BRAKING NEWS

হাওড়া সহ রাজ্যের কয়েকটি নদীর নাব্যতা বাড়ানোর উদ্যোগ এপ্রিলে, বিধানসভায় তথ্য

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ মার্চ৷৷ গোমতী, হাওড়া এবং অন্য আরও তিনটি নদীর নাব্যতা বাড়িয়ে এ নদীগুলির জল পানীয়জল সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করার জন্য রাজ্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে৷ ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে৷ এপ্রিল মাসে দিল্লিতে গেলে এ নিতে তদ্বির করা হবে৷ আজ রাজ্য বিধানসভায় বিধায়ক বিশ্ববন্ধু সেনের আনা একটি দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিশের উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব একথা বলেন৷ বিধায়ক বিশ্ববন্ধু সেনের আনা দৃষ্টি আকর্ষণী নোটিশটির বিষয়বস্তু ছিলো ত্রিপুরার পাহাড় সমতল সর্বত্র বসবাসকারীদের জন্য নিয়মিত পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহের লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে৷

এই নোটিশটির উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধি দপ্তরের মন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মণ জানান, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের শহর এলাকায় ৯৮.৫০ শতাংশ লোক এবং গ্রামীণ এলাকায় ৭৭ শতাংশ লোক পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল পাচ্ছেন৷ গ্রামীণ এলাকায় অবশিষ্ট ২৩ শতাংশ লোক যাদের এখনও পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি সেই সমস্ত অধিবাসীরা স্থানিক উৎস অর্থাৎ পাকা কুয়া, সিং কুয়া, হ্যন্ড পাম্প, মার্ক-২, মার্ক-৩ ইত্যাদির মাধ্যমে পানীয় জল সংগ্রহ করে থাকেন৷ গ্রামীণ এলাকায় মোট ২৪ হাজার ২৬২ টি স্থানিক উৎস আছে৷

পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধি দপ্তরের মন্ত্রী জানান, রাজ্যের পাহাড়, সমতল সর্বত্র বসবাসকারীদের জন্য নিয়মিত পরিস্রুত পানীয় জলের সুযোগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে পূর্ত (পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান) দপ্তর কাজ করে চলেছে৷ পঞ্চায়েত দপ্তরের সাথে যৌথ সমীক্ষা অনুযায়ী জল সরবরাহের সাপেক্ষে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় মোট ৮৭২৩ টি পাড়া আছে৷ ২০১৮ সনের ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত সকল উৎস দ্বারা সরবরাহকৃত পানীয় জলের সমীক্ষায় পরিমাণগতভাবে ৬১১৩ টি পাড়া পুরোপুরি পানীয় জল সরবরাহের আওতাধীন, ২৫৯২টি আংশিক আওতাধীন এবং ১৮টি পাড়া স্লিপ ব্যাক পাড়াতে পরিণত হয়েে৷ জলের উৎস শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এই ১৮টি পাড়া স্লিপ ব্যাক-এ রূপান্তরিত হয়েছে যেখানে জনপ্রতি ১০ লিটারের নীচে পানীয় জল উপলব্ধ আছে৷ দপ্তর অতি দ্রুততার সঙ্গে এই পাড়াগুলি দদ্মজল সরবরাহের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচেছ৷ বর্তমানে রাজ্যের কোনও পাড়াই জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ গ্রামীণ এলাকায় যে পাড়াগুলি এখন পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা যায়নি সেইসব পাড়াগুলির অধিবাসীরা স্থানিক উৎস থেকে পানীয় জল সংগ্রহ করে থাকেন৷ শ্রী রায় বর্মণ জানান, রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় ১৬৯৬ টি গভীর নলকূপ, ২৮৬০ টি ছোট ব্যাসের গভীর নলকূপ, ৩৪ টি ভূ-পৃষ্ঠস্থ জল পরিশোধন প্রকল্প, ২৮টি ভূ-গর্ভস্থ জল পরিশোধন প্রকল্প, ২৩৭ টি ইনোভেটিভ প্রকল্প এবং ৫০টি উচ্চ জলাধারের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়৷ এই সব চালু প্রকল্পে মোট পাইপ লাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় ৯৭০৭.০০ কিমি৷

তাছাড়া, জলের গুণগতমান বাড়ানোর জন্য গ্রামীণ এলাকায় গভীর নলকূপের সাথে যুক্ত করে ৭৭৬ টি লৌহদূরীকরণ প্রকল্প চালু অবস্থায় আছে৷

তিনি জানান, রাজ্যের পুর নিগম, পুরসভা ও নগর পঞ্চায়েত এলাকায় সর্বত্রই পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়ে থাকে৷ মোহনপুর, বিশালগড়, সাব্রুম ব্যতীত সবগুলি শহর এলাকায় ভূ-পৃষ্ঠস্থ জল পরিশোধন প্রকল্পের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়ে থাকে৷ বিশালগড়ের ভূ-পৃষ্ঠস্থ জল পরিশোধন প্রকল্পের কাজ খুব শীঘ্রই শেষ হবে বলে আশা করা যায়৷ সাব্রুমে ভূ-গর্ভস্থ জল পরিশোধন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে৷ বর্তমানে রাজ্যের শহর এলাকায় ১৭১ টি গভীর নলকূপ, ৮৫ টি ছোট ব্যাসের গভীর নলকূপ, ১৮টি ভূ-পৃষ্ঠস্থ জল পরিশোধন প্রকল্প, ৩টি ভূ-গর্ভস্থ জল পরিশোধন প্রকল্প, ৬৫ টি উচ্চ জলাধার এবং ৩টি ভূ-গর্ভস্থ জলধারের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করা হয়৷ এইসব চালু প্রকল্পে মোট পাইপ লাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় ১২৪১৮.০০ কিমি৷ তাছাড়া, জলের গণগতমান বাড়ানোর জন্য শহর এলাকায় গভীর নলকূপের সাথে যুক্ত করে ৬৫ টি লৌহদূরীকরণ প্রকল্প তৈরী করা হয়েছে৷

গ্রামাঞ্চলে শুখা মরশুমে ভূ-গর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাওয়ার ফলে কিছু কিছু স্পট সোর্স শুকিয়ে যায় বা খারাপ হয়ে যায় এবং এ ধরণের সমস্যা দেখা দিলে দপ্তর সেগুলি নিজেরা বা ব্লকের মাধ্যমে সারাই করার ব্যবস্থা রেখেছে৷ জলস্তর নেমে যাওয়ার ফলে যেসব পাড়ায় স্থানিক উৎস কার্যকরী রাখা সম্ভব হয় না সেইসব পাড়ায় ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে পানীয় জলের যোগান দেওয়া হয়৷

 

পানীয় জল ও স্বাস্থ্যবিধি দপ্তরের মন্ত্রী জানান, দপ্তর রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় সব পাড়াতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ করার জন্য বদ্ধপরিকর৷ সেই অনুযায়ী আংশিকভাবে জল সরবরাহকৃত ২৫৯২ টি এবং ১৮টি স্লিপ ব্যাক পাড়াকে সম্পূর্ণভাবে জল সরবরাহের আওতাধীন করার জন্য পঞ্চবর্ষীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করে চলছে৷ সেই পরিকল্পনা অনুসারে ত্রিপুরা রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ জলস্তর গভীরে থাকায় নর্মাল রিগ দিয়ে খনন করে পানীয় জল পাওয়া যায় না৷ ঐ সমস্ত এলাকায় ডিপ ড্রিলিং এর মাধ্যমে হাই পাওয়ার রিগ দিয়ে ডিপটিউবওয়েল খননের কাজ চলছে৷ রাজ্যে এই পর্যন্ত ৩৫০ টি স্থানে ডিপ ড্রিলিং এর মাধ্যমে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে এবং বেশ কিছু জায়গায় কাজ এগিয়ে চলেছে৷

রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় সব পাড়াতে পাইপ লাইনের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করার জন্য পঞ্চবার্ষিকী কার্যকরী পরিকল্পনা গ্রহণ করে ভারত সরকারের নিটক জমা দেওয়া হয়েছে৷ যার মধ্যে ১২৪৯ টি গভীর নলকূপ, ১১০৯ টি ছোট ব্যাসের গভীর নলকূপ, ২৮টি ভূ-পৃষ্ঠস্থ জল পরিশোধন প্রকল্প ৮২ টি ইনোভেটিভ প্রকল্পের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করা হয়েছে৷ এই সব প্রকল্প রূপায়িত করতে মোট পাইপ লাইনের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭২৬০.০০ কিমি লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করা হয়েছে৷ তাছাড়া জলের গণগতমান বাড়ানোর জন্য গ্রামীণ এলাকায় গভীর নলকূপের সাথে যুক্ত করে ৭০০ টি লৌহদূরীকরণ প্রকল্প ও ৩৫০ টি ভূ-পৃষ্ঠস্থ জল পরিশোধন প্রকল্প নির্মাণ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ যার আনুমানিক ব্যয় বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১৮৬০.৮০ কোটি টাকা৷

তিনি জানান, আগামী অর্থবর্ষে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ সালে ১৮০টি ডিপ টিউবওয়েল খনন, ১৮০ টি টিপটিউবওয়েল চালু করা, ৪৪টি এস বি ডি টি ডব্লিউ, ৭টি সার্ফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ৬০ টি আই আর পি, ৫০টি গ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, ১৬টি ইনোভেটিভ প্রকল্প, ১৫২০,০০ কিমি পাইপ লাইন সম্প্রসারণ ও ১২১ টি স্থানিক উৎস তৈরীর লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে৷

রাজ্যের প্রতিটি পাড়ায় সম্পূর্ণভাবে পরিশোধিত পানীয় জল সরবরাহ করার লক্ষ্যে ঝর্ণা, নদী, ছড়া, জলাধারকে কাজে লাগিয়ে বেশ কিছু ছোট ছোট ইনোভেটিভ/পানীয় জল পরিশোধন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে৷ এর মধ্যে আনন্দ বাজার, গছিরাম পাড়া, ধূমাছড়া, মানিকপুর, ছামনু, গঙ্গানগর, কিল্লা, যতনবাড়ী, অম্পি, তৈদু, খুমলুং, ৮২ মাইল (নালটাকা), পূর্ব রামচন্দ্রঘাট, চন্দ্রনাথ ঠাকুর পাড়া, মোহনভোগ, বড়পাথরি, চন্ডীছড়া, ছনিছড়া, তালক্সি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য৷ এছাড়া আরও কিছু জায়গায় জল পরিশোধন প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে৷ এর মধ্যে কল্যাণপুর, উত্তর দশদা, খেদাছড়া, গৌরনগর, ফটিকরায়, উত্তর মাছমারা, শ্রীমন্তপুর, কাকড়াবন, চুরাইবাড়ি, বেলিয়ানচিপ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখ্যযোগ্য৷

রাজ্য সরকার বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করে দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে পানীয় জল সরবরাহ করার লক্ষ্যে শীঘ্রই পরিকল্পনা গ্রহণ করবে এবং রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রিভার্স ওসমোসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জল পরিশোধন করে ওয়াটার এ টি এম এর স্থাপন করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হবে৷

তাছাড়া উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন পরিষদের কাছে থেকে ২৩ টি গভীর নলকূপ খনন করার অনুমোদন পাওয়া গেছে৷ ত্রিপুরা রাজ্যের ৩টি জেলা যথা-পশ্চিম ত্রিপুরা, খোয়াই ও সিপাহীজলা জেলায় এই ২৩টি গভীর নলকূপ খনন এবং চালু করার কাজ এগিয়ে চলেছে৷ তিনি জানান, রাজ্যের স্ব-শাসিত জেলা পরিষদ এলাকায় গভীর নলকূপ খনন করার জন্য নীতি আয়োগ থেকে এই অর্থবর্ষে ৫০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে৷ এই অর্থ দিয়ে এখন পর্যন্ত ৬০ টি গভীর নলকূপ খনন এবং চালু করার কাজ এগিয়ে চলছে৷ এছাড়া আরও ১২টি স্থানে গভীর নলকূপ খননের কাজ এগিয়ে চলছে৷ সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প থেকেও ৫টি গভীর নলকূপ খনন ও চালু করার কাজ এগিয়ে চলেছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *