দেশ জুড়িয়া যখন বাতিল নোটের কারণে জনজীবনে, ব্যবসায় বাণিজ্যে ছন্দপতন ঘটিয়াছে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অচলাবস্থা কায়েম হইয়াছে,তখন ত্রিপুরার দুইটি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হইতে যাইতেছে৷ ঊনিশে নভেম্বর এই উপনির্বাচন দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ৷ কংগ্রেস বিধায়ক জীতেন সরকার পদত্যাগ করায় বড়জলা আসনটি শূন্য হয়৷ অন্যদিকে, সিপিএম বিধায়ক সমীর দেব সরকারের মৃত্যুতে খোয়াইর শূন্য আসনে উপনির্বাচন হইতেছে৷ সিপিএম দল হইতে বহিসৃকত হইবার পরই জীতেন সরকার কংগ্রেসে যোগ দেন৷ কিন্তু, কংগ্রেসের সুদীপ বর্মনরা তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিলেও জীতেন সরকার বিধায়ক পদ হইতে ইস্তফা দিয়া সিপিএম দলে যোগ দেন৷ কিন্তু, সিপিএম বড়জলা কেন্দ্রে তাঁহাকে টিকিট দেয় নাই৷ তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিবার পর দলত্যাগ বিরোধী আইন বাঁচাইয়া সুদীপবাবুরা বিধায়ক পদ রক্ষা করিতে পারিয়াছেন৷ তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্য বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দল হিসাবে পরিচিত হইয়াছে৷ ত্রিপুরায় এই দুইটি আসনের উপনির্বাচনেই স্পষ্ট হইয়া যাইবে রাজ্যে জনমানসের কাছে প্রধান বিরোধী দল কোনটি? এই উপনির্বাচনী ফলাফল আরও বেশী প্রমাণ করিয়া দিবে যে, নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ত্রিপুরার মানুষ কতখানি মানিয়া নিয়াছেন৷ ২০১৮ সালে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনের লক্ষ্যে এখনই যে রাজনৈতিক দলগুলি ভাবনা তৎপরতা শুরু করিয়া দিয়াছে সে বিষয়ে সন্দেহ নাই৷ এই নির্বাচনী ফলাফল ২০১৮র নির্বাচনের রণ কৌশল গ্রহণে বড় ভূমিকা নিতে পারে৷ সুতরাং নানা দিক দিয়াই উনিশে নভেম্বরের দুই আসনের উপনির্বাচন অনেক বেশী গুরুত্ব বহন করিতেছে৷
নোট বাতিলের ফলে দেশ জুড়িয়াই এক অর্থনৈতিক অচলাবস্থা কায়েম হইয়াছে৷ এই অচলাবস্থার বিরুদ্ধে জনরোষ ভাঙ্গিয়া পড়িয়াছে এমন দেখা যাইতেছে না৷ সংসদে উত্তাল হাওয়া চলিতেছে৷ কিন্তু, জনতার রোষ তো ময়দান কাঁপাইতেছে না৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমজনতাকে বুঝাইতে হয়তো সফল হইয়াছেন যে, নোট বাতিল হইয়াছে দেশের স্বার্থে, কালো টাকা উদ্ধারের লক্ষ্যে৷ সাধারণ গরীব মানুষ মোদির কথা বিশ্বাস করিয়াছে হয়তো৷ একথা তো ঠিক, কালো টাকা দেশের সব চাইতে বড় সমস্যা৷ এই সমস্যার কারণেই সবচাইতে বেশী ভুগিতেছেন গরীব অংশের মানুষ৷ স্বাধীনতার পর এত বড় পদক্ষেপ কোনও সরকারই নিতে পারে নাই৷ যদি মোদি এই বিশাল ধাক্কা সামাল দিয়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করিতে পারেন তাহা হইলে দেশে নবজাগরণ ঘটিবে৷ আর্থিক ক্ষেত্রে রেঁনেসার সন্ধান মিলিতে পারে৷ ত্রিপুরার দুটি আসনের উপনির্বাচনেই প্রমাণ হইয়া যাইবে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত মানুষ কতখানি মানিয়া নিয়াছেন৷ তৃণমূল সুপ্রিমো নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবীতে ধরণা আন্দোলনে নামিয়া পড়িয়াছেন৷ দিল্লীতে কেজরিওয়ালের হাত ধরিয়া প্রধানমন্ত্রীকে তিন দিনের সময় বাঁধিয়া দিয়াছেন৷ তিনদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হইলে দুর্বার আন্দোলন গড়িয়া তোলা হইবে বলিয়া মমতা স্পষ্ট জানাইয়া দিয়াছেন৷ দুর্বার আন্দোলন কি দেশ জুড়িয়া হইবে? পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া তো হিল্লি দিল্লীতে তৃণমূলের সংগঠন নাই৷ সেখানে আম আদমী পার্টির হাত ধরিয়া আগাইতে হইবে মমতাকে৷ দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলি নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত খারিজের দাবীতে জোর প্রতিবাদ করিয়াছেন এমন বলিবার জো নাই৷ কারণ, সংসদ অচল করা খুব সহজ৷ সাধারণ মানুষকে আন্দোলনে সামিল করা অনেক বেশী কঠিন৷ সাধারণ মানুষ ‘কালো টাকা’ উদ্ধারের শ্লোগানকে অনেক বেশী সমর্থন করিয়াছে৷ এই কালো টাকাই যে গরীব মানুষের পক্ষে খুব বেশী ক্ষতিকর তাহা হয়তো আম জনতা বুঝিতে পারিয়াছেন৷ এই যখন পরিস্থিতি, তখন রাজ্যের দুটি আসনের উপনির্বাচনী ফলাফল রাজনৈতিক পথ নির্দেশনায় অনেক বেশী কার্য্যকরী ভূমিকা নিতে পারিবে বলিয়া মনে হয়৷ ইহাও মনে হয় যে, ত্রিপুরায় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নতুন দিক দর্শন আনিয়া দিবে, যাহা রাজনৈতিক নেতাদের নতুন করিয়া ভাবিতে শিখাইবে৷
2016-11-19