BRAKING NEWS

দীর্ঘ লড়াই’র মাধ্যমে রেল এসেছে, আরও সংগ্রাম সামনে ঃ মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ জুলাই৷৷ বহু লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে কেন্দ্রের অনিচ্ছুক হাত থেকে অনেক কিছুই আদায় করা হয়েছে৷ আগরতলা-দিল্লী ত্রিপুরাসুন্দরী এক্সপ্রেসের সূচনা এরই অঙ্গ৷ তবে, তাতে আত্ম সন্তুষ্ট হলে চলবে না৷ সামনে আরো

বক্তব্য রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷
বক্তব্য রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷

অনেক কিছুর জন্যই লড়াই অপেক্ষা করছে৷ দাবি পূরণে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করলে লড়াই করে সেই দাবি আদায় করা হবে বলে অনেকটা হঁুশিয়ারির সুরে বলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার৷ রবিবার আগরতলা-দিল্লী ত্রিপুরাসুন্দরী এক্সপ্রেসের আনুষ্ঠানিক সূচনা অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুকে মঞ্চে বসিয়ে আগামীদিনে আরো দাবি পূরণে গণতান্ত্রিক চেতনাকে আরো বিকশিত করে সেই লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলে রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে বার্তা দেন তিনি৷
এদিন, মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বক্তব্য রেলের দাবিতে আন্দোলনের দিনগুলির কথা বারবারই ঘুরে ফিরে আসে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরার জনগণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ব্রডগেজ রেললাইনের যে সূচনা পর্ব তা সম্পন্ন হল৷ তিনি বলেন, এই রেল ত্রিপুরায় আপনা আপনি আসেনি৷ এটা দীর্ঘ ৬০ বছরের ধারাবাহিক সংগ্রামের ফলশ্রুতি৷ ১৯৫২ সালের নির্বাচনে সাংসদ নির্বাচিত হবার পর থেকেই বীরেন দত্ত, দশরথ দেবরা ত্রিপুরায় রেল লাইন স্থাপন করার জন্য বারবার কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন৷ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় ত্রিপুরায় শিল্প নেই, তাই রেল লাভজনক হবে না৷ রেল এবং শিল্প দুটোই করার জন্য কেন্দ্রের কাছে জোরালো দাবি জানানো হলেও কেন্দ্রের কোন সদর্থক ভূমিকা দেখা যায়নি৷ রাজ্য বিধানসভায় এনিয়ে অনুরূপ দাবি উঠলেও কোনো ইতিবাচক উত্তর পাওয়া যায়নি৷ রেলের দাবিতে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল দিল্লী গেলেও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী যে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময় দেননি এ বিষয়টিও মুখ্যমন্ত্রী তার ভাষণে উল্লেখ করেন৷ সে দিনের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, প্রতিনিধি দল শেষ পর্যন্ত ‘আম দরবারে’ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মিনিট দুয়েক সাক্ষাৎ করার সুযোগ পেলেও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে শুধু মুচকি হাসিই পাওয়া যায়৷ সেই সফরেই তৎকালীন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করা গেলেও তিনি কোন প্রতিশ্রুতি দেননি৷ এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে ওঠে আসে ‘৮৬ সালের রেলের দাবিতে দিল্লী অভিযানের বিষয়টি৷
তিনি বলেন, ত্রিপুরায় এমন কোন গণ আন্দোলন হয়নি যেখানে রেলের দাবি জানানো হয়নি৷ এই দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল হিসাবে ত্রিপুরায় ব্রডগেজ রেল চালু হল৷ তবে এখনো আত্মসন্তুষ্টির কোন অবকাশ নেই৷ রেল সাব্রুম পর্যন্ত পৌঁছে দিতে হবে দ্রুত৷ সপ্তাহে তিন, এরপর পাঁচ এবং সর্বশেষে সপ্তাহে প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে এই রেল চালু করতে হবে৷ তিনি এখান থেকে রাজধানী এক্সপ্রেস চালুর এবং ত্রিপুরায় রেল ডিভিশন খোলার দাবি জানিয়ে বলেন, আজ আমাদের আনন্দের দিন৷ তিনি ত্রিপুরায় পেট্রোল, ডিজেলের সংকট থেকে উত্তরণের জন্য রেলে করে পেট্রোল ডিজেলের বগি এখানে আনার জন্য উদ্যোগ নিতে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনটি হচ্ছে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ের ফসল৷ দাবি সঠিক হলে এবং মানুষকে বুঝানো গেলে মানুষই ইতিহাস রচনা করে৷ ফের তা একবার প্রমাণ হল৷
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজ্যপাল তথাগত রায় বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ যে স্থাপিত হচ্ছে এটা একটা বিরাট বিষয়৷ এই দুই দেশ শুধু বন্ধুই নয়, ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে৷ নানা দিক দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরো বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরাকে সারা দেশের সঙ্গে যুক্ত করার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে তার গুরুত্ব নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না৷
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী মহম্মদ মুজিবল হক বলেন, বাংলাদেশ এবং ভারত হচ্ছে পরীক্ষিত বন্ধু৷ দু’দেশের যাতায়াত সহজ করা, ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে আগরতলা-আখাউড়া রেল প্রকল্প চালু হচ্ছে৷ তিনি বলেন সন্ত্রাসবাদ আজ সারা বিশ্বের সমস্যা৷ দু’দেশ একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা রেখে এই সমস্যার মোকাবেলা করবে৷
অনুষ্ঠানে পরিবহনমন্ত্রী মানিক দে রাজ্যে রেল প্রাপ্তির জন্য দীর্ঘ আন্দোলনের কথা তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, ১৯৫২ সালে সংসদের ভেতর রাজ্যের জন্য রেলের দাবি উঠেছিল৷ এই ক্ষেত্রে ঐ সময়কার সাংসদ দশরথ দেব এবং বীরেন দত্তের অবদানের কথাও তিনি তুলে ধরেন৷ রাজ্যবাসীর দীর্ঘ লড়াই আন্দোলনের ফলেই আজকের এই সাফল্য বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷
জাতীয় সড়কের সমস্যার দরুণ রাজ্যে ডিজেল পেট্রোলের সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী মানিক দে রেলের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করতে রেলমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান৷ তিনি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পেট্রো পণ্য পাঠানোর ব্যবস্থা করতেও অনুরোধ জানান৷ পাশাপাশি আগরতলা-আখাউড়া রেল প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা এবং সাব্রুম পর্যন্ত দ্রুত রেলের কাজ সম্পন্ন করতেও অনুরোধ জানান৷ পরিবহনমন্ত্রী শ্রী দে রেলের জন্য যারা জমি দিয়ে সহযোগিতা করেছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান৷
অনুষ্ঠানে রাজ্যের পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরী রাজ্যের মানুষের আকাঙ্খার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছেন৷ তিনি রাজ্যে ব্রডগেজ রেল সম্প্রসারণের কাজের জন্য রেলওয়ের কর্মকর্তা এবং কর্মীদের ধন্যবাদ জানান৷ তিনি রাজ্যের উন্নয়নে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভুর উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন৷ পূর্তমন্ত্রী শ্রী চৌধুরী আগরতলা-দিল্লী ত্রিপুরাসুন্দরী এক্সপ্রেসের পাশাপাশি আগরতলাকে রাজধানী এক্সপ্রেসের সাথে যুক্ত করতে রাজ্যের মানুষের আকাঙ্খার কথা তুলে ধরেন৷ বর্হিরাজ্যের সঙ্গে রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তিনি ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পূর্বে অবস্থিত যোগাযোগ উৎসগুলি পুনরায় চালু করতেও আবেদন জানান৷
অনুষ্ঠানে সাংসদ শংকর প্রসাদ দত্ত তার আলোচনায় আগরতলা থেকে দিল্লী পর্যন্ত আজকের এই রেল যাত্রাকে দীর্ঘ ছয় দশকের আন্দোলনের সাফল্য বলে উল্লেখ করেন৷ তিনি আগরতলা থেকে কলকাতা পর্যন্ত দূরন্ত রেলের মতো এক জোড়া রেল চালু করতে রাজ্যবাসীর পক্ষ থেকে রেলমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন৷ সাংসদ ঝর্ণা দাস বৈদ্য সাব্রুম পর্যন্ত রেলের কাজ দ্রুত শেষ করার উপর গুরুত্ব দেন৷
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন এনএফরেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজার চাহাতে রাম৷ অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু ট্রাইবেল আর্টস অব ত্রিপুরা স্মরণিকাটির আনুষ্ঠানিক প্রবেশ করেন৷ রেলওয়ের পক্ষ থেকে অতিথিদের উত্তরীয় পুষ্পস্তবক এবং স্মারক উপহার দিয়ে সম্মানিত করা হয়৷
আজকের দুপুরে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু বাংলাদেশের রেলমন্ত্রী মুজিবল হক সহ অন্যান্য অতিথিদের সৌজন্যে রাজভনে দ্বি-প্রাহরিক ভোজের আয়োজন করা হয়৷ সন্ধ্যায় তথ্য ও সংসৃকতি দপ্তরের পক্ষ থেকে ভগৎ সিং যুব আবাসের কনফারেন্স হলে কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু সহ অন্যান্য অতিথিদের সম্মানে সাংসৃকতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু ছাড়াও রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী রাজেন গোঁহাই, পূর্তমন্ত্রী বাদল চৌধুরী, তথ্য সংসৃকতি মন্ত্রী ভানুলাল সাহা, পরিবহনমন্ত্রী মানিক দে, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বিজিতা নাথ, মৎস্য মন্ত্রী খগেন্দ্র জমাতিয়া এবং রেলমন্ত্রকের পদস্থ আধিকারিকগণ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *