মণীষীদের জীবনাদর্শ আরও বেশী করে অধ্যয়নের উপর গুরুত্বারোপ শিক্ষামন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ সেপ্ঢেম্বর৷৷ শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী ছাত্র সমাজ কে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়, রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ মণীষীদের জীবনাদর্শ আরও বেশী করে অধ্যয়ন করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন৷ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এই মণীষীর একাধারে ছিলেন সমাজ সংস্কারক, সাহিত্যিক ও দেশ প্রেমিক৷ তাই ছাত্র সমাজকে তাঁদের পথ অনুসরণ করতে হবে৷ আজ রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের দ্বিতীয় প্রেক্ষাগৃহে রাজ্য ভিত্তিক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে তিনি এই কথা বলেন৷ বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷ প্রদীপ জ্বেলে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন৷ তিনি বলেন, কেবল রাজধানী আগরতলায় নয়, এই মণীষীর ১৯৮তম জন্মজয়ন্তী আজ রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতেও পালিত হচ্ছে৷ আগামী অক্টোবর মাসে সব বিদ্যালয়ে তাঁর জন্মজয়ন্তী পালন করা হবে৷
শিক্ষামন্ত্রী তপন চক্রবর্তী বলেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবন ও আদর্শ ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিয়ত অনুসরণ করা প্রয়োজন৷ তাঁর ভাবনা কি ছিল, সে সময় ব্রিটিশ শাসিত ভারতকে মুক্ত করতে তাঁর লেখনী কি ছিল সে সম্পর্কে আজকের প্রজন্মকে জানজ্রেত হবে৷ তিনি চেয়েছিলেন সবার জন শিক্ষা৷ তিনি বলতেন মা বাবা হলেন সন্তান- সন্ততির প্রধান ও প্রথম শিক্ষক৷ চাই মাতৃভাষায় শিক্ষা৷ চাই ইংরেজী ভাষাতেও শিক্ষা৷ পৃথিবীকে জানতে হলে, অংক, বিজ্ঞান, ইংরেজী, ভূগোল, ইতিহাস সব বিষয়ে জানতে হবে৷ নারী শিক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে হবে৷ বিদ্যাসাগরের এই সুচিন্তিত অভিমত আজো কেউ লন্ডন করতে পারেনি৷ কিন্তু তাঁর চিন্তা ভাবনা এত বছরে আমরা যদি কার্যকর করতে পারতাম তাহলে ভারতবর্ষ আরও এগিয়ে যেতে পারতো৷ শিক্ষামন্ত্রী বলেন, স্বাধীন ভারতে শিক্ষার জন্য বহু কমিশন গঠিত হয়েছে৷ কিন্তু শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন হয়নি৷ আজ দেশ কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতার কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে৷ কে কোন ধর্ম পালন করবেন, কি খাবেন, কি পোশাক পরিধান করবেন তা বলে দেওয়া হচ্ছে৷ এটা ঠিক নয়৷ তাই ছাত্র সমাজকে মণীষীদের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে৷
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী ভানুলাল সাহা বলেন, আমি কেবল আমার জন্য নই, সকলের জন্য, এই ভাবনায় ছাত্র সমাজকে আজ জারিত হতে হবে৷ তিনি বনে, গদ্য সাহিত্যের জনক হলেন বিদ্যাসাগর৷ তিনি বাল্য বিবাহ, বহু বিবাহ রোধ করেন৷ বিধবা বিবাহ প্রচলন করেন৷ তাঁর দেশপ্রেম ও মাতৃবন্দনা অতুলনীয়৷ তাঁর এই সদগুণাবলী ছাত্র সমাজকে শিখতে হবে৷ তথ্য ও সংসৃকতি মন্ত্রী আরও বলেন, বিদ্যা বিনয় দান করে৷ কিন্তু বিদ্যা আজ অনেককে দাম্ভিক ও আত্মকেন্দ্রিক করে তুলেছে৷ যা ঠিক নয়৷ শিক্ষা আজ অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হয়ে উঠেছে৷ যা হওয়া বাঞ্চনীয় নয়৷ তিনি বলেন, সমাজকে এগিয়ে নিতে ছাত্র সমাজকে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মানবিক মূল্যবোধগুলি অনুসরণ করতে হবে৷ এ জন্য মা বাবাকেও এগিয়ে আসতে হবে৷ তবেই এই জন্মজয়ন্তী সার্থক হয়ে উঠবে৷ এছাড়া অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা ড বিপ্রদাস পালিত ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ রণজিৎ কুমার দেবনাথ৷ স্বাগত ভাষণ দেন মধ্যশিক্ষা অধিকর্তা তথা অনুষ্ঠানের সভাপতি উত্তম কুমার চাকমা৷ উপস্থিত ছিলেন বুনিয়াদী শিক্ষা অধিকারের অধিকর্তা কুন্তল দাস, রাজ্য শিক্ষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ পর্ষদের অধিকর্তা রতীশ মজুমদারসহ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ৷ অনুষ্ঠান শুরুতে অতিথিগণ বিদ্যাসাগরের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন৷ অনুষ্ঠানে বাণীবিদ্যাপীঠ দ্বাদশ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করে৷ দ্বিতীয় পর্বে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বর্ণময় সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *