ফটিকরায়ের পর আগরতলায় দুই গোষ্ঠীতে সংঘর্ষ, কলেজগুলিতে ছাত্র পরিষদে এসএফআইয়ের একাধিপত্যে থাবা বসাচ্ছে বিদ্যার্থী পরিষদ

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৬ সেপ্ঢেম্বর৷৷ ছাত্র রাজনীতির উত্তপ্ত হাওয়া গোটা রাজ্যেই বিস্তার পাচ্ছে৷ দীর্ঘসময় যাবৎ রাজ্যের কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের একাধিপত্য৷ কোন বিরোধী ছাত্র সংগঠনই কলেজগুলির ছাত্র সংসদে জমি খঁুজে পায়নি৷ কিন্তু, রাজ্যে বিজেপির উত্থান হতেই এই দলের ছাত্র সংগঠন তথা এবিভিপি (অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ) তৎপরতা চালায় কলেজগুলির ছাত্র সংসদ নির্বাচনে৷ রাজ্যের বিভিন্ন কলেজে বিদ্যার্থী পরিষদের তরফ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মনোনয়ন জমা দেওয়া হচ্ছে৷ আর তাতেই গা জ্বালা করছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই’র৷ বরাবরের মতো রাজ্যের প্রতিটি কলেজে মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে গিয়ে জঙ্গী মিছিল সংগঠিত করা হচ্ছে বহিরাগত সিপিএম ক্যাডারদের নিয়ে৷ তাতে কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অগণতান্ত্রিকতার বিষাক্ত ছোবল পড়ছে৷ প্রতিবাদ করতে গেলেই বিরোধী ছাত্র সংগঠন তথা বিদ্যার্থী পরিষদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হচ্ছে৷ মঙ্গলবার ফটিকরায়স্থিত আম্বেদকর কলেজে এই দুই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়৷ তাতে এসএফআই ও বিদ্যার্থী পরিষদের পাঁচজন সমর্থক ঘায়েল হয়েছিল৷ ঘটনার চবিবশ ঘন্টা অতিক্রান্ত হতে না হতেই রাজধানী আগরতলায় বিবিএম কলেজে বুধবার এই দুই ছাত্র সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে৷
এদিন বিদ্যার্থী পরিষদের তরফ থেকে কলেজে মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে যায় প্রার্থীরা৷ সেখানে তখন ছিল এসএফআইয়ের প্রার্থী ও বহিরাগত সিপিএম ক্যাডাররা৷ সেই সাথে সিপিএমের দলদাস পুলিশের একাংশও এদিন প্রকাশ্যে পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করে৷ তাতেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে৷ বিদ্যার্থী পরিষদের সমর্থকরা যখন কলেজে মিছিল করে প্রবেশ করছিল তখন ‘কমরেড পুলিশ’রা তাদের বাধা দেয়৷ পুলিশের বক্তব্য সংগঠনের পতাকা বা ফেস্টুন নিয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে দেওয়া হবে না৷ তখন বিদ্যার্থী পরিষদের তরফ থেকে বলা হয় এই নিয়ম তো বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হওয়ার কথা৷ কিন্তু, কেন এসএফআই-কে ফ্ল্যাগ ফেস্টুন নিয়ে কলেজে মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে দিয়েছে পুলিশ৷ এনিয়ে পুলিশের সাথে বিদ্যার্থী পরিষদের কিছু তর্কবিতর্ক হয়৷ তখন আচমকা এসএফআই সমর্থক ও সিপিএম ক্যাডাররা বিদ্যার্থী পরিষেদরে কর্মী সমর্থকদের লক্ষ্য করে গালিগালাজ করে৷ এক সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে৷ দুই ছাত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে৷ যদিও পুলিশ ধাওয়া করে দুই গোষ্ঠীকে দূরে সরিয়ে দেয়৷ কিন্তু, ততক্ষণে বিদ্যার্থী পরিষদের সমর্থকরা বিবিএম কলেজের ছাত্র সংসদে আক্রমণ চালায়৷ এসএফআই পরিচালিত ছত্র সংসদ ভবনে গিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়৷ পরে অবশ্য পুলিশ তাদের ছাত্রভঙ্গ করে দেয়৷
এই ঘটনার পর বিদ্যার্থী পরিষদ ও এসএফআই উভয় সংগঠনই পাল্টা মিছিল করে পরস্পরের বিরুদ্ধে কলেজের গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিষাক্ত করার গুরুতর অভিযোগ তুলেছে৷ অন্যদিকে, এই ঘটনার পর এসএফআই স্যোসাল মিডিয়াতে এমন কিছু ছবি পোস্ট করেছে যা ঘটনাকে আরও বেশী উত্তপ্ত করে তুলে৷ এসএফআইয়ের তরফ থেকে স্যোসাল মিডিয়াতে তাদের ছাত্র সংসদে ভাঙচুরের যে ছবি আপলোড করা হয়েছে তাতে দেখা গিয়েছে, দেশের বরেণ্য ব্যক্তিত্য তথা জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস সহ অনেকের প্রতিকৃতি ভাঙচুর করেছে বিদ্যার্থী পরিষদ৷ যদিও, এই অভিযোগ ফুৎকারে উড়ে গিয়েছে৷ কারণ, বিদ্যার্থী পরিষদের ক্ষুব্ধ সমর্থকরা ছাত্র সংসদের আসবাবপত্র ভাঙচুর করেছে৷ তারা কোন বরেণ্য ব্যক্তিত্বের ছবিতে হাতও লাগায়নি৷ অভিযোগ উঠেছে বিদ্যার্থী পরিষদের সমর্থকরা ছাত্র সংসদ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর এসএফআই সমর্থকরা ঐসব বরেণ্য ব্যক্তিদের ছবি ভাঙচুর করেছে৷ আর সেই ছবি স্যোসাল মিডিয়াতে আপলোড করে বিদ্যার্থী পরিষদ সম্পর্কে ব্যাপক ভাবে কুৎসা প্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ৷