নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ জুন৷৷ উন্নয়নকে হাতিয়ার করেই ত্রিপুরার মসনদ দখল করার কৌশল নিয়েছে বিজেপি৷

অন্তত কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর রাজ্য সফরে এমনটাই মনে হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় ভারী শিল্পমন্ত্রী অনন্ত গিত্যে রাজ্য সফরে এসে সাংবাদিক সম্মেলনে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, দুই বছরের মোদি সরকারের সাফল্যের ব্যাখ্যা দিতেই তিনি এরাজ্যে এসেছেন৷ রাজ্য সরকারের কোন রকম সমালোচনা করতে নয়৷ তাতে মনে হচ্ছে, উন্নয়নকে পুঁজি করে রাজ্যবাসীর আবেগকে ছঁুতে চাইছে বিজেপি৷ কারণ, আগরতলায় এবং উদয়পুরে জনসভায় তিনি দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে মোদি সরকারের সাফল্য এবং উন্নয়নের ছবি তুলে ধরতে হবে৷ উন্নয়নই যে বিজেপি’র একমাত্র লক্ষ্য তা রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করতে হবে৷ তবেই ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে পরিবর্তন সম্ভব বলে তিনি জোর গলায় দাবী করেন৷
মসনদ দখলের প্রশ্ণে বিকল্প রণকৌশল নিয়েছে বিজেপি, তা আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সফরে অনেকটাই আঁচ পাওয়া গেছে৷ রাজ্য সরকারের নানা ব্যর্থতা, দূর্নীতি এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতির প্রশ্ণে দলের প্রদেশ নেতৃত্বরা প্রায় সময় সমালোচনায় মুখর হন৷ এমনকি দিল্লি গিয়ে দলীয় নেতা এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের কাছে নালিশও জানান৷ কিন্তু আজ কেন্দ্রীয় ভারী শিল্পমন্ত্রী অনন্ত গিত্যে উদয়পুরে এবং আগরতলায় জনসভায় রাজ্য সরকারের তেমন কোন সমালোচনা করার বদলে, ২ বছরে মোদি সরকারের সাফল্য এবং উন্নয়নের ঢালাও প্রচার করেন৷ অবশ্য, তাঁর এই রাজ্য সফর মূলত মোদি সরকারের বিকাশ কর্মসূচীর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার জন্যই৷ তা সত্বেও প্রশ্ণ উঠেছে, বিধানসভা নির্বাচনের কুড়ি মাস বাকি থাকতে ত্রিপুরার পালা বদলের লক্ষ্যে নয়া কৌশল কি না৷ কারণ, আগামী বিধানসভা নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে এই বিকাশ কর্মসূচি রাজ্যবাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য দলীয় নেতৃত্বদের তিনি দায়িত্ব দিয়ে গেছেন৷
রাজ্যে দীর্ঘ বাম শাসন অবসানের ক্ষেত্রে বিকল্প রণকৌশল আবশ্যিক৷ সেক্ষেত্রে উন্নয়ন অন্যতম হাতিয়ার হতে পারেন, তা মনে করেন রাজনীতির কারবারীরাও৷ ফলে, যেভাবে বিজেপি রাজ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রচার শুরু করেছে, তাতে প্রভাব কতটা পড়বে সে বিষয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে৷
এদিন, উদয়পুর এবং আগরতলায় জনসভায় কেন্দ্রীয় ভারী শিল্পমন্ত্রী অনন্ত গিত্যে দুই বছরে মোদি সরকারের নানা কাজকর্মের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন৷ দেশবাসী তাতে ভিষণ উপকৃত হয়েছেন বলেও তিনি দাবি করেন৷ তিনি জোর গলায় দাবি করেন, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে৷ তার জন্য বাজেটের ১০ শতাংশ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে৷ উন্নয়নের প্রশ্ণে তিনি বলেন, গোটা দেশে বিপিএল সংখ্যা মাত্র ৩৮ শতাংশ৷ অথচ এরাজ্যে বিপিএল’র হার ৬৭ শতাংশ৷ তাঁর দাবি, উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি গরীব অংশের মানুষের কপালে, সেজন্যই বিপিএল’র হার জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেক বেশি৷ তাঁর সাফ কথা, দারিদ্র দূরীকরণে এরাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারের সুনির্দিষ্ট কোন কর্মসূচী নেই৷ তিনি দাবি করে বলেন, বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার দারিদ্র দূরিকরণে বহুমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে৷
তিনি জানান, বিপিএল পরিবার এখন লাকড়ী দিয়ে রান্না করেন না৷ কেন্দ্রীয় সরকার তাদের এলপিজি ব্যবহার করে রান্না করার সুযোগ করে দিয়েছে৷ আধার লিঙ্কিং এর মাধ্যমে সারা দেশে সাড়ে ৩ কোটি ভূয়ো রেশন কার্ড চিহ্ণিত হয়েছে৷ সেগুলি বাতিল করা হয়েছে৷ তাতে ৩৬ হাজার কোটি সাশ্রয় হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন৷
দূর্ণীতির প্রশ্ণে তিনি কটাক্ষের সুরে বলেন, দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী বলেছিলেন, ১০০ টাকা কেন্দ্র পাঠালে তা সুবিধাভোগীর কাছে পৌছায় ১৫ টাকা৷ বাকি ৮৫ টাকা গায়েব হয়ে যায়৷ কেন্দ্রীয় ভারী শিল্পমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার এখন সরাসরি সুবিধাভোগির ব্যাঙ্ক একাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেয়৷ তাতে ১০০ টাকা পাঠালে পুরোটাই সুবিধাভোগি পান৷
এদিন, দলীয় কর্মী সমর্থকদের উজ্জীবিত করতে উদাহরণ নিয়ে বলেন, পূর্বোত্তরে আসাম দিয়ে উন্নয়নের এক অধ্যায় রচনা শুরু হয়েছে৷ ২০১৮ বিধানসভা নির্বাচনে এরাজ্যেও এর প্রভাব পড়বে৷ তবে, এরজন্য তিনি রাজ্যের দলীয় কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রতিটি রাজ্যবাসীর কাছে মোদি সরকারের উন্নয়নের ছবি তুলে ধরুন৷ তাতেই এরাজ্যেও পালা বদল সম্ভব বলে তিনি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন৷

