নতুন আঙ্গিকে আগরতলা বইমেলার উদ্বোধন, রাজ্যপাল বললেন বইয়ের মৃত্যু নেই, আড্ডা ছেড়ে বই পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ এপ্রিল৷৷ পৃথিবী যতই আধুনিক জগতে প্রবেশ করুক নতুন ও পুরোনো বইয়ের যে গন্ধ তা কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে

সোমবার আগরতলায় ৩৬তম বইমেলার উদ্বোধন করেন রাজ্যপাল তথাগত রায়৷ নিজস্ব ছবি৷

না৷ এই গন্ধের মহাত্ম বইপ্রেমী মানুষই অনুভব করতে পারেন৷ তাই ক্যাসেট, সি ডি, ডি ভি ডি’র মতো জিনিষ একে একে এসে অবলুপ্ত হয়ে গেলেও বইয়ের মৃত্যু নেই৷ আজ শিশু উদ্যানে ৩৬তম আগরতলা বইমেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে রাজ্যপাল তথাগত রায় একথাগুলো বলেন৷ এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব যুব সম্প্রদায়কে চায়ের দোকানে আড্ডা ছেড়ে লাইব্রেরীতে গিয়ে বই পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷

দিন বদলের সাথেই সাথেই বইমেলায় সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদ অনুভব করলেন বইপ্রেমীরা৷ মেলা প্রাঙ্গনের প্রবেশমুখে নানা ধরনের আল্পনা বইমেলার মেজাজটাই অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে পেরেছে৷ জাতি-উপজাতি সংসৃকতির মিশেলে উদ্বোধনী পর্বও উপস্থিত সকলকেই নিঃসন্দেহে রোমাঞ্চিত করেছে৷ মঞ্চ থেকে শুরু করে উদ্বোধন, সবেতেই ছিল কলা সংসৃকতির ছোঁয়া৷ সঙ্গীতানুষ্ঠান, হাজাগিরি নৃত্য, লেবাংবুমানি নৃত্যে গুগড়া বদল ও সমবেত নৃত্য উপস্থিত সকলের মন মাতিয়ে দিয়েছে৷

এদিন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যপাল বলেন, পৃথিবী যতই আধুনিক জগতে প্রবেশ করুক নতুন ও পুরোনো বইয়ের যে গন্ধ তা কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ এই গন্ধের মহাত্ম বইপ্রেমী মানুষই অনুভব করতে পারেন৷ তাই ক্যাসেট, সি ডি, ডি ভি ডি’র মতো জিনিষ একে একে এসে অবলুপ্ত হয়ে গেলেও বইয়ের মৃত্যু নেই৷ তিনি ত্রিপুরার রাজন্যবর্গ শিল্প-সংসৃকতির প্রতি যে কদর দেখাতেন তার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একদিন যে বিশ্বকবি হয়ে উঠেছিলেন তার পেছনে ত্রিপুরার রাজন্যবর্গের এক অসামান্য অবদান রয়েছে৷ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন নোবেল পুরস্কার পাননি তখন অনেকেই তাঁকে বিশ্বকবি হিসেবে ভাবতে চাইতেন না৷ কিন্তু সে সময়ই মহারাজা রাধাকিশোর মাণিক্য একাধিকবার রবীন্দ্রনাথকে ত্রিপুরায় আমন্ত্রণ করে সম্মান জানিয়েছেন৷ রাজ্যপাল বলেন, যে রাজ্যে এতো সংসৃকতিমনস্ক মানুষ থাকেন সেখানে বইমেলা একটা অন্য জনপ্রিয়তা পাবে এটাই তো স্বাভাবিক৷

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব চায়ের আড্ডায় না থেকে লাইব্রেরীতে গিয়ে বই পড়ার জন্য রাজ্যের সব অংশের মানুষ বিশেষ করে তরুণ সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, লাইব্রেরীতে গিয়ে বেশি সময় কাটালে সমাজ ব্যবস্থায় একটা ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে বাধ্য৷ সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যমে সিস্টেম পরিবর্তনে বিশ্বাস করে এই সরকার৷ রাজনীতির উধের্ব ওঠে সমাজের স্বার্থেই বিষয়টি হওয়া উচিত৷ আর এ ধরণের পরিবর্তন এলেই বইমেলায় প্রভৃত সার্থকতা আসবে৷ বইমেলায় সবাইকে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বইমেলায় এসে বই কিনে বাড়ি নিয়ে যান৷ এতে সমাজ উপকৃত হবে৷ ৩৭ লক্ষ ত্রিপুরাবাসী এক নতুন দিশা নিয়ে এ রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে পান না করে ভাগাভাগি করলে বইকে ভাগ করুন৷ এতে সমাজের লাভ হবে৷ নতুন প্রজন্ম সেই দিকে অগ্রসর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন আধুনিক যুগে প্রবেশ করলেও বিদ্যা দান করা হয় বইয়ের মাধ্যমেই৷ তিনি বলেন, বেদ, উপনিষদ ইত্যাদি পড়ার মধ্য দিয়ে দুনিয়ার সভ্যতা সম্পর্কে আমরা একটা ধারণা পাই৷ এগুলি লিপিবদ্ধ করা না থাকলে আমরা আমাদের অতীত সম্পর্কে কিছুই জানতাম না৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বইমেলা হচ্ছে লেখক, পাবলিশার্স, ডিস্ট্রিবিউটার, পাঠক সবার মিলনস্থল৷ তিনি বলেন, বই হচ্ছে মানুষের বিশ্বাস অর্জনের জন্য সবচেয়ে বড় হাতিয়ার৷

অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে উপ-মুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, আগরতলা বইমেলা এখন মধ্য যৌবনে৷ প্রথম থেকেই এই বইমেলার নিজস্ব মেজাজ রয়েছে৷ তিনি বলেন, রাজন্য আমল থেকেই এ রাজ্যে সাহিত্য চর্চা হতো৷ সাহিত্য চর্চা ত্রিপুরার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ৷ রাজারা সাহিত্যনুরাগী ছিলেন৷ এখানকার রাজবাড়ি সাহিত্য চর্চার প্রাণ কেন্দ্র ছিলো৷ সেখান থেকে বহু বই প্রকাশিত হতো৷ তাই সাহিত্যের ক্ষেত্রে ত্রিপুরার পদচারণা নতুন নয়৷ উপ-মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বই মেলাই জানিয়ে দেয় ছোট রাজ্য ত্রিপুরার কত লেখক, সাহিত্যিক, প্রকাশক রয়েছে৷ আগরতলার বই মেলার প্রাণ আছে৷ আগামী দিনে আগরতলা বইমেলা আরও সুন্দর হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন৷

বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির ভাষণে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ বইয়ের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, যে জাতি যত বেশি বই পড়ে, সে জাতি তত বেশি সভ্য৷ বই আমাদের শেষ ভরসা, বন্ধু৷ তাই বই বড়তেই হবে৷ বইয়ের কোনও বিকল্প নেই৷ বই হলো আমাদের নির্ভরযোগ্য বন্ধু৷ তিনি বলেন, মানুষের জ্ঞানের চাহিদা থাকবে, বই থাকবে, বইমেলা থাকবে৷ বইমেলা হোক জ্ঞান সাধনার তীর্থভূমি৷ বই হোক চিরন্তন সাথী৷ তিনি রাজ্যের বাংলা ও ককবরকে বেশি করে অনুবাদ সাহিত্য সৃষ্টি করা হলে উভয় ভাষাভাষীর জন্য ভালো হবে বলে মন্তব্য করেন৷

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি বিশিষ্ট লেখিকা তিলোত্তমা মজুমদার বলেন, অসততা এবং দুর্নীতি আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় অসুখ৷ জ্ঞান এবং শিক্ষা এই গভীর অসুখ থেকে আমাদের বের করে আনতে পারে৷ পরবর্তী প্রজন্মকে দেশের প্রতি আরও দায়িত্বশীল করে তোলার দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে৷ এই দায়িত্ব যেন আমরা ভুলে না যাই৷

অনুষ্ঠান এছাড়া বক্তব্য রাখেন অল ত্রিপুরা বুক সেলার্স ও পাবলিশার্স এসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদাম সাহা, পাবলিশার্ল এন্ড বুক সেলার্স এসোসিয়েশনের সম্পাদক রাখাল মজুমদার, ত্রিপুরা পাবিলিশার্স গিল্ডের সম্পাদক রঘুনাথ সরকার৷ অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের সচিব এম এল দে৷ এই অনুষ্ঠানে আগরতলা বইমেলা ২০১৮ স্মারক গ্রন্থের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করেন রাজ্যপাল তথাগত রায়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *