কলকাতা, ২১ নভেম্বর ( হি.স.): নারদকাণ্ডে অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিদের ভয়েস নমুনা সংগ্রহ করতে পারবে সি বি আই । কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার
আবেদন মঞ্জুর করে ব্যাঙ্কশালের বিশেষ সি বি আই আদালত । তদন্তে নেমে নারদকাণ্ডের পুনর্নির্মাণ করে সি বি আই । কেন্দ্রীয় ফরেনসিক ল্যাব থেকে সেই ফুটেজের রিপোর্ট সি বি আই-র হাতে এসেছে। জানা গেছে, নারদ ফুটেজের সঙ্গে ৯ জনের ফুটেজের মিল পাওয়া গেছে এই রিপোর্টে । এরপরই সি বি আই ভয়েস নমুনা সংগ্রহ করতে চেয়ে নোটিশ পাঠায় অভিযুক্তদের।
নারদ মামলায় ১৩ জন অভিযুক্তের নামে এফ আই আর দায়ের করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা । তাঁদের মধ্যে কাউকে কাউকে ছদ্মবেশী সাংবাদিক ম্যাথুর থেকে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে । আবার কাউকে দেখা যায়নি । ইতিমধ্যে, তদন্তকারী সংস্থা লেনদেন স্থল ঘুরে ছবি তোলার কাজ করছেন । যার মধ্যে ১১ টি জায়গা ঘুরে ছবি তোলার কাজ শেষ হয়েছে । সি বি আই সূত্রের খবর, ১৩ টি জায়গা ঘুরে দেখার পর সেই ছবিগুলি ফরেন্সিক ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হতে পারে । ফুটেজের সঙ্গে তদন্তকারীদের তোলা ছবির মধ্যে মিল আছে কি না, তা সুনিশ্চিত করার জন্য । এবার ভয়েস টেস্ট করতে চায় সি বি আই ।
ইতিমধ্যে মুকুল রায়, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সৌগত রায় ভয়েস টেস্ট দিয়েছেন । প্রয়াত তৃণমূল সাংসদ সুলতান আহমেদও ভয়েস টেস্ট দিয়েছিলেন । তবে বাকি অভিযুক্তদের নোটিশ পাঠানো হলেও তাঁরা ভয়েস টেস্ট দিতে রাজি হননি । এই ঘটনার পর আদালতের দ্বারস্থ হয় সি বি আই । কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, আদালতের নির্দেশের পর নারদকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজে অভিযুক্তদের ভয়েস মিলিয়ে দেখা হবে । শীঘ্রই নমুনা সংগ্রহ করতে অভিযুক্তদের নোটিশ পাঠানো হবে ।
তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, গোপন ক্যামেরা অভিযানটি হয়েছিল ২০১৪ সালে। গত তিনবছরে অনেক কিছুই বদলেছে। সিবিআই সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে যে ১১টি জায়গা ঘুরে দেখা হয়েছে, তার মধ্যে দু’তিনটি জায়গায় লেনদেনস্থলের চরিত্র বদল হয়েছে । তদন্তকারীদের আরও দাবি, ফুটেজে একজন মন্ত্রীকে তাঁর ঘরের যেখানে বসে টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল, সেই জায়গায় ইটের গাঁথনি দিয়ে নকশা বানানো হয়েছে । এই রকম দু-তিনটি জায়গা রয়েছে । সেই কারণেই ফরেন্সিক পরীক্ষা করানো হতে পারে । সি বি আইয়ের এক আধিকারিকের কথায়, ‘তদন্তকারীদের তোলা ছবির সঙ্গে ফুটেজের মিল না থাকলে প্রয়োজনে আবার ঘটনাস্থলে গিয়ে ছবি তোলা হতে পারে’।
পাশাপাশি, ১৩ টি জায়গার মধ্যে এখনও দু-টি জায়গা ঘুরে দেখার প্রক্রিয়া বাকি রয়েছে । যার মধ্যে একটি প্রাক্তন সাংসদ মুকুল রায়ের সঙ্গে ম্যাথুর এবং দ্বিতীয়টি বর্ধমানের প্রাক্তন পুলিশ সুপার এস এম এইচ মির্জার সঙ্গে নারদ কর্তার সাক্ষাৎ স্থল । সি বি আই সূত্রের খবর, নারদ মামলার তদন্তকারী অফিসার অন্য একটি মামলার জন্য শহরের বাইরে রয়েছেন । তিনি কলকাতায় ফিরলেই সেই প্রক্তিয়া আবার শুরু হওয়ার কথা ।
এদিকে, চলতি মসের ৬ তারিখেই নারদ তদন্তের পুনর্নির্মাণের অনুমতি দিয়েছেন বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুনাল আগরয়াল । নারদ কান্ডে তখনকার বর্ধমানের পুলিশ সুপার এস এন এইচ মির্জা ম্যাথু স্যামুয়ালের কাছ থেকে এস পি বাংলোতে বসেই টাকা নেন । সেই ঘটনার পুনর্নির্মাণে সম্মতি দিয়ে সি বি আই-কে আজ মঙ্গলবার ই-মেল করা হয় বর্ধমানের এস পি অফিস থেকে । আগামি সপ্তাহে সি বি আইকে পুনর্নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে । আগে দু’বার আবেদন জানায় সি বি আই । কিন্তু পুনর্নির্মাণের অনুমতি দেননি পুলিশ সুপার ।
গত ২৪শে অক্টোবর নারদকাণ্ডে বর্ধমানের পলিশ সুপারের দফতরে পুনর্নির্মাণের অনুমতি চেয়ে মেল করে সি বি আই । বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুনাল আগরয়ালের কাছে জানতে চাওয়া হয়, কবে তার বাংলোতে গিয়ে একঘটনার পুনর্নির্মাণ সম্ভব । কেন না, ২০১৪ সালের ২৫ শে এপ্রিল এলগিন রোডের ভাড়া বাড়িতেই বসেই মুকুল রায় ম্যাথু স্যামুয়ালকে বলেছিলেন, আমি নিজের হাতে টাকা নিই না ৷ আপনি বর্ধমানে গিয়ে পুলিশ সুপার মির্জার সঙ্গে টাকার ব্যাপারে কথা বলুন ৷ তারপরই ম্যাথু তখনকার বর্ধমানের পুলিশ সুপার এস এন এইচ মির্জার বাংলোতে যান । সেখানকার বৈঠকখানায় বসে টাকা তুলে দেন মির্জার হাতে । মুকুল রায়ের কথা মতোই এসএমএইচ মির্জার সঙ্গে দেখা করেছিলেন সাংবাদিক ম্যাথু । এর আগে কলকাতায় নারদ কাণ্ডের তদন্তে সি বি আই এবং ই ডি-র আধিকারিকদের সামনে হাজিরা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন এস এম এইচ মির্জা । সূত্রের খবর কেন টাকা নিয়েছিলেন, কোন কাজে ব্যবহার করা হয়েছিল সেই টাকা, সেইসব প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল আই পি এস মির্জাকে । তাই, এখন ওই বাংলোর সেই বৈঠকখানায় ঘটনার পুনর্গঠন করতে চায় সি বি আই । তার জেরেই মেল করে সি বি আই । মির্জা অবশ্য এখন বারাক্পুরের পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে এস টি এফের কমান্ডেন্ট । তবে তাকে এক পুলিশ কর্মী আত্মঘাতী হবার ঘটনায় কিছুদিন আগে সাসপেন্ড করেছে নবান্ন । অবশ্য, মুকুল রায় জানিয়েছেন, ‘তিনি কোনও টাকা নেন নি । মির্জাকেও টাকা নিতে বলেন নি । মির্জা যা করেছে নিজের দায়িত্বে করেছে । মির্জা বুঝবে’ ।-
2017-11-21
