BRAKING NEWS

রেল ইতিহাসে বিপ্লব, নবযুগের সূচনা, দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান, যাত্রীঠাসা ত্রিপুরা সুন্দরীর দিল্লী পাড়ি

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ জুলাই৷৷ অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ৷ দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ব্রডগেজ ইঞ্জিনের

রবিবার আগরতলা স্টেশন থেকে দিল্লীর আনন্দবিহার স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রী নিয়ে রওয়ানা দিল ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেস৷ নিজস্ব ছবি৷
রবিবার আগরতলা স্টেশন থেকে দিল্লীর আনন্দবিহার স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রী নিয়ে রওয়ানা দিল ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেস৷ নিজস্ব ছবি৷

সাইরেন বাজিয়ে আগরতলা থেকে দিল্লী ছুটল ত্রিপুরা সুন্দরী এক্সপ্রেস৷ ভিড়ে ঠাসা ছিল এই ট্রেন৷ সংরক্ষিত এবং অসংরক্ষিত উভয় কামরাতেই প্রচুর যাত্রী এই রেলে করে ভ্রমণ শুরু করেছেন৷ রবিবার আগরতলা-দিল্লী ত্রিপুরাসুন্দরী এক্সপ্রেসের আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়৷ সেই সাথে রাজ্যবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ণ পূরণ হয়৷ এদিন দুপুরে আগরতলা রেল স্টেশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আগরতলা থেকে দিল্লীগামী আগরতলা-আনন্দবিহার ত্রিপুরাসুন্দরী এক্সপ্রেসের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু৷ একই সঙ্গে এই অনুষ্ঠানেই আজ আগরতলা থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ ব্রডগেজ লাইনের আনুষ্ঠানিক শিলান্যাস করেন দুই রাষ্ট্রের রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু এবং মহম্মদ মুজিবল হক৷
গত কয়েকদিন ধরে ব্রডগেজে দূরপাল্লার যাত্রী রেলের সূচনাকে ঘিরে উৎসাহ এবং উদ্দীপনা সমান আকারে লক্ষ্য করা গেছে গোটা রাজ্যে৷ স্বপ্ণ পূরণের মধ্য দিয়ে রাজ্যবাসী যেন জীবনের নতুন খোরাক খঁুজে পেয়েছে বলে মনে হচ্ছিল৷ ৩১ জুলাই রবিবার স্বাভাবিকভাবেই ত্রিপুরার ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে৷ স্বাধীনতার ৬৯ বছরে ত্রিপুরা রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে সারা দেশের মূলস্রোতে স্থান করে নিয়েছে৷ দেশের রেল মানচিত্রে স্থান পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই আবেগ আপ্লুত গোটা রাজ্যবাসী৷ ২০০৮ সালে মিটারগেজ ইঞ্জিন দিয়ে রেল যোগাযোগ ক্ষেত্রে নাম জড়িয়েছিল ত্রিপুরা৷ তবে, মূলস্রোতে যুক্ত হতে ব্রডগেজ ট্রেনের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে জরুরি ছিল৷ গত সেপ্ঢেম্বর মাসের ২০ তারিখ থেকে ব্রডগেজে রূপান্তরের জন্য শুরু হয় মেগা ব্লক৷ মিটারগেজ থেকে ব্রডগেজ রূপান্তরের কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন করে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে৷
রাজ্যবাসীর প্রত্যাশা পূরণে তখন থেকে শুরু হয় দিনগোনা৷ সুরক্ষা পর্যবেক্ষণ যথা সময়ে সম্পন্ন হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আনুষ্ঠানিকভাবে আগরতলা থেকে দূরপাল্লার যাত্রী রেল পরিষেবা থমকে যায়৷ এর আগে দুবার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল ব্রডগেজে দূরপাল্লার যাত্রী রেল পরিষেবার সূচনা করার৷ কিন্তু মাইগ্রেনদিসায় রেল লাইন ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হতাশা দেখা দেয় রাজ্যবাসীর মনে৷ দীর্ঘ প্রতীক্ষার দিন যেন আর কাটতেই চাইছিল না৷ এদিকে, পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলওয়ের আপ্রাণ চেষ্টায় অবশেষে স্বাভাবিক হয়ে ওঠে পাহাড় লাইন৷ মাইগ্রেনদিসায় ৩০০ মিটার ডাইভারশান করে নতুন ট্র্যাক বসায় পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলওয়ে৷ তাতে, সাফল্য মিলতেই চালু করে দেওয়া হয় পণ্যবাহী এবং যাত্রীবাহী রেল৷ এরপর কালবিলম্ব না করে ত্রিপুরাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ণ পূরণে ঘোষণা দেওয়া হয় আগরতলা-দিল্লী যাত্রী রেল পরিষেবা৷ সে মোতাবেক স্থির হয়ে যায় রেলের নাম৷ ত্রিপুরার মানুষের ভাবাবেগকে মর্যাদা দিয়ে ভারতীয় রেলওয়ে আগরতলা থেকে দিল্লী রেলের নামাকরণ করে ত্রিপুরাসুন্দরী এক্সপ্রেস৷
রবিবার, সমগ্র আগরতলা স্টেশন চত্বরে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ৷ কাতারে কাতারে মানুষ ব্রডগেজে দূরপাল্লার প্রথম যাত্রী রেল সূচনার সাক্ষী হতে উপস্থিত হন আগরতলা রেলস্টেশনে৷ এদিন এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলওয়ের তরফে ১২ হাজারের অধিক আসনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল৷ কিন্তু এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিতির হার ছিল নূ্যনতম ১৫ হাজার৷
কেবল স্টেশনের বাইরে নয়, ভেতরেও ছিল উৎসাহী মানুষের ঠাসা ভিড়৷ যাত্রী সংখ্যা যতটা না ছিল তার অধিক ছিল ব্রডগেজে রাজ্যের দূরপাল্লার প্রথম রেলকে চাক্ষুস দেখার জন্য উপস্থিত মানুষের সংখ্যা৷ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সমানভাবে যেন মনোরম এই পরিবেশের উপভোগ করছিলেন৷ এদিন, আগরতলা স্টেশনে সকল অংশের মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন৷ জাতপাত ধর্ম নির্বিশেষে একাকার হয়ে ত্রিপুরাসুন্দরী এক্সপ্রেসের যাত্রা উপভোগ করেছেন৷
জনৈক যাত্রী তার পরিবারকে কৌতুকের ছলে বলেন, ত্রিপুরাসুন্দরী এক্সপ্রেস দিয়ে দিল্লী চলো৷ এছাড়াও এদিন যেসকল যাত্রীরা প্রথমবারের মতো ব্রডগেজে দূরপাল্লার রেল ভ্রমণে যাচ্ছিলেন তাদের চোখেমুখে স্বপ্ণপূরণের ছবি স্পষ্ট ফুটে উঠেছিল৷ বহু উঠতি বয়সের যুবক যুবতীরা এই রেলের সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি নেওয়ার আনন্দ উপভোগ করছিলেন৷ মুহূর্তের মধ্যে বিরাট কিছু জয় হয়েছে এমন ভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছবিগুলো আপলোড করে দেওয়া হয়েছিল৷ সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে এদিন, দেশের প্রান্তিক অংশে অবস্থিত পার্বতী রাজ্যে দূরপাল্লার ব্রডগেজ ইঞ্জিনের সূচনার মাধ্যমে স্বপ্ণ জয়ের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে৷ সব মিলিয়ে উচ্ছ্বাসে আনন্দে জনজোয়ারে রবিবার দিল্লী পাড়ি দিয়েছে স্বপ্ণ রেল ত্রিপুরাসুন্দরী এক্সপ্রেস৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *