প্রাকৃতিক বিপর্য্যয় মোকাবিলায় রাজ্যের সতর্কতা নিয়ে প্রশ্ণ উঠল কর্মশালায়

DISESTERনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১ জুন৷৷ আবহাওয়ার পূর্বাভাষ অনুযায়ী জনগণকে সচেতন করে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতির হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে হবে৷ মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয় মোকাবেলা সম্ভব৷ কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা মানুষের হাতে থাকে না৷ ফলে, আবহাওয়ার পূর্বাভাষ অনুযায়ী সর্তকতা অবলম্বন করে জনগণকে সচেতন করা হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমানো সম্ভব৷ বুধবার প্রজ্ঞাভবনে বিপর্যয় মোকাবেলা শীর্ষক সেমিনারে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের বক্তব্যে রাজ্যপ্রশাসন আবহাওয়ার পূর্বাভাষ মেনে কতটা সচেতন সেই নিয়ে এক নতুন প্রশ্ণ দেখা দিয়েছে৷ এই সেমিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যসচিব যশপাল সিং স্পষ্টভাবে বলেন, সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড়ে রাজ্যের চারিদিকে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক অফিসারদের কাছে সেই তথ্য সঠিকভাবে ছিল না৷ ফলে, আদৌ আবহাওয়া পূর্বাভাষ সম্পর্কে রাজ্য প্রশাসন কতটা ওয়াকিবহাল থাকেন এই প্রশ্ণই আজ মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী, ভূমিকম্প বাদে অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আগাম সংবাদ আবহাওয়া দপ্তর থেকে সহজেই জোগাড় করা সম্ভব৷ সেই মোতাবেক রাজ্য প্রশাসন আবহাওয়ার পূর্বাভাষের ভিত্তিতে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমানো সম্ভব৷ অবশ্য সেক্ষেত্রে আবহাওয়া বিভাগের সাথে রাজ্য প্রশাসনের যোগসূত্র আরো বাড়াতে হবে বলেই মনে করা হচ্ছে৷
বুধবার ‘‘বিপর্যয়ের ঝঁুকি মোকাবিলার জন্য সেনডাই কাঠামো ২০১৫-৩০’’ শীর্ষক একদিনের রাজ্য ভিত্তিক আলোচনাচক্র প্রজ্ঞাভবনে অনুষ্ঠিত হয়৷ সেনডাই জাপানের একটি শহর৷ এখানে গত বছরের ১৪-১৮ মার্চ ভারত সহ ১৮৭ টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে বিপর্যয়ের ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য সেনডাই কাঠামো ২০১৫-২০৩০ প্রস্তাব গৃহীত হয়৷ উদ্দেশ্য প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্টি বিপর্যয়ের হাত থেকে আগামী ১৫ বছরে অর্থনৈতিক, সাংসৃকতিক, প্রাকৃতিক এবং পরিবেশগত সম্পত্তি সহ জীবন ও জীবিকার ক্ষয়ক্ষতির হ্রাস করা৷ আজকের এই আলোচনাচক্রে বি এস এফ, সি আর পি এফ, টি এস আর, আর্টিলারী, অগ্ণি নির্বাপক সহ বিভিন্ন দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবকগণ ও ইন্ডিয়ান রেডক্রস সোসাইটির প্রতিনিধিগণ অংশ নেন৷ আলোচনাচক্রে প্রধান অতিথির ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেন, কেবল পুলিশ, বি এস এফ, সি আর পি এফ-এর দিকে চেয়ে থাকলে চলবে না৷ মানুষের কর্তব্য হল বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানো৷ এজন্য বিভিন্ন ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, যুবক ও যুবতীদের আরো সহমর্মী হতে হবে৷ তিনি বলেন, বিপর্যয় দু’ ধরনের৷ প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মনুষ্যসৃষ্ট৷ মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে – খুন, সন্ত্রাস, অপহরণ, অগ্ণি সংযোগ প্রভৃতি৷ মানুষের সাহায্য নিয়ে এই বিপর্যয় প্রশমন করা যায়৷ মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয়ের মাধ্যমে পরিস্থিতিকে যেমন উত্তপ্ত করে তোলা হয় তেমনি গোষ্ঠীদ্বন্ধ, মারামারি ও মানুষে মানুষে ভুল বুঝাবুঝির পথ তৈরী করা হয়৷ অর্থাৎ সব মিলিয়ে সামাজিক দিক দিয়ে এক অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়৷ তিনি বলেন, একসময় সন্ত্রাসবাদীরা এরাজ্যে যে অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল ধীরে ধীরে তাদের বুঝিয়ে, পুলিশ প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, তাদের আত্মীয়স্বজনদের সাহায্য নিয়ে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে৷ এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে৷ তবে কিছু দুর্বৃত্ত অগ্ণিসংযোগ ও আইন শৃঙ্খলা অবনমনে যে সমস্যা সৃষ্টি করে সে বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে৷ পথ দুর্ঘটনা রোধে যান চালকদের যান চালনার নীতি আইন আরো কঠোর ভাবে মানতে হবে৷ তিনি বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদের হাতের বাইরে রয়েছে৷ এগুলির ক্ষেত্রে ক্ষতির বহর কমাতে পারে আবহওয়ার পূূর্বাভাষ ও জনসচেতনতা৷ চাই সতর্কীকরণ৷ তবে ভীতির কারণ যাতে তৈরী না হয়৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে গেছে তার থেকেও আমাদের জ্ঞান অর্জন করতে হবে৷ বিপন্নদের পাশে সুকল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী, যুবক যুবতীদের দাঁড়াতে হবে৷ তবে সরকারী হোক বা বেসরকারী হোক ঘর নির্মাণে ভূমিকম্পের নীতি নির্দেশিকা মানতে হবে৷ আমরা ইন্দিরা আবাসন যোজনার গৃহে গত ১০ বছর যাবৎ এই নীতি নির্দেশিকা মানার চেষ্টা করছি৷
সম্মানিত অতিথির ভাষণে রাজস্বমন্ত্রী বাদল চৌধুরী বলেন, আমাদের রাজ্য ভূমিকম্প প্রবণ পঞ্চম জোনে রয়েছে৷ বিপর্যয় মোকাবিলার গুরুত্ব বুঝে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷ এন ডি আর এফ-এর ৪০ সদস্য বিশিষ্ট একটি দল গকুল নগরে রয়েছে৷ আমরা এই ফোর্সকে একটি ব্যাটেলিয়ান হিসাবে গড়ে তুলতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছি৷ জায়গায় সংস্থান করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, টি এস আর-এর প্রতিটি ব্যাটেলিয়ানে ১০ জন করে জওয়ানকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ প্রতি মাসের তৃতীয় শনিবার বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ তিনি বিপর্যয় মোকাবিলার যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ভারত সরকারের কাছে আরো অধিক অর্থ বরাদ্দের দাবী জানিয়েছেন৷ সম্মানিত অতিথির ভাষণে আগরতলা পুর নিগমের মেয়র ড প্রফুল্লজিৎ সিনহা বলেন, ত্রিপুরা ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা৷ ৭৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে গড়া আগরতলায় ৫ লক্ষের অধিক মানুষ বাস করেন৷ আমরা বিল্ডিং রুলস মেনে বিল্ডিং গড়ার অনুমোদন দেই৷ আগরতলা পুর নিগমে একটি ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট সেল খোলা হয়েছে৷ বিশেষ অতিথির ভাষণে মুখ্য সচিব যশপাল সিং বলেন, এটা এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনাচক্র৷ গত ১০০ বছরের ত্রিপুরার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ত্রিপুরা বন্যা, ভূমিকম্প ও ঘুণিঝড় প্রবণ রাজ্য৷ বিপর্যয় ঘটার আগে মূল কাজ হল আগাম পূর্বাভাষ ও সতর্কতা৷ এজন্য চাই নিশ্ছিদ্র সংযোগ৷ বিপর্যয় মোকাবিলায় আমরা সুপ্রীম কোর্টের গাইড লাইন ও গ্লোবাল গাইড লাইন মেনে চলার চেষ্টা করছি৷ স্বাগত ভাষণ দেন রাজস্ব সচিব পুনীত আগরওয়াল৷ উপস্থিত ছিলেন কৃষি দপ্তরের প্রধান সচিব ড জি এস জি আয়েঙ্গার, নগরউন্নয়ন দপ্তরের প্রধান সচিব এস, কে রাকেশ, অগ্ণি নির্বাপক দপ্তরের অধিকর্তা জয়দীপ নায়েক, পশ্চিম জেলার জেলাশাসক ডাঃ মিলিন্দ রামটেকে, এ জি জি এস এস চতুবের্দী ও মহকুমা শাসকগণ৷ আলোচনাচক্রে মুখ্যমন্ত্রী স্টেট ডিজেষ্টার ম্যানেজমেন্ট প্ল্যান নামক একটি বইয়ের আবরণ উন্মোচন করেন৷ টেকনিক্যাল সেশনে এ বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশান উপস্থাপন করেন ইউ এন ডি পি-র ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর অরুণ সহদেও৷