BRAKING NEWS

কোটিপতি মন্ত্রীর ছড়াছড়ি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেকে একজন চা বিক্রেতা হিসাবে গর্বের সঙ্গে প্রচার করিলেও তাঁহার মন্ত্রিসভায় কোটিপতিদের ছড়াছড়ি৷ প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায় ৭৮ জনের মধ্যে ৭২জনই কোটিপতি৷ এসোসিয়েশন অব ডেমোক্র্যাটিক রিফর্মস (এডিআর) সমীক্ষা করিয়া দেখাইয়াছে যে, ৭২ জন কোটিপতি মন্ত্রীর গড় সম্পদের পরিমাণ ১২৯৪ কোটি টাকা৷ মন্ত্রীদের মধ্যে সব চাইতে বেশী সম্পদের মালিক অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি৷ তাঁহার সম্পত্তির পরিমাণ ১৩৩ কোটি টাকা৷ এরপরই শরিক শিরোমণি আকালী দলের মন্ত্রীর হলসিমরত কাউর বাদল, ১০৮ কোটি, তৃতীয় স্থানে বিজেপির পীযুষ গোয়েল৷ তাঁহার সম্পদের পরিমাণ ৯৫ কোটি টাকা৷ মঙ্গলবার যে মন্ত্রীরা শপথ নিয়াছেন তাঁহাদের মধ্যে সবচাইতে ধনী বিশিষ্ট সাংবাদিক, সম্পাদক এম জে আকবর৷ তাঁহার সম্পদের পরিমাণ ৪৪৯০ কোটি টাকা৷ নতুন মন্ত্রীদের গড় সম্পদের পরিমাণ ৮৭৩ কোটি টাকা৷ মোদি মন্ত্রিসভার ৭৮ জন মন্ত্রীর মধ্যে ২৪ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারী অপরাধের মামলা রহিয়াছে৷ শতাংশের হিসাবে ৩১ শতাংশ৷ তাঁহাদের মধ্যে১৪ জনের বিরুদ্ধে গুরুতর ফৌজদারী অপরাধের মামলা রহিয়াছে৷ খুন, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, নির্বাচনী হিংসার অভিযোগেও আছে৷ খাদ্যমন্ত্রী হওয়া রমেশ জিগাজিনাগি, যিনি কর্ণাটকের বিজেপি সাংসদ হইয়াছেন৷ তাঁহার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার দুইটি অভিযোগ রহিয়াছে৷
নরেন্দ্র মোদি নিজে চা বিক্রেতা হিসাবে পরিচয় দিলেও তাঁহার মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রায় সকলেই ধনীর দুলাল৷ মোদি প্রধানমন্ত্রী হইয়া দশ লাখ টাকা দামের স্যুটও পরিতে পারেন৷ সুতরাং মোদি মন্ত্রিসভার সদস্যরা গরীব অংশের মানুষের দুঃখ কষ্ট অনুভব করিবার মতো মানসিকতা কতখানি থাকিবে সেই প্রশ্ণ উঠিতেই পারে৷ কোটি কোটি টাকার মালিক হইয়া মন্ত্রী পদে আসীন হইয়া গরীবের জন্য কতখানি মনপ্রাণ সমর্পণ করিতে পারিবেন এই প্রশ্ণ তো উঠা খুব স্বাভাবিক৷ মোদি মন্ত্রিসভায় অন্তত ২৪ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারী অপরাধের মামলা রহিয়াছে৷ এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিয়াছে মোদি মন্ত্রিসভা সৎ ও স্বচ্ছতার প্রতীক হইতে পারে না৷ মোদি বারবারই বলিয়াছেন, ‘আচ্ছে দিন আয়েগা’৷ কিভাবে আসিবে? ফৌজদারী অপরাধে অভিযুক্তরা যে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান সেই মন্ত্রিসভা সৎ ও স্বচ্ছতার বড়াই করিতে পারেন? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভাল করিয়াই জানেন যে, গরীব অংশের লোক যদি নেতা বা মন্ত্রী হন তাঁহাকে মানুষ শ্রদ্ধার আসনে বসায়, বিশ্বাস করে৷ এই কথা জানিতেন বলিয়াই তিনি নিজেকে চা বিক্রেতা হিসাবে তুলিয়া ধরিতেন৷ তিনি ইহাও জানিতেন গরীব চা বিক্রেতা বলিলে জন সহানুভুতি তাহার উপর অনেক বেশী করিয়া বর্তাইবে৷ কিন্তু, সেই গরীবি শ্লোগান দিয়া ভোট টানিবার চেষ্টা যে তাঁহার পক্ষে আগামী দিনে আর বেশী সাফল্য আনিবে না তাহা তিনি বুঝিয়া গিয়াছেন৷
মোদি মন্ত্রিসভার বেশীর ভাগই তো টাকার কুমীর৷ এই মন্ত্রিসভা গরীবের দুঃখে কতখানি কাতর হইতে পারেন? দেশে তো গরীবের ছড়াছড়ি৷ গরীবি হঠাও শ্লোগান তুলিয়া ইন্দিরা গান্ধীও তাঁহার কংগ্রেস দল ও সরকারকে জনমোহিনীর ছোঁয়ায় নিয়া গিয়াছিলেন৷ গরীবের উন্নতির জন্য তাঁহার কুড়ি দফা প্রোগ্রামই তো এখন ঘুরিয়া ফিরিয়া আসিতেছে৷ এখনও যেকোনও সরকার সেই গরীবি হঠানোর শ্লোগান দিয়াই নিজেদের জনদরদী প্রমাণের কৌশল নিয়াছেন৷ অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের এমন ঐতিহ্য ছিল যে, মন্ত্রীরা অনেকেই দরিদ্র পরিবারের৷ প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী তো ছিলেন কপর্দক শূন্য৷ সততার মূর্ত প্রতীক৷ তিনিই তো দেশে নব জাগরণের উদ্গাতা৷ জয় জওয়ান, জয় কিষাণ তো তাহারই শ্লোগন৷ স্বাধীনতার পর তাহার স্বল্পকালীন রাজত্বেই ভারত ঘুরিয়া দাঁড়াইয়াছিল৷ ১৯৬২ সালে চীন আক্রমণের পরই ১৯৬৫ সালে ভারত প্রতিরক্ষায় শক্তি সঞ্চয় করে৷ গরীব প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেই দেশ জাগিয়া উঠে৷ এই ইতিহাস নিশ্চয়ই আমাদের প্রধানমন্ত্রী মোদিজিকে অনুপ্রেরণা যুগাইতে পারে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *