নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১২ আগষ্ট৷৷ প্রস্তাবিত সম্পদ করের বিরোধীতা করে পুর এলাকায় কংগ্রেসের ডাকা বারো ঘন্টার
বন্ধে বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটেছে৷ তা এদিন বিকালে সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা গোপাল রায় নিজেই স্বীকার করেছেন৷ সকাল থেকেই কংগ্রেসের পিকেটাররা রাজধানীতে দাপিয়ে বেরিয়েছেন৷ মহাকরণ যাবার পথে পিসিসি সভাপতি তথা বিধায়ক বীরজিৎ সিনহা সহ গোপাল রায়ের নেতৃত্বে প্রদেশ কংগ্রেস, যুব কংগ্রেস এবং এনএসইউআই’র কর্মী সমর্থকরা অবরোধ গড়ে তুলেন৷ তাঁদের সেখান থেকে সরানোর জন্য বিশাল পুলিশ বাহিনী ময়দানে নামে৷ সেখানে পুলিশের সাথে পিকেটারদের ধস্তাধস্তিও হয়েছে৷ এদিন কয়েকটি জায়গায় পিকেটাররা রাস্তায় যান বাহন চলাচল করতে দেখে ভাঙচুর চালিয়েছে৷ পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপার অভিজিৎ সপ্তর্ষি জানিয়েছেন, কয়েকটি গাড়ি পিকেটাররা ভাঙচুর করেছে৷ অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ এছাড়া এদিন পিকেটারদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ মাঠে নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷ প্রদেশ কংগ্রেসের দাবি বন্ধ চলাকালীন পিকেটিং করতে গিয়ে ১১৫ জন নেতা কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন৷ তবে, পুলিশ জানিয়েছে ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পিকেটিং করার সময়৷
এই বন্ধের জেরে গোটা রাজধানী আগরতলা কার্যত স্তব্ধ হয়ে পড়ে৷ দোকানপাট খোলেনি৷ অফিস কাছারিতে কর্মীদের উপস্থিতির হার ছিল খুবই নগন্য৷ খুলেনি শহরের বিভিন্ন সুকল৷ আগরতলা থেকে দূরপাল্লার কোন যানবাহন চলাচল করতে না পারলেও শিলচরগামী ট্রেনটি যথাসময়ে আগরতলা স্টেশন থেকে যাত্রী নিয়ে গিয়েছে৷ এদিকে, মহিলা কংগ্রেসও বন্ধের সমর্থনে এদিন সকালে আগরতলায় বিভিন্ন স্থানে পিকেটিং করেছে৷ পুর নিগমের অফিসের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতেও তাদের দেখা গিয়েছে৷
এদিন সকালে হাসপাতালে যাওয়ার পথে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দিলীপ দাস ও তাঁর মেয়ে পিকেটারদের রক্তচক্ষুর শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ৷ তাঁদের গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে অভিযোগ এনে ডাঃ দিলীপ দাস আগরতলা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেছেন৷ অভিযুক্ত হিসেবে এনএসইউআই কর্মী রাকেশ দাসকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে৷ এদিকে, ডাঃ দিলীপ দাস রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে বন্ধ চলাকালীন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতেই প্রদেশ কংগ্রেস কার্য্যালয়ের সামনে বাক বিতন্ডায় লিপ্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ৷ তখন ডাঃ দাস পিসিসি সভাপতি এবং অন্যান্য কংগ্রেস কর্মীদের সাথেও বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন৷ তিনি থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করলেই তখনই প্রদেশ কংগ্রেসও তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানায়৷ ডাঃ দাসকে নিগ্রহে অভিযুক্ত রাকেশ দাসও তাঁর বিরুদ্ধে থানায় পাল্টা মামলা করেছেন৷
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপি সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদেশ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে৷ বিজেপির প্রদেশ সভাপতি বলেন, চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না৷ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ডাক্তারী পেশায় যোগ দিতে যাওয়ার সময় প্রদেশ কংগ্রেস কর্মীরা অযথা ডাঃ দাস ও তাঁর মেয়েকে নিগ্রহ করেছে৷ সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ডাঃ দাসও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷ তিনি বলেন, বন্ধ চলাকালীন সময়ে যদি চিকিৎকদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে তাহলে আগামীদিনে এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখী যাতে না হতে হয় তার জন্য বন্ধ বা কোন অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে চিকিৎসকরা নিজেদের বাঁচাতে পেশাগত দায়িত্ব পালন এড়িয়ে যাবেন৷ চিকিৎসকদের উপর হামলা সভ্য সমাজে লজ্জাস্কর৷ এদিকে, বিকালে সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদেশ কংগ্রেস তাদের বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগের খন্ডন করে জানায়, ডাঃ দাসই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বন্ধ চলাকালীন এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন৷ শান্তিপূর্ণ ভাবে বন্ধ চলছিল৷ কিন্তু, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে বিজেপি ডাঃ দাসকে ময়দানে নামিয়েছে৷ এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, প্রস্তাবিত পুর কর প্রত্যাহারের দাবীতে বন্ধ সর্বাত্মক সফল হয়েছে৷ তবে, শীঘ্রই তাদের দাবী মেনে নেওয়া না হলে প্রদেশ কংগ্রেস বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে৷ নিগম ঘেরাও সহ আইন অমান্য আন্দোলন করতেও প্রদেশ কংগ্রেস প্রস্তুত৷ তিনি বলেন, সকালে ডাঃ দাসের গাড়ি লক্ষ্য করে দুসৃকতিরা ঢিল ছুঁড়েছে অথচ এর সাথে প্রদেশ কংগ্রেসের নাম জড়ানো হয়েছে৷
তবে, এই বন্ধ যে মোটেও শান্তিপূর্ণ ছিলনা সেকথা প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বরা স্বীকার করেছেন৷ কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতা নিজেই জানিয়েছেন, আশ্রম চৌমুহনী, রাধানগর সহ কয়েকটি স্থানে গাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে৷ তবে এর জন্য তিনি শাসক দলকে দায়ী করেছেন৷ তাঁর অভিযোগ শাসক দল সরাসরি ময়দানে না নেমে পুলিশকে দিয়ে বন্ধ বানচাল করার চেষ্টা করেছে৷ তবে, কংগ্রেসের পিকেটাররা সমস্ত কিছু প্রতিরোধ করেছে৷ এজন্যই কয়েকটি স্থানে গন্ডগোল হয়েছে৷
এই বিষয়ে সিপিএম ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক মন্ডলী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, জনগণের সমর্থন আদায়ে ব্যর্থ হয়ে কংগ্রেসের নেতা কর্মীরা হামলা হুজ্জুতির আশ্রয় নিয়েছে৷ একজন কর্তব্যরত চিকিৎসক, পুর কর্পোরেশনের জঞ্জাল সাফাইয়ের গাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছে৷ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মন্ডলী৷ তাদের দাবি কংগ্রেসের ডাকে তথাকথিত আগরতলা বন্ধ রাজধানী শহরের নাগরিকরা প্রত্যাখ্যান করেছেন৷ বিবৃতিতে জানিয়েছে, এদিন সরকারী অফিসগুলিতে স্বাভাবিক হাজিরায় কাজ হয়েছে৷ রেল ও বিমান পরিষেবা চালু ছিল৷ ছাত্র ও শিক্ষকরা সুকলে-কলেজে যোগ দিয়েছেন৷ আগরতলা থেকে দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল করেছে৷ অটোরিক্সা ও রিক্সাও চলাচল করেছে৷ অনেক এলাকায় দোকান পাটও খোলা ছিল৷ সব মিলিয়ে এদিন বন্ধকে ঘিরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গিয়েছে৷