নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ অক্টোবর৷৷ ব্যর্থতা ঢাকতে সাফাইয়ের চড়া দাম দিতে হবে, তা হয়তোবা ভাবেননি ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসার অঞ্জন কুমার ঘোষ৷ পরিকাঠামোর অভাবে দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলি আন্তর্জাতিক মানের হতে পারছেনা, প্রফেসার ঘোষের এই বক্তব্যের জবাবে কার্যত তাঁকে ভৎর্সনা করেছেন রাজ্যপাল তথাগত রায়৷ তাঁর কথায়, পরিকাঠামো কিছুতেই মৌলিক চাহিদা হতে পারেনা৷ ফ্যাকাল্টিরাই আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মূল কারিগর৷ তাই, রাজ্যপাল ফ্যাকাল্টিদের উৎকর্ষতা বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন৷
শুক্রবার ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির অটোমেশন এবং ডিজিটাইজেশন প্রোগ্রাম উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে উপাচার্য প্রফেসার অঞ্জন কুমার বলেন, দেশে ৮ শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে৷ কিন্তু কোনটাই আন্তর্জাতিক মানের হতে পারেনি৷ ভারতীয়রা বিদেশে গিয়ে রিসার্সের মাধ্যমে বহু সুনাম অর্জন করছেন৷ কিন্তু এদেশে রিসার্সের পরিকাঠামো খুবই দুর্বল৷ বিশ্ববিদ্যালয় গুলির লাইব্রেরির পরিকাঠামোর খুবই দুর্বল৷ যারফলে রিসার্স করার ক্ষেত্রে এদেশে তেমন সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়না৷ তাই, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও আন্তর্জাতিক মানের হতে পারছেনা৷
প্রফেসার ঘোষের এই যুক্তি সহজভাবে নেননি রাজ্যপাল তথাগত রায়৷ তাঁর বক্তব্য, ফ্যাকাল্টি ছাড়া আর কোন কিছুই বিশ্ববিদ্যালয়কে সাফল্যের চূড়ায় নিয়ে যেতে পারবেনা৷ এদিন তিনি বলেন, একমাত্র ফ্যাকাল্টিদের সহায়তায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় উন্নতি করতে পারে৷ যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত এবং উৎকর্ষ ফ্যাকাল্টির প্রয়োজন রয়েছে৷ জ্ঞান অর্জন করা এবং তা বিলিয়ে দেওয়া ফ্যাকাল্টিরা সঠিক করতে না পারলে শিক্ষার উন্নতি কিছুতেই সম্ভব নয়৷
এদিন তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, ফ্যাকাল্টিরা শুধু মনেকরেন, তাদের ভালো বেতনক্রম, আরামদায়ক জীবনযাত্রা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা মিললেই যথেষ্ট৷ কিন্তু, তাদের মৌলিক যে ভূমিকা পালন করা উচিত সেখানেই বিস্তর ঘাটতি রয়ে যায়৷ রাজ্যপাল এদিন অনাবাসী ভারতীয় বন্ধুর অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, অনেকদিন আগে বিদেশ থেকে আমার এক পরিচিত এদেশে ফিরে এসে টের পান এখানে বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে কেউই কাজ করতে রাজি নন৷ একথা বলে রাজ্যপাল বোঝাতে চেয়েছেন, কেউই এখানে হিসেবের বাইরে কোন কাজ করতে চাননা৷
এদিন রাজ্যপাল বলেন, আরেকটি বিষয় যা বিশ্ববিদ্যালয়ের গরিমায় আঘাত করে, তা হল শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি উন্নতির পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়৷ ফ্যাকাল্টিরা রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়লে মূল উদ্দেশ্য বিফলে যায়৷ এদিন তিনি আরও একটি বিষয়ে জোড় দেন, তা হল বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ফ্যাকাল্টিদের বাছাই প্রক্রিয়া৷ রাজ্যপাল বলেন, ফ্যাকাল্টিদের বাছাই করার ক্ষেত্রেও উৎকর্ষতার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে৷ তাঁর কটাক্ষ, অনেক ক্ষেত্রে ফ্যাকাল্টি বাছাই প্রক্রিয়ায় আমলাতন্ত্রের বিরাট প্রভাব লক্ষ্য করা যায়৷ তাই, রাজ্যপাল পরামর্শ দিয়েছেন, এই সমস্তকিছু থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে দূরে রাখা শ্রেয় হবে৷
এদিকে, ই-বুক নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে প্রফেসার ঘোষের বক্তব্যেরও কড়া জবাব দিয়েছেন রাজ্যপাল৷ তিনি বলেন, ই-বুক ক্রয় করার ক্ষেত্রে বহু অভিযোগ উঠেছে৷ সেসমস্ত অভিযোগ তাঁর দৃষ্টিতে নেওয়া হয়েছে৷ রাজ্যপালের বক্তব্য, এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে৷ কিন্তু, এধরনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনোই কাম্য নয়৷
2017-10-28

