BRAKING NEWS

ত্রিপুরায় বাম রাজত্বের অবসান হবে তৃণমূলের হাত দিয়েই, স্বপ্ণ ফেরি করলেন মুকুল রায়

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৭ জুন৷৷ নীতি ও আদর্শের প্রশ্ণে কংগ্রেস ও সিপিএমের মধ্যে কোনও ফারাক নেই৷ সেজন্যই বাম বিরোধী সংগ্রামের সৈনিক হিসেবে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল গঠন করেছিলেন৷ আজ পশ্চিমবঙ্গ বামেদের দীর্ঘ অপশাসন থেকে মুক্ত৷ ত্রিপুরাও দীর্ঘদিনের বাম রাজত্বের অবসান হবে তৃণমূলের হাত দিয়েই, দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে জানান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়৷

মঙ্গলবার আগরতলায় তৃণমূলের সমাবেশ উপলক্ষে মিছিল৷ ছবি নিজস্ব৷
মঙ্গলবার আগরতলায় তৃণমূলের সমাবেশ উপলক্ষে মিছিল৷ ছবি নিজস্ব৷

মঙ্গলবার রাজ্যে ছয় বিধায়ক কংগ্রেস ছেড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর তাদের বরণ করে নিয়ে আগরতলায় শকুন্তলা রোডে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুকুলবাবু দাবি করেন তৃণমূল আগামী ২০১৮ এর রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে ত্রিপুরাতেও পরিবর্তন আনবে৷ তাঁর আরও দাবি, পশ্চিমবঙ্গে গরীব মানুষদের জন্য ২০১১ সাল থেকে ক্রমাগত কাজ করছে তৃণমূল কংগ্রেস৷ বাম শাসনে পাহাড় জ্বলছিল, সেই আগুন নিভিয়েছে তৃণমূল৷ জঙ্গল মহলেও প্রতিদিন খুনের ঘটনা ঘটত৷ সেখানে আজ মানুষের মধ্যে হাসির ঝিলিক নজরে আসছে৷ তবে, কংগ্রেস নিয়ে হতাশাই ফুটে উঠেছে মুকুল রায়ের বক্তব্যে৷ একসময়ে জাতীয় কংগ্রেসের এই সৈনিক আজ শতবর্ষ প্রাচীন এই দলটির নীতি আদর্শ নিয়ে প্রশ্ণ তুলেছেন৷ তাঁর মতে, কংগ্রেস সিপিএম এক সুতোতে বাধা৷ উভয় দলেই নীতি আদর্শের গঙ্গাপ্রাপ্তি ঘটেছে৷ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নেত্রী মমতা ব্যানার্জী পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস ও সিপিএমের প্রীতির কারণেই তৃণমূল কংগ্রেস গড়ে তুলেছিলেন৷ একটি ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে চৌদ্দজন কংগ্রেস কর্মী সিপিএমের হাতে খুন হয়েছিলেন৷ তখন মমতা ব্যানার্জী তদানিন্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পৃথ্বিরাজ চ্যাবনের সাথে দেখা করে রাজ্যে কংগ্রেস ভাইদের হত্যার বিচার চান৷ কিন্তু, পৃথ্বিরাজ মমতাকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন কেন্দ্রে সরকার টিকিয়ে রাখতে সিপিএমের সাহায্য প্রয়োজন৷ সাথে পরামর্শ দিয়ে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে ফিরে গিয়ে তাদের সাথে আপোষ করার জন্য৷ তিনি মমতা ব্যানার্জীকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন সিপিএমের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখতে৷ এটাই সমস্যার সমাধান৷
এদিন শ্রীরায় বলেন, সেই ঘটনার পর থেকে কংগ্রেসকে ঘৃণা করতাম৷ কিন্তু করুণা হয়৷ যে সিপিএম পশ্চিমবঙ্গে ৫৫ হাজার কংগ্রেস কর্মীদের নৃশংস ভাবে খুন করেছিল৷ সেই কংগ্রেস গত বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএমের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে৷ যে সিপিএম স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধীতা করেছিল৷ আজ তাদের সাথেই সখ্যতা গড়ে তুলেছে জাতীয় কংগ্রেস৷ শুধু তাই নয় সিপিএম ইন্দিরা গান্ধীকে ডাইনি বলার পাশাপাশি রাজীব গান্ধীকেও চোর বলে আখ্যায়িত করেছিল৷ এনিয়ে রাহুল গান্ধীকে কটাক্ষের সুরে মুকুল রায় বলেন, বর্ষিয়ান সিপিএম নেতা রাহুলকে বলেছেন, তোমার বাবা চোর মেনে নিলে৷
মুকুল রায়ের দাবি, বামফ্রন্টের দীর্ঘ অপশাসন থেকে মুক্ত হয়ে পশ্চিমবঙ্গে উন্নয়নের ধারা বইছে৷ পৃথক রাজ্যের দাবি পশ্চিমবঙ্গেও উঠেছিল, নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেছেন রাজ্য ভাগ হবেনা৷ তার বদলে উন্নয়ন হবে৷ এদিন তিনি জোর গলায় বলেন, ত্রিপুরাতেও আগামীদিনে তৃণমূলের উন্নয়নের ধারা ফুটে উঠবে৷ শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচন ত্রিপুরা গোটা ভারতবর্ষকে পথ দেখাবে৷
এদিকে, মুকুলবাবু সমাবেশের মঞ্চ থেকে সুদীপ রায় বর্মনের ভূয়সী প্রশংসা করেন৷ তিনি বলেন, নীতি আদর্শের বিচ্যুতি ঘটায় দলের প্রতি বিদ্রোহ দেখিয়ে সুদীপ রায় বর্মন যে সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা নজির স্থাপন করেছে৷ সিপিএম কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এই জেহাদ ইতিহাস রচনা করবে বলে দাবি মুকুলবাবুর৷
এদিন সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন ও বিশ্ববন্ধু সেন৷ দু’জনই রীতিমতো কংগ্রেস ও সিপিএমকে সমালোচনার বাণে বিদ্ধ করেছেন৷ তৃণমূলে যোগদানের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সুদীপ রায় বর্মন ও বিশ্ববন্ধু সেন কংগ্রেসের ইতিহাস এবং সিপিএমের সাথে সখ্যতার বর্তমান পরিস্থিতির বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন৷ পাশাপাশি সমস্ত বাম বিরোধী জনগণকে তৃণমূলকে সমর্থন করার আহ্বান জানান৷ এদিন সমাবেশে বক্তব্য রাখেন প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান রতন চক্রবর্তীও৷ এদিকে, সমাবেশ শুরু হওয়ার আগে আগরতলায় জ্যাকশন গেট সংলগ্ণ এলাকা থেকে একটি মিছিল শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *