নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ মে৷৷ রাজ্যে আত্মহত্যার হার ক্রমেই বেড়ে চলেছে৷ পৃথক স্থানে দুই ব্যক্তি বিষ পানে আত্মহত্যা করেছেন৷ এছাড়া গায়ে আগুন দিয়ে এক কিশোরী আত্মঘাতী হয়েছে৷ দুই ব্যক্তির আত্মহত্যার পেছনে মূল কারণ বলে জানা গেছে পারিবারিক অশান্তি৷ অন্যদিকে কিশোরীর আত্মহত্যার পেছনে প্রধান কারণ প্রণয় সংক্রান্ত বিষয়৷ মান্দাই বিদ্যামোহন পাড়ার বাসিন্দা পেশায় কৃষক উষা চন্দ্র দেববর্মা(৫৬) এবং তেলিয়ামুড়ার উত্তর বরমা ছড়ার বাসিন্দা পেশায় রডমিস্ত্রি অজিত রাই বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন৷
জানা গেছে, মান্দাই বিদ্যামোহন পাড়ার বাসিন্দা উষা চন্দ্র দেববর্মা গত ২৫ মে স্ত্রীর ঝগড়া করে কীটনাশক ওষুধ খেয়ে নিয়েছিলেন৷ বিষয়টি তিনি বাড়িতে কাউকেই জানাননি৷ আজ সকালে পেটে প্রচন্ড ব্যাথা শুরু হয় তার৷ সাথে জ্বরও আসে৷ সঙ্গে সঙ্গে তাকে জিরানীয়া প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যান তার পরিবারের সদস্যরা৷ সেখানে চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা করে জানান তিনি বিষ খেয়েছেন৷ সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকরা তাকে জিবিতে স্থানান্তর করেন৷ জি বি হাসপাতালে সকাল পৌনে এগারটায় তার মৃত্যু হয়েছে৷ জানা গেছে, স্ত্রী কৃষ্ণমনি দেববর্মার সাথে প্রায় ঝগড়া হত উষাচন্দ্র দেববর্মার৷ তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে৷ ছেলে বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে আমবাসায় শ্বশুড়বাড়িতে চলে গেছেন৷ এরপর থেকে বাড়িতে অশান্তি শুরু হয়৷ ধারণা করা হচ্ছে, পারিবারিক অশান্তির কারণেই তিনি বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন৷
এদিকে, তেলিয়ামুড়া উত্তর বরমাছড়ার বাসিন্দা অজিত রাই’র পরিবারেও দীর্ঘদিন ধরে অশান্তি চলছিল৷ গত এক বছর ধরে স্ত্রী ডলি রাইকে নিয়ে ঝামেলা হচ্ছিল সংসারে৷ এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ছয় বছর আগে তাদের বিয়ে হয়েছে৷ তাদের দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে৷ বড় মেয়ের বয়স ৩ বছর ৪ মাস এবং ছোট মেয়ের বয়স ১ বছর ২ মাস৷ পেশায় রডমিস্ত্রি অজিত রাই’র সংসারে অভাব অনটন ছিল৷ এলাকাবাসী সূত্রে খবর, স্ত্রী পরকীয়া প্রেমে আসক্ত এমন সন্দেহ করতেন অজিত রাই৷ এদিয়ে প্রায়ই বাড়িতে ঝগড়া হত৷ প্রায় সময় অজিত রাই মদমত্ত অবস্থায় বাড়িতে ফিরে স্ত্রীকে মারধর করতেন বলেও অভিযোগ৷ গতকাল দিনের বেলায় স্ত্রীর সাথে তার তুমুল ঝগড়া হয়৷ এরপর তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে যান এবং প্রচন্ড মদ্যপান করে বাড়ি ফেরেন৷ বাড়ি ফিরে তিনি বিষ খেয়ে ফেলেন৷ প্রথমে তাকে তেলিয়ামুড়া হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা৷ তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে চিকিৎসকরা তাকে জি বি হাসপাতালে স্থানান্তর করেন৷ জি বি হাসপাতালে আজ সকালে তার মৃত্যু হয়েছে৷
এদিকে, ইন্টারনেটে নগ্ণ ছবি আপলোড করায় অভিমানে লজ্জায় আত্মহত্যা করল এক কিশোরী৷ ঘটনাটি ঘটেছে সিধাই থানার অধীন কলকলীয়া গ্রামে৷ এই বিষয়ে এলাকারই অমল সূত্রধর (২৯) নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে সিধাই থানায় মামলা করা হয়েছে৷ ঘটনার বিবরণে জানা গিয়েছে গত প্রায় ছয় মাস যাবৎ অমল সূত্রধর এলাকারই এক কিশোরীকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল৷ ঐ প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় ফটো এডিটিং করে ঐ কিশোরীর নগ্ণ ছবি ইন্টারনেটে আপলোড করে দেয় অমল সূত্রধর৷ এই নগ্ণ ছবি প্রকাশ্যে আসতেই নানা স্থান থেকে নানা জন ঐ কিশোরী সম্পর্কে বাজে কথা বলছিল৷ তাতে অভিমান ও লজ্জা বোধ করে ঐ কিশোরী৷ শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার নিজ বাড়িতেই গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়৷ গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ঐ কিশোরীকে জি বি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে৷ এদিকে, মৃতার পরিবারের তরফ থেকে সিধাই থানায় একটি মামলা করা হয়েছে৷ মামলার নম্বর ৩৯/১৭৷ মামলাটি হয়েছে আইপিসির ৩৫৪(ডি), ৩০৬ এবং ৫০৬ ধারা মোতাবেক৷ পুলিশ মামলা নিয়ে অভিযুক্ত অমল সূত্রধরকে গ্রেপ্তার করার জন্য তল্লাসী চালিয়েছে৷ কিন্তু, পুলিশ জানিয়েছে সে পালিয়ে আত্মগোপন করেছে৷ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে৷