ মন্ত্রীর কথায়, রাজ্যের বহু গরিব পরিবার এখনো বিদ্যুৎ পরিষেবায় আওতায় আসেনি৷ কিন্তু রাজ্য সরকার প্রত্যেক বাড়িতে বিদ্যুতের আলো জ্বালাতে চায়৷ এই লক্ষ্যে রাজ্য সরকার নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে৷ সৌভাগ্য নামে রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পটি অতিসত্বর সূচনা করা হবে৷ প্রকল্পটির উদ্বোধন করতে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী আর কে সিং-কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে৷ দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷ তবে তিনি এলেই প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়ে যাবে৷ চলতি মাসেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আর কে সিং রাজ্যে আসবেন বলে আপাতত ঠিক হয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *