অবরোধের নামে জাতীয় সড়কে নগ্ণ দেহে সীমাহীন উৎশৃঙ্খলতা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ জুলাই৷৷ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আছিলায় নগ্ণ হয়ে সীমাহীন উৎশৃঙ্খলতাই দেখা গেল জাতীয়

বড়মুড়ায় অবরোধ আন্দোলনরত আইপিএফটির কর্মীরা নগ্ণ হয়ে উৎশৃঙ্খলতা করেছে বুধবার৷ ছবি নিজস্ব৷

সড়কের উপর চাকমাঘাট ব্রিজ এলাকায়৷ আইপিএফটি’র অবরোধ আন্দোলনের তৃতীয় দিনে সকালে হঠাৎ একদল উপজাতি যুবক নগ্ণ হয়ে জাতীয় সড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন৷ আচমকা তাঁদের এই পদক্ষেপে উপস্থিত নিরাপত্তা কর্মীদের অবাক করে দেয়৷ তিপ্রাল্যান্ডের দাবিতে এইভাবে নগ্ণ প্রদর্শন উপজাতিদের মধ্যেই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে৷ শুভবুদ্ধি সম্পন্ন উপজাতিদের বক্তব্য, উপজাতি সমাজ তাঁদের নগ্ণ নিদর্শনের জন্য লজ্জিত বোধ করছে৷ তাঁদের মতে, নগ্ণ হয়ে প্রতিবাদ এর আগেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হয়েছে৷ কিন্তু, এরাজ্যে এধরনের ঘটনা এই প্রথম৷ বিভাজিত আইপিএফটি সভাপতি এন সি দেববর্মা এই ঘটনাটি আবেগের বশে ঘটেছে বলে সাফাই দিয়েছেন৷ গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী নরেশ জমাতিয়া এবিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অবরোধকারীদের এধরনের উৎশৃঙ্খল আচরণ সভ্য সমাজে অচল৷
তিপ্রাল্যান্ডের দাবিতে আইপিএফটি এনসি গোষ্ঠি গত ১০ জুলাই থেকে জাতীয় সড়ক এবং রেল অবরোধ শুরু করেছে৷ শুরু থেকেই তাদের আন্দোলনে কিছু কিছু উৎশৃঙ্খলতা দেখা গেছে৷ নিরাপত্তা কর্মীদের লক্ষ্য করে অশ্রাব্য গালিগালাজ থেকে শুরু করে নানা রকমের অঙ্গভঙ্গি করতে দেখা গেছে অবরোধকারীদের৷ এমনকি মহিলা নিরাপত্তা কর্মীদের লক্ষ্য করে বিশ্রি গালিগালাজ করেছেন অবরোধকারীরা এমন অভিযোগও উঠেছে৷ বুধবার অবরোধ আন্দোলনের তৃতীয় দিন ছিল৷ সকালে হঠাৎ চাকমাঘাট ব্রিজের উপর অবরোধকারীদের মধ্যে ১৪ জন উপজাতি যুবক নগ্ণ হয়ে শ্লোগান দিতে শুরু করেন৷ তাদের হঠাৎ এই পদক্ষেপে উপস্থিত নিরাপত্তা কর্মীরা অবাক হয়ে যান৷ নগ্ণ হয়ে তারা আগরতলার দিকে আসার জন্য প্রস্তুত হন৷ কিন্তু, সেখানে উপস্থিত অন্য অবরোধকারীরা তখন তাদের আটকে দেন৷ তাতে তারা ব্রিজের উপর দাঁড়িয়েই নগ্ণ অবস্থায় দীর্ঘক্ষন শ্লোগান দেন৷
এবিষয়ে বিভাজিত আইপিএফটি সভাপতি এন সি দেববর্মা বলেন, অবরোধকারীদের গত দু’দিন ধরে সারা রাত ঘুম নেই৷ খাওয়া দাওয়াও তাদের ঠিক মতো হচ্ছে না৷ তাই, আবেগের বশে এই ঘটনাটি ঘটেছে৷ তিনি এই ঘটনায় লজ্জিত বলে জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি আগামী দিনে এধরনের কোন ঘটনা ঘটবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন৷ কিন্তু, প্রশ্ণ হল অবরোধকারীদের উপর নেতৃবৃন্দের কর্তৃত্ব কতটা রয়েছে৷ যতদূর জানা গেছে, চরম বিশৃঙ্খলা চলছে অবরোধস্থলে৷ তবে, এও শুনা যাচ্ছে, এসমস্ত কিছুই পরিকল্পনা মাফিক ঘটানো হচ্ছে৷
সূত্রের খবর, আইপিএফটি এনসি গোষ্ঠি অবরোধ আন্দোলনের মাধ্যমে অশান্তির পরিবেশ কায়েম করতে চাইছে৷ আগামীকাল আবারও নগ্ণ হয়ে তারা বিক্ষোভ দেখাবেন বলে জানা গেছে৷
এদিকে, আগামীকাল সকালের বিমানে দিল্লি যাচ্ছেন আইপিএফটি এনসি গোষ্ঠির দুই প্রতিনিধি৷ জানা গেছে, মেবার কুমার জমাতিয়া এবং ধনঞ্জয় ত্রিপুরা দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মন্ত্রী ড জীতেন্দ্র সিংহের সাথে দেখা করবেন৷
এদিন, মহাকরণে আইপিএফটি এনসি গোষ্ঠির অবরোধ আন্দোলন নিয়ে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, তিপ্রাল্যান্ডের দাবি অবাস্তব এবং অবান্তর৷ রাজ্যের জাতি উপজাতি উভয় অংশের মানুষ এই দাবিকে সমর্থন করেন না৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরা অবিভাজ্য৷ এখানে জাতি উপজাতির মধ্যে ঐক্য মহামিলনের মহাকাব্যের মতো৷ একে বিনষ্ট করার সাধ্য কারোর নেই৷ তিনি ক্ষোভের সুরে বলেন, জাতীয় সড়ক ও রেল অবরোধ করে জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করেছেন অবরোধকারীরা৷ এই আন্দোলনকে ঘিরে যেধরনের উৎশৃঙ্খল এবং প্ররোচনামূলক আচরণ করছেন অবরোধকারীরা তা সভ্য সমাজে অচল৷ তিনি এদিন অবরোধকারীদের আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন৷ পাশাপাশি প্ররোচনার ফাঁদে পা না দিয়ে শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখতে রাজ্যবাসীকে সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন৷ তিনি মনে করেন, আন্দোলনের ফলে যদি কোন সরকারী কিংবা বেসরকারী সম্পত্তি নষ্ট হয়, অথবা মানুষের উপর আক্রমন হয়, তাহলে প্রশাসনের যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ৷
এদিন তিনি খোঁচা দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মন্ত্রী ড জীতেন্দ্র সিং আইপিএফটিকে উসকিয়ে দিয়েছেন৷ তাঁর সাথে দেখা করেই এই অযৌক্তিক আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তাঁর কটাক্ষ, আইপিএফটি’র এই আন্দোলনে বিজেপি’র ইন্ধন রয়েছে তা বুঝতে কারোর অসুবিধা হওয়ার কথা নয়৷ তিনি মনে করেন, বিধানসভা নির্বাচনের লক্ষ্যেই এই দাবি উঠেছে এবং আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছে৷ নির্বাচনের পরে দাবিও থাকবে না, আন্দোলনেরও অস্তিত্ব খঁুজে পাওয়া যাবে না৷