BRAKING NEWS

অাসন্ন লোকসভা নির্বাচন নয়, জনমুখী ও সার্বিক উন্নয়নের প্রস্তাব এবারের সাধারণ বাজেটে

নয়াদিল্লি, ১ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : দেশের অাম অাদমীর সুবিধা ও উন্নয়নের ধারাকে ধরে রাখার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এদিন বেলা ১১টা নাগাদ লোকসভায় অার্থিক বাজেট পেশ করেন। টানা এক ঘন্টা ৪৫ মিনিট ধরে তিনি এই বাজেট পেশ করেন। এর অাগে সকাল ১০টা ৪৮ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ান সংসদে পৌঁছান। তার অাগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি দেশের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ-র সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর সংসদ ভবনে পৌঁছান কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। পরে স্পিকার সুমিত্রা মহাজনের অনুমতি নিয়ে বেলা ১১টা নাগাদ লোকসভায় অার্থিক বাজেট পাঠ করা শুরু করেন।
এবারের বাজেটে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কৃষি ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে। প্রত্যাশা মত বাজেটে কৃষি তথা গ্রামোন্নয়নে এবার জোর দিয়েছে মোদী সরকার। শুধু ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট নয়, দেশের সর্বস্তরের মানুষের সুবিধার কথা ভেবেই এবারের সাধারণ বাজেট বলে বিশেষজ্ঞ মহলের ধারনা। অার সেদিকে খেয়াল রেখে কৃষি তথা গ্রামোন্নয়নে জোর দেওয়া হবে মোদী সরকারের এই পূর্ণাঙ্গ বাজেটে। এবারের বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছে একগুচ্ছ প্রস্তাব। বাজেট পেশ করার সময় হাসি মুখে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, “এটা ঘোষণা করতে পেরে আমি খুশি যে, আসন্ন খরিফ মরশুমে উৎপাদিত ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়িয়ে দেড় গুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।”
এছাড়া জোর দেওয়া হয়েছে গ্রামীণ ভারতের স্যানিটারি ব্যবস্থাতেও। গ্রামাঞ্চলে প্রকাশ্যে মলত্যাগ বন্ধ করতে আগামী দু’বছরে অতিরিক্ত ২ কোটি টয়লেট নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।সর্বশিক্ষা অভিযানের মত সব মানুষের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে দুর্দান্ত প্রকল্প এনেছে সরকার। নাম দেওয়া হয়েছে ‘আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প’। এদিকে, এবারের বাজেটে করকাঠামো অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাজেট পেশের সময় সেনার আত্মত্যাগের কথাও তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
এবারের বাজেট অনেক বেশি দেশের প্রান্তিক মানুষের কথা ভেবে তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, পরিবেশে, তপশিলি জাতি এবং উপজাতির উন্নয়নের উপর। এছাড়া বাজেট ঘোষণার পরই সস্তা হল পেট্রোল এবং ডিজেল। এক ধাক্কায় লিটার পিছু ২ টাকা কমে গেল পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম। ২০১৮-২০১৯ অর্থবর্ষের বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি অন্তঃশুল্ক কমানোর ফলেই সস্তা হল পেট্রোল এবং ডিজেলের দাম। এর ফলে কলকাতায় পেট্রোলের দাম হল লিটার পিছু ৭৩.৭৪ টাকা। আর ডিজেলের দাম দাঁড়াল ৬৪.৭৮ টাকা। এদিন সংসদে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ঘোষণা করেছেন, মোবাইল ফোন, মোবাইল ফোনের কিছু যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। একই হারে টেলিভিশনের কিছু যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্কও বাড়িয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। যদিও অর্থমন্ত্রীর দাবি, আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির ফলে দেশে মোবাইল এবং টেলিভিশনের উৎপাদন বাড়বে। ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগকে আরও চাঙ্গা করতে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির আশায় মোবাইল ফোনের উপর কাস্টমস ডিউটি ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হল জেটলির বাজেটে। জেটলির বাজেটে দাম বাড়ছে, ইলেকট্রিকি সিটি বিল, ক্রেডিট কার্ডে কেনাকাটা, ভোজ্য তেল, ভেজিটেবিল জুস, জুতো এবং মোমবাতির।
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বড় ঘোষণা করে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, সরকারি মেডিক্ল্যামে গরিবদের জন্য বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিমা দেওয়া হবে। এর ফলে উপকৃত হবেন ৫০ কোটি দুঃস্থ মানুষ। হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিত্সার জন্য রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনায় বর্তমানে তিরিশ হাজার টাকা করে পান গরিবরা।এবার ন্যাশনাল হেলথ প্রোটেকশন স্কিমে ১০ কোটি গরিব পরিবার, ৫০ কোটি গরিব মানুষ বছরে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা করে পাবেন।
এদিন এই বাজেট প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানান, এটি একটি বৃহৎ বাজেট। যেখানে গরিব, কৃষক এবং আদিবাসীদের জন্য অনেক ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্বের আর্থিক শক্তি হিসেবে ভারতের অবস্থানকে আরও বেশি শক্তিশালী করল এই বাজেট। কেন্দ্রীয়মন্ত্রী এম জে আকবর জানান, বাজেটে ১ ঘন্টা ধার্য করা ছিল গরিবদের জন্য। এটি অবশ্যই ঐতিহাসিক ঘটনায়। বিরোধীরা খুব বেশি নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। বাজেট প্রসঙ্গে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, দেশের গরিব, গ্রাম এবং কৃষক, বয়স্কদের কথা মাথায় রেখে উন্নতমানের যোজনা রয়েছে বাজেটে। এর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাই। শুভেচ্ছা জানাই অর্থমন্ত্রীকেও। এই বাজেট পেশকে ঐতিহাসিক আখ্যা দিয়ে কেন্দ্রীয়মন্ত্রী নীতিন গডকরি বলেন দেশের ১০ কোটি পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বীমা একটি বিশাল উদ্যোগ।
এই বিষয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেভেগোউডা বলেন, অর্থমন্ত্রী কৃষকদের অবস্থার উন্নতির জন্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কৃষকদের এবং গ্রামীণ মানুষদের সমস্যা অনেক বেশি। বাজেটে যে দাওয়াই দেওয়া হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। এই বাজেট ভোটমুখীও নয়, আবার একইসঙ্গে সব শ্রেণির মানুষের কথা মাথায় রেখেই করা হয়েছে এই বাজেট বলে মন্তব্য করেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর মতে, ‘ভোটের দিকে তাকিয়ে বাজেট করা হয়েছে একথা বলা যাবে না।’ অর্থমন্ত্রী ‘নিউ ইন্ডিয়া’র কথা বলে বাজেট পেশ শেষ করেছেন সেই ‘নিউ ইন্ডিয়া’র মধ্যে গ্রামগঞ্জের মানুষও পড়েন কৃষকরা আত্মহত্যা করছে। তাই তাদের কথাও ভাবতে হচ্ছে কেন্দ্রকে’।
এছাড়া জোর দেওয়া হয়েছে গ্রামীণ ভারতের স্যানিটারি ব্যবস্থাতেও। গ্রামাঞ্চলে প্রকাশ্যে মলত্যাগ বন্ধ করতে আগামী দু’বছরে অতিরিক্ত ২ কোটি টয়লেট নির্মাণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।সর্বশিক্ষা অভিযানের মত সব মানুষের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে দুর্দান্ত প্রকল্প এনেছে সরকার। নাম দেওয়া হয়েছে ‘আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প’। এদিকে, এবারের বাজেটে করকাঠামো অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বাজেট পেশের সময় সেনার আত্মত্যাগের কথাও তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।
কেন্দ্রীয় বাজেটের বিরোধিতা করে কংগ্রেসের মুখপাত্র মণীষ তিওয়ারি বলেন, ‘‘সরকার কৃষক ও অন্যান্য প্রান্তিক শ্রেণির সমাজের প্রতিনিধি হয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছে কেন্দ্র৷ কিন্তু, বাস্তবের সঙ্গে জেটলির বাজেট কোনও মিল নেই৷’ কংগ্রেসের সঙ্গে সুর মিলিয়ে সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির মন্তব্য, ‘‘এই বাজেটে বাস্তব ভিত্তি নেই৷’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *