স্বাধীনতা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস প্রকাশে আগ্রহী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

কলকাতা, ৯ আগস্ট (হি. স.) : প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির সহ সভাপতি তথা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ভাইপো চন্দ্র কুমার বসুকে এই আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। বুধবার \”ভারত ছাড়ো আন্দোলন\”-র পঁচাত্তর বর্ষপূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই আন্দোলনের ভূয়সী প্রশংসা করেন। লোকসভায় তিনি বলেন, গান্ধীজির জন্যই দেশ ছেড়েছিল বৃটিশরা। ‘মন কী বাত’ রেডিও প্রসারণের সময় থেকেই এ বিষয়ে চন্দ্র কুমার বসু ক্ষুব্ধ। তাঁর মতে \”ইংরেজরা গান্ধীর জন্য দেশ ছাড়েননি, নেতাজির জন্য ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল।\”
নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যেই লোকসভায় বলেছেন, ১৯৪২ সালে শ্লোগান ছিল ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে। অর্থাৎ করব আর করেই ছাড়ব। বুধবার চন্দ্র কুমার বসু \”হিন্দুস্থান সমাচার\”কে জানান, \”সঠিক ইতিহাস প্রকাশ কোন নরেন্দ্র মোদী বা তাঁর সরকারের বিষয় নয়। আমি নিজে বিজেপি-র সঙ্গে যুক্ত আছি। কিন্তু বিজেপি যদি ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করে আমি সেটা মোটেই সমর্থন করতে রাজি নই। সঠিক ইতিহাস প্রকাশ করতে হবে। এর জন্য যার সঙ্গে লড়াই করতে হবে, আমি করতে প্রস্তুত।\” তিনি ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁর মনে হয় নরেন্দ্র মোদী সঠিক ইতিহাস প্রকাশ করবেন।

বুধবার চন্দ্র কুমার বসু বলেন, \”১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সবাই সমর্থন করেছিল। নেতাজিরও সমর্থন ছিল। বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদ যে ভাবে সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচার করে শাসন চালিয়ে ছিল; অহিংস আন্দোলনের জন্য তারা যে ভারতবর্ষ ছেড়ে চলে যাবে সে চিন্তা করা আমাদের পক্ষে খুবই ভুল। জার্মানিতে হিটলারের থেকে এখানে বৃটিশরা কম কিছু অত্যাচার করে নি।\”
\”নেতাজি কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন দু দুবার। তিনি কাউকে খোসামোদ করে সভাপতি হননি।নির্বাচনে জিতে সভাপতি হয়েছিলেন।\” এই মন্তব্য করে চন্দ্রবাবু এদিন বলেন,\”নেতাজি বুঝতে পেরেছিলেন, কংগ্রেস যে পদ্ধতিতে গান্ধীজি সত্যাগ্রহ আন্দোলন বা রাউন্ড টেবিল বৈঠকে বসে বৃটিশদের মোকাবিলা করবেন ভাবছেন, সেই পদ্ধতি ঠিক না। এর মাধ্যমে ভারতবর্ষ কেন,পৃথিবীর কোনও দেশই স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবে না।\”

তিনি বলেন,\” সুভাষচন্দ্র বসু বুঝেছিলেন, কংগ্রেস নেতৃত্বের ওপর যদি আমি নির্ভর করে থাকি তা হলে ভারতবর্ষ আগামী এক’শ বছরেও স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবে না। তাই সতেরো জানুয়ারি, ১৯৪১ সালে ভারত ছেড়ে চলে গেলেন। উনি বুঝেছিলেন, ভারতে থেকে দেশ স্বাধীন করা যাবে না। তাই তিনি বিদেশে গিয়ে জার্মানি,জাপানের সাহায্য নিয়েছিলেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যিনি \”ট্রান্সফার ডকুমেন্ট\” সই করে গেছেন, সেই অ্যাটলি সাহেব কলকাতা শহরে এসেছিলেন। সেটা ১৯৫৬ সালের কথা । তখন ভারপ্রাপ্ত রাজ্যপাল ছিলেন হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ফণিভূষণ চক্রবর্তী। তিনি অ্যাটলি সাহেবকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আপনারা ভারতবর্ষ থেকে চলে গেলেন কেন? আপনারা তো এ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্র শক্তি হিসেবে জিতে ছিলেন। তাহলে গান্ধীজির ভারত ছাড়ো আন্দোলনের জন্য এদেশ ছেড়ে গিয়েছিলেন,না অন্য কোনও কারণ ছিল। তখন অ্যাটলি সাহেব মুচকি হেসে বললেন, গান্ধীজির ভারত ছাড়ো আন্দোলন ব্রিটিশ সরকারের ভারত ছাড়ার ক্ষেত্রে খুব কমই প্রভাব ফেলেছিল।\”
চন্দ্রবাবু জানান,\”অ্যাটলি সাহেব আরও বলে ছিলেন, আজাদ হিন্দ ফৌজের যুদ্ধ ও সুভাষচন্দ্র বসুর জন্য আমাদের ভারত ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল। আজাদ হিন্দ ফৌজ যুদ্ধে হেরে গিয়েছিল। কিন্তু মৈরান দখল করেছিল। মৈরানে ভারতের পতাকা উত্তোলন করা হয়। মৈরান শহর তিন মাস আজাদ হিন্দ সরকারের অধীনে ছিল। বৃটিশদের আর্মি, এয়ারফোর্স, নেভিতে আজাদ হিন্দ ফৌজের লড়াইয়ের প্রভাব পরে। সেখানে বেশিরভাগ জওয়ান ছিল ভারতীয়। ভারতীয় সেনারা বিদ্রোহ শুরু করেন। বৃটিশ সেনাদলে ভাঙন দেখা দেয়।\”

চন্দ্রবাবু আরও বলেন, \”আজাদ হিন্দ সরকার একটি সরকার। আজাদ হিন্দ সরকার বৃটিশ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করেছিল, মানে একটা সরকার আরেকটা সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করেছিল তাদের মাতৃভূমিকে স্বাধীন করার জন্য। এরা ক্রিমিনাল নয়, এরা বীর। বোম্বের বন্দরে বৃটিশ নেভির সত্তরটি জাহাজে বিদ্রোহ হয়। বৃটিশ সৈন্যদের ভেতরও সাংঘাতিক বিদ্রোহ শুরু হয়। অ্যাটলি সাহেবেরা তখনই বুঝে যান তাঁরা আর ভারতে থাকতে পারবেন না। সেই জন্যই ভারতবর্ষে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল।\”
তিনি জানান, তাঁর বাবা অমিয়নাথ বসু এবং কাকা সূর্য বসু ১৯৭৬ সালে লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে দেখা করে ছিলেন। সেই সময়ে অসুস্থ মাউন্টব্যাটেন তাদের বলেছিলেন, সুভাষচন্দ্র বসু ও তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজের জন্যই আমরা ভারত ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম। সংবিধান রচায়িতা আম্বেদকর বলেছেন, গান্ধীজির অহিংস আন্দোলন সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ। একমাত্র সুভাষ বোসের আজাদ হিন্দ ফৌজের প্রভাব ছিল। আজ জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালও একই কথা বলছেন।অজিত ডোভালের সঙ্গেও চন্দ্রবাবুর কথা হয়েছে।চন্দ্রবাবু জানান, \”ডোভাল বলেছেন আমি মোদিজীকে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করব। কিন্তু কিছু লোক আছে, যারা একাত্তর বছর ধরে বোঝানোর চেষ্টা করছে স্বাধীনতা আন্দোলনে গান্ধী, নেহেরুরই কৃতিত্ব বেশি। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যে নেতাজির কৃতিত্ব বেশি সেটা বোঝানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এগিয়ে এসেছেন নরেন্দ্র মোদীও\”।