চাকুরী বাতিল নিয়ে চরম অসন্তোষের মধ্যে সমাধান সূত্রের সন্ধানে সিপিএম রাজ্য কামিটির বৈঠক নিষ্ফলা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ এপ্রিল৷৷ রাজ্যে চরম অসন্তোষের পরিস্থিতির মাঝেই সিপিএম রাজ্য কমিটির দুই দিনের বৈঠক

শনিবার থেকে শুরু হয়েছে সিপিএম রাজ্য কমিটির দুই দিনের বৈঠক৷ ছবি নিজস্ব৷

শুরু হয়েছে শনিবার৷ এই বৈঠকে অন্যতম বিষয় হিসেবে আলোচনায় উঠে এসেছে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী বাতিল হওয়ার বিষয়টি৷ সূত্রের খবর, এদিন রাজ্য কমিটির পক্ষ থেকে ঐ ১০৩২৩ জন শিক্ষককে চাকুরীতে বহাল রাখা এবং তা সম্ভব না হলে রাজ্য প্রশাসনের অন্য কোন দপ্তরে পুণর্বাসন দেওয়া নিয়ে প্রস্তাব উঠে৷ রাজ্য কমিটির সদস্য তথা শিক্ষা এবং আইন দপ্তরের মন্ত্রী তপন চক্রবর্তী স্পষ্ট জানিয়ে দেন কোনটাই সম্ভব হচ্ছে না৷ সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য তথা মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারও জানান, কোন মতেই রাজ্য সরকারের পক্ষে চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের চাকুরীতে বহাল রাখা কিংবা অন্য দপ্তরে পুণর্বাসন দেওয়া সম্ভব নয়৷ সূত্রের আরও খবর, মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন আইন দপ্তরের উচ্চ পদস্থ আধিকারীক এবং আইন বিশেষজ্ঞদের সাথে এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷ তাতে কোন ফাঁক ফোঁকর বেরিয়ে আসেনি৷ সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনেই রাজ্য সরকারকে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়াতেই শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে৷ এক্ষেত্রে যারা যোগ্য তারা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চাকুরী পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকছে৷ রাজ্য সরকার রিভিউ পিটিশন দাখিল করবে কি না সেই বিষয়টিও উঠেছে এদিনের বৈঠকে৷ এই বিষয়েও স্পষ্ট করে রাজ্য কমিটিকে কিছুই জানানো সম্ভব হয়নি মুখ্যমন্ত্রী এবং আইন মন্ত্রীর৷ ফলে, শিক্ষকদের চাকুরীচ্যুতি ইস্যুতে এদিনের বৈঠক কার্য্যত নিষ্ফলা সমাপ্ত হয়েছে৷ তবে, সূত্রের আরও দাবি চাকুরীচ্যুত শিক্ষকদের সিপিএমের উপর আস্থায় যাতে কোনও মতেই ফাটল না ধরে সেদিকে নজর রাখার জন্য পার্টির সকল অংশের নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
এদিকে, এদিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে সদস্যপদ নবীকরণ নিয়েও পর্যালোচনা হয়েছে৷ পাশাপাশি আন্দোলন কর্মসূচীতে মানুষের স্বতস্ফুর্ত অংশগ্রহণ নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে৷ পার্টির এই হাল কেন, সেই বিষয়েও চুলচেড়া বিশ্লেষণ হয়েছে৷
বিভিন্ন লোক্যাল, মহকুমা এবং জেলা কমিটির নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে রাজ্য কমিটির সদস্যদের কাছে মানুষের অসন্তোষের লম্বা ফর্দ তুলে ধরা হয়েছে৷ যেসকল প্রলোভন দেখিয়ে পার্টির বিভিন্ন কর্মসূচীতে মানুষের বিপুল অংশগ্রহণ করানো সম্ভব হত আজ সেখানে ভাটা পড়েছে৷ একদিকে বেকারদের সন্তুষ্ট করা যাচ্ছে না, অন্যদিকে কেন্দ্রের চাপে নানা প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে না স্বদলীয়দের৷ ফলে, মানুষের পার্টি কর্মসূচীর প্রতি অনিহা দিন দিন বেড়ে চলেছে৷ এই পরিস্থিতিতে কেবলমাত্র নারী সমিতিকে বাদ দিলে, যুব এবং অন্যান্য সংগঠনের কর্মীদের বিপুল সমাগম ঘটানো দুস্কর হয়ে উঠেছে৷ এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার কি উদ্যোগ নিতে পারে যাতে করে স্বদলীয়দের মানভজনা করা সম্ভব হয়৷ রাজ্য কমিটির অধিকাংশ সদস্যরাই এদিন দলের শীর্ষ নেতৃত্বদের কাছে এই বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে সুরাহা জানতে চান৷ তবে, আপাতত কোন সুরাহাই বের হয়নি৷ সূত্রের খবর, আইনী গ্যাঁড়াকল এবং কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কেন্দ্রের কড়া নজরদারীর ফলে খুব সহজে এখন আর আগের মতো সুযোগ সুবিধা দেওয়া সম্ভব নয় বলে রাজ্য কমিটিতে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে৷ ফলে, পন্থা বদল করে দলের উপর যারাই অসন্তুষ্ট তাদের আবার ফিরিয়ে আনার জন্য এদিন বৈঠকে জোর দেওয়া হয়েছে৷ আগামীদিনে বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচীতে এবং সদস্যপদ নবীকরণে মানুষের স্বতস্ফুর্ততা বাড়ানোর বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেছে সিপিএম রাজ্য কমিটি৷