নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ আগস্ট৷৷ এমবিবি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বক্তব্যে
রীতিমত অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন রাজ্যপাল তথাগত রায়৷ রাজ্যপালের ভাষণের মধ্য দিয়ে অসন্তোষের স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপনীত হওয়ার পর ছাত্র সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল৷ এধরনের সিদ্ধান্তকে অধিকারের উপর হস্তক্ষেপের সামিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷ এমবিবি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল তথাগত রায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্পষ্টভাবেই বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎকর্ষতা বাড়াতে হলে ছাত্রছাত্রীদের গবেষণা ও পড়াশুনায় মনযোগ দিতে হবে, রাজনীতিতে নয়৷ তিনি আরো বলেন, দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য আন্দোলন না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎকর্ষতা বাড়াতে গবেষণা ও পড়াশুনার প্রতি মনযোগী হওয়া ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই দায়িত্ব কর্তব্য৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালের বক্তব্যের মধ্যে রীতিমত তরজার লড়াই পরিলক্ষিত হয়েছে৷ এধরনের ঘটনায় শিক্ষাবিদ সহ উপস্থিত প্রায় সকলেই রীতিমত বিস্মিত হয়েছেন৷ রাজ্যপালকে মঞ্চে বসিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এধরনের বক্তব্য উপস্থাপন করায় রাজ্যপাল যে রীতিমত চটে লাল হয়ে গেছেন তাও বুঝতে অসুবিধে হয়নি অনুষ্ঠানে সমাগত শিক্ষা প্রেমীদের৷
ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা, সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে, উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে আজ যাত্রা শুরু করেছে নবগঠিত মহারাজা বীরবিক্রম বিশ্ববিদ্যালয়৷ বর্ণময় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথাগত রায়৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা উপজাতি এলাকা স্বশাসিত জেলা পরিষদের মুুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য রাধাচণ দেববর্মা৷ সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা মন্ত্রী তপন চক্রবর্তী৷ চলতি বছরের আগষ্ট মাস থেকেই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন পাঠন শুরু হয়ে গেছে৷ বর্তমানে ১২২ জন ছাত্র-ছাত্রী ছারটি বিষয়ে পড়াশুনা করছেন৷ চারটি বিষয় হলো, ইংরেজী, পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন, লাইব্রেবী সায়েন্স এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিস এবং এপ্লাইড ম্যাথামেটিক্স৷ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় এম বিবি কলেজের মাঠে৷ নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন করে রাজ্যপাল এবং এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথাগত রায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাগত জানান৷ রাজ্য সরকারের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার জন্য তিনি সরকারকে অভিনন্দন জানান৷ তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় একদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অন্যদিকে গবেষণা কেন্দ্রও৷ কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎকর্ষ বিচার হয় মূলতঃ প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা, গবেষণা এবং অতিরিক্ত শিক্ষা কর্মসূচীর উপর৷ তিনি আশা প্রকাশ করেন আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এটি দেশের মধ্যে একটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠবে৷ রাজ্যপাল বলেন, কয়েকদিন আগে একটি দুঃখ জনক ঘটনা ঘটে গেছে৷ তাতে ত্রিপুরার গৌরবময় ঐতিহ্য বিঘ্নিত হয়েছিল৷ রাজ্যের ঐক্য সংহতি সৌভ্রাতৃত্ব আরও সুদৃঢ় করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি৷
মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার তাঁর বক্ততায় রাজ্যে শিক্ষার পরিকাঠামোর প্রসারে ধারাবাহিক আন্দোলনের কথা তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, সময়োপযোগী এবং আরও ভাল পঠন পাঠনের জন্য রাজ্য সরকারের দাবি অনুযায়ীই ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়৷ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নতুন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে৷ তার বাইরেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে, রাজ্যের ছাত্র-ছাত্রীরা যেন পড়াশুনা করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এজন্যই নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল৷ এই বিশ্ববিদ্যালয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফলশ্রুতি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর বলে গেছেন উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মূল লক্ষ্য হওয়া দরকার চরিত্র গঠন৷ প্রকৃত মানুষ তৈরী করা৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ছাত্রছাত্রীদের সত্যবাদী, সাহসী, আত্মবিশ্বাসী, দেশপ্রেমীক, বিশ্ব ভ্রাতৃত্ববোধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে৷ তিনি বলেন, আত্মকেন্দ্রিকতা আমাদের পরিবারগুলিকে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে৷ এই পরিস্থিতি থেকে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের রক্ষা করতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন৷
2016-09-01

