ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত দুই রোগীর মৃত্যু ঘিরে উত্তপ্ত জি বি, খোয়াই হাসপাতালে নিরাপত্তা রক্ষীদের দাদাগিরির শিকার রোগীর স্বজনরা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা/খোয়াই, ১৯ আগষ্ট৷৷ স্বাস্থ্যকর্মীদের অসহযোগিতায় রোগীকে সিটিস্ক্যান সেন্টারে সময়মতো নিয়ে যেতে না পারায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এক রোগী৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার জি বি হাসপাতাল চত্বরে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়৷ এদিকে, স্বাস্থ্যকর্মীদের অসহযোগিতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক৷
AGMCরাজ্যের প্রধান রেফারেল হাসপাতাল জি বিতে কর্তব্যরত স্বাস্থ্যকর্মীদের অবেহলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সকালে জি বি হাসপাতালে উত্তেজনা ছড়ায়৷ ঘটনার বিবরণে জানা গিয়েছে, এদিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ পশ্চিম জয়নগরের রাজনগর সুকল সংলগ্ণ এলাকার বাসিন্দা বাপন দাস নিজ বাড়িতেই ব্রেইন স্ট্রোক হয়৷ পরিবারের লোকজন বাপন দাসকে সাথে সাথে আইজিএম হাসপাতালে নিয়ে আসেন৷ অবস্থা গুরুতর হওয়ায় আই জি এম হাসপাতাল থেকে বাপন দাসকে জি বি হাসপাতালে রেফার করা হয়৷ জি বি হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক অক্সিজেনের সিলিন্ডারের মাধ্যমে বাপন দাসের কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস চালু করে সিটি স্ক্যান করানোর জন্য পরামর্শ দেন৷ আর তখনই দেখা দেয় সমস্যা৷ রোগীর সাথে ছিলেন উনার বৃদ্ধ বাবা এবং ছোট ভাই৷ রোগীর ছোট ভাই সিটি স্ক্যানের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করার পর রোগীকে সিটি স্ক্যানের রুমে নিয়ে যেতে একটু সহযোগিতা করার জন্য মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীদের অনুরোধ জানান৷ কিন্তু কোন স্বাস্থ্যকর্মী এই ক্ষেত্রে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি বলে অভিযোগ৷ এরই মধ্যে প্রায় দেড়ঘন্টা সময় অতিবাহিত হয়ে যায় এবং রোগীর অবস্থা বেগতিক হতে থাকে৷ একসময় ব্রেইন স্ট্রোকের রোগী বাপন দাস মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন৷
এদিকে, এই অভিযোগ অস্বীকার করেন জি বি হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক৷ তিনি জানান, উনি নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন৷ রোগীর পরিজনরা এই অভিযোগ করেননি৷ বহিরাগত কিছু লোক এই অভিযোগ করেছেন৷ চিকিৎসক জানান, আসল ঘটনা হচ্ছে রোগীর বাবা সিটি স্ক্যান করতে রাজী ছিলেন না৷ সিটি স্ক্যান না করানোয় রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন৷ এদিকে, প্রায় একই সময় গৌতম সুত্রধর নামে বড়জলা থেকে একই রোগে আক্রান্ত এক রোগীকে জি বি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়৷ এই অবস্থায় হাসপাতাল চত্বরে প্রচন্ড হৈচৈ শুরু হয়৷ পরিজনদের হৈ চৈ শোনে গৌতম সূত্রধর মারা যায়৷ এই হাসপাতাল চত্বরে উত্তেজনা দেখা দেয় বলে জানা গিয়েছে৷
এদিকে, খোয়াই জেলা হাসপাতাল চত্বরে রোগীর পরিবারের লোকজনদের সাথে অভব্য আচরণ করায় খোয়াই জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক, জেলা শাসক এবং এসপির নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করল রোগীর পরিবারবর্গ৷ ভবিষ্যতে যেন এমন কোন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার জন্য প্রশাসন এবং সংবাদ মাধ্যমের কাছে অভিযোগ তুলে ধরেন অভব্য আচরণের শিকার ব্যক্তি৷ অভিযোগ পত্র অনুযায়ী, খোয়াই দুর্গানগর এলাকার বাসিন্দা খোকন সাহা বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক ১১টা নাগাদ খোয়াই জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর জন্য খাবার জোগারে এবং অন্যান্য খোঁজ খবর নিতে হাসপাতাল চত্বরে অবস্থান করছিলেন৷ তখনই সিকিউরিটি গার্ড উনাদের বাইরে যেতে বলেন এবং বারান্দায় দাঁড়িয়ে তারা সিকিউরিটি গার্ডকে জানায় আমরা চলে যাব, একটু সময় দিন৷ তখনই হাসপাতালে কোন কর্মী নয় রামু চন্দ নামে এক যুবক উনাদের সাথে অসংলগ্ণ ব্যবহার করেন যাতে উনারা অপমানিত বোধ করেন৷ ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত দারোগা বাবুর সামনেই যা খুশি বলতে থাকেন৷ সিকিউরিটি গার্ডের কাছে জানতে চান রামু চন্দ কে? সিকিউরিটি গার্ড এই প্রশ্ণের কোন সদুত্তর দিতে পারেনি৷
অভিযোগকারী খোকন সাহা জানান, আমার মত কোন রোগীর পরিবারকে যেন অপমানিত না হতে হয় তার জন্যই তিনি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক, জেলা শাসক ও এসপির নিকট৷ খোকন সাহার দাবি রামু চন্দ জেলা হাসপাতালের কোন কর্মী নয়৷ তাহলে সব সময় উনার অবস্থান কেন জেলা হাসপাতাল চত্বরেই থাকে? কিংবা রোগীর পরিবারের সাথে এমন অভব্য আচরণ করার দুঃসাহস কে দিল? ভবিষ্যতে যেন এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে তার আবেদন জানান খোকন সাহা৷