কলকাতা, ২৪ আগস্ট (হি.স.): পশ্চিমবঙ্গে কানাইয়া কুমারের সভা বানচাল করার জন্য বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বিদ্যার্থী পরিষদ ‘বিশেষ বাহিনী’ গড়েছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ, ওই বাহিনী মেদিনীপুর, যাদবপুর, বালি, রিষড়া, উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুরে হামলা চালিয়েছে। এমনকি কানাইয়ার মুখে কালি মাখাতে চেয়েছে।
পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলছে সিপিআইয়ের ছাত্র-যুব সংগঠনও। এই বিশেষ ‘টিম’ গড়ে তোলা হয়েছিল একমাস আগেই। জায়গায় জায়গায় হামলাকারীদের বেদম প্রহার করেছেন এই টিমের সদস্যরা। এই প্রতিরোধ টিমের কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন সিপিআইয়ের বর্ষীয়ান নেতা মঞ্জুকুমার মজুমদার। যদিও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শচীন সিংহ কানাইয়ার ওপর হামলা তাঁদের কাজ নয় বলে জানিয়েছেন।
‘সেভ ইন্ডিয়া, চেঞ্জ ইন্ডিয়া’ শ্লোগান তুলে দেশজুড়ে যে ‘লং মার্চ’ চলছে, তাতে অংশ নিয়ে কানাইয়া কুমার পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ঘুরছেন। বক্তব্য রাখছেন। প্রসঙ্গত, সাত দফা দাবিতে গত পনেরোই জুলাই তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী থেকে নিখিল ভারত যুব ফেডারেশন এবং নিখিল ভারত ছাত্র ফেডারেশনের উদ্যোগে ‘লং মার্চ’ শুরু হয়েছে। যা শেষ হবে বারোই সেপ্টেম্বর পাঞ্জাবের হুসলিওয়ালাতে ।
প্রসঙ্গত, দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘আজাদি’ শ্লোগান দেবার পর থেকেই কানাইয়া কুমার ভারতের যেখানেই গিয়েছেন, সেখানেই তাঁকে বিজেপি সমর্থকেরা ঢিল ছুঁড়েছে বা তাঁর মুখে কালি লেপে দিয়ে সভা বানচাল করে তাঁকে হেনস্থা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এসে হিন্দুত্ববাদীরা প্রতিরোধের মুখে পড়েন। এই রাজ্য থেকে কানাইয়ার ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ হয়ে পাঞ্জাবের দিকে এগোনোর কথা।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে শিক্ষা নিয়ে এরপর যেখানে যেখানে কানাইয়া কুমার যাবেন, সেখানেই গণপ্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে।
বৃহস্পতিবার সিপিআই সূত্রে জানা গেছে, পশ্চিমবঙ্গে যে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে তা একদিনের বিষয় ছিল না। তামিলনাড়ু, অন্ধ্র, ও ওড়িশায় কানাইয়ার ওপর হামলার ঘটনার পর বিশেষ ব্যবস্থা নেয় সিপিআইয়ের কলকাতা জেলা কমিটি। তাঁরা ছাত্র-যুবদের নিয়ে একটি টিম তৈরি করেছে। ওই টিমকে নির্দেশ দেওয়া হয়, কানাইয়ার ওপর যেন আক্রমণ হলে যেন প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়। যেভাবে সাদা পোশাকের পুলিশ থাকে, সেইভাবেই ভিড়ের মধ্যে মিশে থাকছে সিপিআইয়ের ছাত্র যুব সংগঠনের একটি দল। এরপরে যখনই আক্রমণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তখনই তাঁরা প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।
এই ‘প্রতিরোধ টিম’-র কথা স্বীকার করে নিয়ে সিপিআইয়ের বর্ষীয়ান নেতা মঞ্জুকুমার মজুমদার বলেন, ‘যেভাবে কানাইয়াকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সদস্যরা আক্রমণ করেছে, তা নিন্দারই। বাক স্বাধীনতা, সংবিধানের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেবার চেষ্টা করা হচ্ছে। কেন্দ্রে ওরা ক্ষমতায় এসেছে ঠিকই। কিন্তু পঁচিশ থেকে আঠাশ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় এসেছে। এরপরে মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমালোচনা করার অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে। কানাইয়ার সভায় বাধা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এটা আমাদের ছাত্র-যুবরা প্রতিরোধ করবেন।
অন্যদিকে, আরএসপি-র রাজ্য সম্পাদক ক্ষিতি গোস্বামী মনে করেন, সাধারণ মানুষের কাছে কানাইয়া কুমারের আহ্বান গুরুত্ব পেয়েছে। আরএসএস, বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বিরোধী বার্তা কানাইয়ার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে সিপিআই। তাই কানাইয়ার সভা বানচাল করে ওঁকে কালি মাখাতে চাইছে।
এর জবাবে বৃহস্পতিবার বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শচীন সিংহ বলেন, মুখে কালি লাগানো বা কানাইয়া কুমারের সভা বানচাল করা আমাদের কাজ নয়। এটা আমরা করছি না। কারা করছে তাও জানি না। শচীনবাবু আরও বলেন,
তবে আমরা কানাইয়া কুমারের বিরোধিতা করছি। কারণ তার মানসিকতা ভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী।