মুকুল প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি দু ভাগ

কলকাতা, ৯ অক্টোবর, ( হি.স.): মুকুল রায়ের দলে যোগ দেওয়ার প্রশ্নে রাজ্য বি জে পি এখন পরিস্কার দু ভাগে ভাগ হয়ে গেছে । রাজ্য বিজেপি-র প্রাক্তন সভাপতি রাহুল সিনহা মুকুল রায়ের বি জে পি-তে যোগদানকে ‘অবাস্তব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। আবার বর্তমান সভাপতি দিলিপ ঘোষ বলেছেন, দলের দরজা সকলের জন্য খোলা। পাশাপাশি, মুকুল রায়ের বি জে পি-তে যাওয়ার পথে বড় কাঁটা সংঘের অবস্থান । তাঁকে নিয়ে বি জে পি এবং সংঘের পরস্পর বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট । আর তা নিয়ে বেশ চিন্তায় রয়েছেন মুকুল রায় নিজেও।
কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরির পর বি জে পি নেতা তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে দেখা করেন মুকুল রায় । সূত্রের খবর, সেখানে জেটলিও মুকুল রায়কে কোনও আশার কথা শোনাতে পারেননি । জেটলি নাকি মুকুলকে জানিয়েছেন, তাঁর হাতে এখন বিষয়টা নেই । তাই তিনি তাঁকে দলে যোগদান করানোর বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিতে পারছেন না । মুকুলকে নিয়ে সংঘ পরিবার নিরুত্তাপ। সংঘ ঘনিষ্ঠ বি জে পি-র সাংগঠনিক সম্পাদক রামলাল মুকুলের সঙ্গে বৈঠক এড়িয়েছেন । মুকুলকে রাম মাধবের সঙ্গে বৈঠকের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি ।
বি জে পি-র অন্দরমহলের খবর, রাহুলই নাকি মুকুলকে দলে না নিতে প্রস্তাব দিয়েছেন শীর্ষ নেতৃত্বকে । দুর্নীতির প্রশ্নে মুকুলকে নেওয়া উচিত হবে না বলে মনে করেন তিনি । এবিষয়ে রাহুলের বক্তব্য, তাহলে মানুষ ভাববে আমরাও আপোস করি । সোমবার রাহুলবাবু সাফ জানিয়ে দেন, সবটাই জল্পনা । মুকুল রায়ের তরফে এমন কোনও প্রস্তাব আসেনি । বলেন, ‘এগুলো অবান্তর প্রশ্ন। কারণ আমাদের কাছে কোনওরকম প্রস্তাব নেই। তিনি দল থেকে বেরোবেন, ঢুকবেন বা থাকবেন, সেটা তাঁকেই ঠিক করতে হবে । তাই এটা নিয়ে বক্তব্য রাখারও কোনও অবকাশ নেই’। অবশ্য এও বলেন, ‘মুকুল রায়ের দল ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তৃণমূলের বিনাশ শুরু হয়েছে। আগামী দিনে আরও হবে’। শুধু মুকুল রায় নয়, ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফেও কোনও প্রস্তাব আসেনি বলে জানিয়েছেন রাহুলবাবু ।
মুকুল রায়কে নিয়ে দলের তাঁর অবস্থান জানতে চাওয়া হলে বি জে পি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিং বলেন,’আমি মুকুল রায়ের দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়ে ভাগ মুকুল ভাগ বলেছিলাম। দল সেই স্লোগানকে সমর্থন করেছিল’। অনেকদিন তা নিয়ে প্রচারও করেছিলাম । এখন সেই ‘দুর্নীতিবাজকে’ দলে নিলে পশ্চিমবঙ্গে দলের ক্ষতি হবে’।
শোনা যাচ্ছে সংঘের তরফে বি জে পি নেতৃত্বকে নাকি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মুকুলকে শেষ পর্যন্ত দলে নিলেও, তাঁকে রাজ্য সভাপতি বা কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পদে বসানো যাবে না। পশ্চিমবঙ্গে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকের পদটি এখনও ফাঁকা রয়েছে। সেই পদও মুকুলকে দেওয়া চলবে না। কারণ ওই পদে সংঘের লোককে বসানো হয়। মোটকথা ভাবমূর্তির সঙ্গে মানানসই কোনও পদ আপাতত মুকুলকে দিতে রাজি নয় সংঘ পরিবার। ফলে নতুন দল গড়া ছাড়া মুকুলের কাছে আর কোনও পথ খোলা থাকছে না। যদিও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বহিষ্কৃত তৃণমূল সাংসদ।
এদিকে, মুকুল রায়ের বি জে পি -তে যোগদানের বিষয়ে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সোমবার বলেন, ‘আমার কাছে কোনও খবর নেই, উনি কবে বি জে পি-তে আসবেন, বা আদৌ আসবেন কি না। যেদিন বলবেন, আমি বি জে পি-তে যাব। সেদিন আমরা বসে বৈঠকে বসে যাব। নেব কি নেব না, নিলেও কবে নেব ঠিক করব’। তিনি বলেন,’যেদিন উনি অফিশিয়ালি বলে দেবেন, আমি বি জে পি করতে চাই। তার সম্বন্ধে ভেবেচিন্তে দল যেটা সিদ্ধান্ত নেবে, ঘোষণা করবে’। এর আগেই শুভেন্দু অধিকারী সম্পর্কে প্রশংসা করেছিলেন বি জে পি-র রাজ্য সভাপতি । যদিও আজ শুভেন্দু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুভেন্দুর নামটা মিডিয়াতে শুনেছি ।
বি জে পি-র রাজ্য সভাপতি এদিন বলেন, ‘আমি এক সময় তৃণমূলকে ভাগ বলেছি । আর আমি মুকুলবাবুকে ক্লিনচিট দেওয়ার কে ? সেটাতো দেবে সি বি আই বা কোর্ট । তবে, আমাদের দরজা সবার জন্য খোলা আছে। কিন্তু, দরজাতে নেটও লাগানো আছে’ ।