গুয়াহাটি, ২৪ জুলাই, (হি.স.) : বাংলাদেশ, এবং ভুটান সীমান্তবর্তী এলাকাগুলির সুরক্ষা, যাতায়াত, যোগাযোগ, শিক্ষা, আর্থিক এবং সামগ্রিক বিকাশ-সহ বেশ কয়েকটি স্পর্শকাতর বিষয়াদি নিয়ে গভীর উদবেগ প্রকাশ করেছে ‘সীমান্ত চেতনা মঞ্চ : পূর্বোত্তর অসম’। গুয়াহাটির লালমাটি অঞ্চলে ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব এন্টারপ্রিনারশিপ’ প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত মঞ্চের দু-দিবসীয় প্রথম অধিবেশনের আজ ছিল সমাপন অনুষ্ঠান। এতে ড. বিনিতা ভাগবতীর পরিচালিত মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের নানা সমস্যাবলি নিয়ে আট জেলার প্রতিনিধিরা বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিকদের সঙ্গে চর্চা করেন। বিভিন্ন বক্তা সীমান্তবর্তী এলাকার বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরেন। এতে অংশগ্রহণ করেন গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ননীগোপাল মহন্ত, লেখক সুমন্ত চলিহা, সাংবাদিকবর্গ যথাক্রমে প্রমোদ কলিতা, রুপম বরুয়া, সমুদ্রগুপ্ত কাশ্যপ, প্রমোদ তিওয়ারি, চন্দ্রপ্রকাশ শর্মা প্রমুখ। আজকের সমাপন অধিবেশনে সীমান্ত সম্পর্কীয় তিনটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও ভুটানের উন্মুক্ত সীমান্তবর্তী এলাকায় অনুপ্রবেশকারীদের হাতে ভারতীয় নাগরিকদের নানাধরনের নির্যাতন, লাঞ্ছনা, অপ্রতুল চিকিৎসা পরিষেবা, বিদ্যুৎ পরিষেবা, পানীয় জলের সংকট, অপ্রতুল শিক্ষা ব্যবস্থাদির মতো জ্বলন্ত সমস্যাবলির সমাধানসূত্র বের করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বক্তারা বক্তব্য পেশ করেন। মতবিনিময় করতে গিয়ে ধুবড়ির বাবলুকুমার দত্ত বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তচুক্তি সম্পাদিত হওয়ায় নানাভাবে উপকৃত হয়েছে ভারত। তবু জল ও স্থল সীমান্ত পুরোপুরি সিল করার দাবি তুলেছেন তিনি। সীমান্ত এলাকাগুলিকে বন্যার বিধ্বংসী হাত থেকে রক্ষা করার উপায় বের করার ওপর জোর দেন দত্ত। বলেন, বন্যার কবলে পড়ে সীমান্ত এলাকার বিস্তীর্ণ কৃষিখেত নষ্ট হয়ে যায়। যার ব্যাপক প্রভাব পড়ে এলাকাগুলির কৃষিজীবী বাসিন্দাদের ওপর। তাছাড়া কাঁটাতারের বেড়া সংবলিত সীমান্তের গেট বিএসএফ কর্তৃপক্ষ তাঁদের নির্দিষ্ট সময় বন্ধ করে দেওয়ার ফলে যেকোনও সময় বাংলাদেশীরা খেতের ফসল কেটে নিয়ে যাওয়ার তথ্যও দেন বাবলুকুমার দত্ত। অভিযোগের সুরে বলেন, এ সব কাণ্ড ঘটছে দেখেও বাংলাদেশীদের কোনও ধরনের বাধা দেয় না বিএসএফ। এজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সরকারের কাছে আবেদন জানান তিনি।
কাছাড় জেলার বিতুভূষণ দত্তও বাংলাদেশী অনুপ্রবেশের ওপর বক্তব্য পেশ করেন। ভুটান সীমান্ত লাগোয়া ওদালগুড়ির বলিনচন্দ্র সাহা তাঁর বক্তব্যে সীমান্তবর্তী এলাকায় মোবাইল ফোন, সড়ক হাসপাতাল, টিভি নেটওয়ার্কের অপ্রতুলতার প্রসঙ্গ তুলেন। ভুটানগামী ১২৭ নম্বর জাতীয় সড়ক নির্মাণ হওয়ায় উচ্ছ্বাস ব্যক্ত করে বক্তব্য পেশ করেন বাকসা জেলার কালিচরণ বসুমতারি। বলেন, এই সড়ক তৈরি হওয়ায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বিকাশেল ঢেউ আসবে। প্রতিবেশী দু-দেশের সীমান্ত উন্মুক্ত থাকায় লাভ ও ক্ষতি দু-ই হচ্ছে। তাঁর ব্যাখ্যা, এতে যেমন এদেশের লোক জীবিকার সন্ধানে ভুটানে যেতে পারেন, বিপরীতে ওই উন্মুক্ত সীমা দিয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত বা জঙ্গিরাও অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে। ওদালগুড়ি জেলার আরেক বক্তা বাসুদেব নাথ ভুটানে তৈরি নদীবাঁধের কুফল প্রসঙ্গ তুলেন। বলেন ওই বাঁধগুলির ফলে অসমের সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে নানা সময় বন্যার পরিস্থিতি উৎপন্ন হয়। বিশেষ করে বেঁকি ও রুকসি নদীর কুড়িবাঁধ খোলে দেওয়ার ফলে অসমের বিস্তীর্ণ নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়ে যাওয়ার তথ্য তুলে ধরেন নাথ।