কলকাতা, ১৮ সেপ্টেম্বর (হি. স.): অক্টোবর মাসেই দল ছাড়ছেন মুকুল রায়। এমন জল্পনা রাজ্য রাজনীতি মহলে তুঙ্গে । তাকে ইতিমধ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি পদ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি রবিবার থেকেই খান্না সিনেমার কাছে একটি নতুন অফিস খুলে বসেছেন। এবং পুরনো তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করছেন। এরইমধ্যে মুকুল রায়, সি পি এমের বহিষ্কৃত সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধায়কে সঙ্গে নিয়ে বি জে পি-র পশ্চিমবঙ্গের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীর সঙ্গে দলত্যাগের ব্যাপারে এক প্রস্থ কথা বার্তা সেরে ফেলেছেন। কৈলাশ বিজয়বর্গীও জানিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল বা সি পি এম থেকে বি জে পিতে কেউ এলে তাদের আপত্তি নেই।
তৃণমূলের অন্দরমহলের খবর, মুকুল রায়ের সঙ্গে বি জে পিতে যোগ দিতে পারেন দলের আরেক সাংসদ চিত্রতারকা দেব। সম্প্রতি দেবের সঙ্গে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধায়ের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই পুজোয় দেব তাঁর প্রযোজিত ছবি ‘ককপিট’ রিলিজ করাতে গিয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছেন তার এক সময়ের সুহৃদ প্রযোজক শ্রীকান্ত মেহেতার কাছে। যে ভাবে, যে সব প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি রিলিজ করাতে চেয়েছিলেন, সে ভাবে, সেই সব প্রেক্ষাগৃহে পারেন নি। কেননা শ্রীকান্ত মেহেতার ওপর রয়েছে স্বয়ং দলনেত্রীর আর্শীবাদ। ফলে বেজায় চটেছেন দেব। দ্বারস্থ হয়েছেন মুকুল রায়ের।
দূরত্ব যে ভাবে বাড়ছে, তাতে শীঘ্রই দলের সাংসদ-পদ ছাড়তে হবে মুকুল রায়কে |দুর্গাপুজোর পর সব জল্পনার অবসান ঘটাতে পারেন তিনি। তাঁর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জল্পনা এই ছুটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। অনুগামীদের একাংশ মনে করছেন, সাংসদ পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানানোর আগে চূড়ান্ত প্রস্তুতি সারছেন তিনি।
দলের সঙ্গে বিচ্ছেদের সম্ভাবনার সঙ্গেই সাংসদ পদ ছাড়ার চাপ বাড়ছে মুকুলের উপর। নৈতিক কারণেই এই পদ রেখে দেওয়ায় সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া, সাংসদ পদ না ছাড়লে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে অনুগামীদের মধ্যে অবিশ্বাস তৈরি হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাঁদের সঙ্গে পাওয়া নিয়েও সংশয় তৈরি হবে। এই দু’টি বিষয় মাথায় রেখে প্রথম একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে মুকুলকে। আগামী মার্চ মাস নাগাদ মুকুলের সাংসদ পদের মেয়াদ শেষ হবে। সাংসদ হিসাবে এই সময়ে বিশেষ কিছু করারও নেই তাঁর।
দূরত্বের নব-পর্বে গত দু’মাস ধরে দলের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধ চালিয়েছেন মুকুল-বাবু। অনাহুতের মতোই বসেছেন তৃণমূল ভবনে। তৃণমূল ভবনে কোন তৃণমূল মন্ত্রীর জন্মদিন পালন হলেও ডাকা হয়না মুকুলকে। সব মিলিয়ে এখন মুকুলকে তৃণমূলে টিকে থাকাটাই যথেষ্ট কষ্টের।
রাজনৈতিক মহলের একটা অংশের ধারনা মুকুল রায় তৃণমূল ছাড়বেন প্রায় নিশ্চিত। তবে দল ছেড়ে নতুন দল গঠন করলে তা প্রতিষ্ঠা করা এই মুহূর্তে এক প্রকার মুশকিল। তাই তিনি বি জে পিতে যাওয়াই শ্রেয় মনে করছেন বলে ওয়াকিবহাল মহলের ধারনা। কেননা,বি জে পি এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠিত পার্টি। তাদের কিছুটা হলেও সংগঠন আছে।
মুকল রায় ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, যদি দলনেত্রী না ডাকেন তাহলে তিনি কালীঘাটে বা ই এম বাইপাসের তৃণমূল ভবনে আর যাবেন না। তিনি খান্নার অফিসেই থাকবেন। তাকে পাঞ্জাবের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনি এখন বাংলার ব্লক ভিত্তিক দলীয় চালচিত্র খতিয়ে দেখছেন। তাঁর দল ছাড়ার জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছেন, তৃণমূলের আরেক বিতর্কিত সাংসদ কুনাল ঘোষ। তিনি ফেসবুক পোষ্টে মুকুলকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন, ক্রিজে থাকলে রান আসে ঠিক, কিন্তু ওভার যদি শেষ হয়ে যায়। আর একটি পোষ্টে কুনাল লিখেছেন, ‘যত কান্ড অক্টোবরে’। তবে কি অক্টোবরেই সদলবলে বি জে পিতে যাচ্ছেন মুকুল রায়।
2017-09-18