নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৫ জুলাই৷৷ স্টেট কাউন্সিল নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার বদলে উল্টে সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের কাছে

দুই দফায় ৩৫ বছরের বাম শাসনে রাজ্যে জনজাতিদের উন্নয়নে কি কাজ হয়েছে তার বর্ণনা দিতে বলেছেন বিজেপি রাজ্য প্রভারী সুনীল দেওধর৷ এদিকে, জনজাতি মোর্চার রাজ্য প্রভারী যিষ্ণু দেববর্মা অটোনোমাস স্টেট কাউন্সিলের (স্বশাসিত রাজ্য পরিষদ) পক্ষ নিয়ে অস্পষ্টতা জিইয়ে রেখেছেন৷ তবে জানান, সরাসরি অর্থ প্রদান এবং অধিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে এই দাবি তুলেছে বিজেপি৷
শনিবার সাংবাদিক সম্মেলনে সুনীল দেওধর স্টেট কাউন্সিলের বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা দেবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দেন৷ বদলে সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের কাছে দুই দফায় ৩৫ বছরের বামফ্রন্টের শাসনে জনজাতিদের স্বার্থে কি কাজ হয়েছে তার ব্যাখ্যা চেয়েছেন৷ শ্রীদেওধর বলেন, ৩৫ বছরের বাম শাসনে সোয়া লাখ জনজাতি এখনো ভূমিহীন৷ পানীয় জলের জন্য দূর দূরান্তে যেতে হয় তাঁদের৷ তাও আবার অপরিশ্রুত পানীয় জল খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাঁরা৷ ম্যালেরিয়া আজও বহু জনজাতির প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে৷ অথচ কেন্দ্র থেকে কোটি কোটি টাকা আসলেও ম্যালেরিয়া নির্মূল করতে ব্যর্থ রাজ্য সরকার৷ বহু জনজাতি বেকার রয়েছেন এরাজ্যে৷ ধর্ষিতা ন্যায় বিচার পান না, বরং সঠিক ধারায় মামলা রুজু না হওয়ায় চিকিৎসায় সরকারী সহায়তা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন৷ তিনি বলেন, ১৯জন জনজাতি বিধায়ক এবং একজন সাংসদ রয়েছে বামেদের৷ তাঁর প্রশ্ণ, বিধায়ক এবং সাংসদ তহবিলের টাকা কোথায় খরচ হচ্ছে৷ তিনি এই সমস্ত কিছু ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদককে৷
তাঁর ঘোষণা, আলাদা রাজ্যের সমর্থকদের সাথে কোন সমঝোতা করবে না বিজেপি৷ তিনি অভিযোগ তুলে বলেন, জাতি উপাজাতির মধ্যে ঝগড়া লাগানোই সিপিএমের কাজ৷ দাঙ্গা হোক চাইছে সিপিএম৷ কারণ, তাঁরা বিভাজনের মাধ্যমে শাসন করতে পছন্দ করে৷
এদিন জনজাতি মোর্চার রাজ্য প্রভারি যিষ্ণু দেববর্মা কটাক্ষের সুরে বলেন, গতকাল সিপিএম এর রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর রাজ্য পরিষদ সম্পর্কে যে মত ব্যক্ত করেছেন তা অপ্রাসঙ্গিক এবং তাঁর জ্ঞানের পরিধির সীমাবদ্ধতাকে প্রমাণ করেছে৷ তিনি সংবিধানের যে ধারার উল্লেখ্য করেছেন তাও ভ্রান্ত৷ রাজ্য পরিষদ অর্র্থৎ স্টেট কাউন্সিল নিয়ে রাজ্য বিধানসভায়ও আলোচনা হয়েছে৷ যদিও রাজ্য সরকার তখন তা নাকচ করে দেয়৷ তিনি আরও জানান, রাজ্যে টানা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সিপিএম ক্ষমতায় থাকলেও উপজাতি এলাকার উন্নয়ন হয়নি৷ অন্যথায় আজকের পরিস্থিতি তৈরি হতনা৷ দীর্ঘ বঞ্চনার ফলেই উপজাতিদের মধ্যে এই ক্ষোভ তৈরি হয়েছে৷ এর জন্য কোন ভাবেই রাজ্যে ক্ষমতাসীন দল সিপিএম তাদের দায় এড়াতে পারেনা৷ আগামী দিনে উপজাতি প্রধান এলাকাগুলি উন্নয়নের জন্য এবং তাদের জীবন যাত্রার মানোন্নয়নে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে সরাসরি অর্থ বরাদ্দ দরকার৷ আর এই জন্যই এডিসিকে স্টেট কাউন্সিলে উন্নতি করা খুব প্রয়োজন৷ তিনি উল্লেখ করেন, স্টেট কাউন্সিল বিষয়টি নতুন নয়৷ ইউপিএ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় কেন্দ্র থেকে একটি খসড়া বিল পাঠানো হয়েছিল যেটাতে স্টেট কাউন্সিল গঠনের কথা বলা হয়৷ কিন্তু রাজ্য সরকার তা নাকচ করে দেয়৷ পরবর্তীতে এনডিএ সরকার আসার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং আরেকটি বিলের খসরা প্রস্তুত করে রাজ্য সরকারের কাছে পাঠায়৷ ২০১৫ সালের ২৩ এপ্রিল তা পাঠিয়েছিল কেন্দ্র৷ সেই খসড়া বিলের জবাব এখনো দেয়নি রাজ্য সরকার৷ তবে, রাজ্য সরকার যদি খসড়া বিলের জবাব দিয়ে থাকে তাহলে তাদের অবস্থান কি সিপিএমকে জানাতে বলেন যিষ্ণুবাবু৷ তাঁর আরও অভিমত, এই ধরনের কার্যকলাপ প্রমাণ করে সিপিএম পরিচালিত বাম সরকার রাজ্যের উপজাতিদের প্রতি কতটা দায়বদ্ধ৷ তিনি উল্লেখ করেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলেই স্টেট কাউন্সিল গঠন করা হবে৷ সেই মর্মে বিজেপি ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় উপজাতি কল্যাণ মন্ত্রককে তথ্য ভিত্তিক রিপোর্ট জমা দিয়েছে৷

