পুলিশের সামনেই দিনমজুরকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা , গ্রেপ্তার নেই, উত্তেজনা খোয়াইয়ে

Dead Khowaiনিজস্ব প্রতিনিধি, খোয়াই, ১ জুন৷৷ খোয়াইতে এক দরিদ্র দিনমজুর পুলিশের সামনেই পিটিয়ে হত্যা করল এক ব্যবসায়ী এবং কতিপয় গাড়ি শ্রমিক৷ নিহত শ্রমিকের হত্যাকারীরা নিকুঞ্জকে হত্যা করার পাশাপাশি তার স্ত্রীর গর্ভের সন্তানকে করল পিতৃহারা এবং নিকুঞ্জ এর বিধবা মা হারাল চোখ৷ এই নির্মম হত্যাকান্ডটি যখন চলছিল তখন খোয়াই থানার বড়বাবু হুক্কায় তামাক খেয়ে একজন সাব ইন্সপেক্টর রণজিৎ দেববর্মা এবং একজন সহকারী সাব ইন্সপেক্টর রবীন্দ্র দাসকে ঐ হত্যাকান্ডটি উপভোগ করার জন্য পুরাতন বাজার বাস সেন্ডিকেটে পাঠান৷ নিকুঞ্জকে চার শ্রমিক সহ এক গাড়ির মালিক মিলে যখন মাটিতে ফেলে পেটাচ্ছিল তখন ঐ পুলিশ অফিসাররা সহ আরো তিন পুলিশ কর্মী এক পান দোকানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মানুষ হত্যা উপভোগ করছিলেন৷ সাব ইন্সপেক্টর রণজিৎ দেববর্মা ও রবীন্দ্র দাস এগিয়ে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে গাড়িতে ফেলে নিয়ে আসে হাসপাতালে৷ হাসপাতালে এসে নিকুঞ্জ শেষ সময়ে সাব ইন্সপেক্টর রণজিৎ দেববর্মাকে পাঁচজনের নাম দেয়৷ যারা তাকে মেরেছে৷ এরপরই নিকুঞ্জকে পাঠানো হয় জিবি হাসপাতালে৷ মঙ্গলবার রাত সাড়ে নটায়৷ কিন্তু নিকুঞ্জ সে রাত থেকেই উন্নত চিকিৎসায়ও সারা দেয়নি৷ বুধবার সকালে মারা যায় সে৷ দুপুরে তার মৃতদেহ লালছড়া বাড়িতে নিয়ে এলে তার পরিবার সহ পাড়া প্রতিবেশীরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে৷
খোয়াই শহরে এভাবে পুলিশের সামনে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করার পরও খোয়াই থানার পুলিশ স্বউদ্যোগে মামলা নেয়নি৷ থানার বড়বাবু নারায়ণ চক্রবর্তী বলছেন নিকুঞ্জকে হত্যা করা হয়েছে না সে মদ্যপান করে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়ে মারা গেছে তাই তিনি জানেন না৷ থানার গেইটের সামনে হত্যাকান্ড ঘটলেও দলদাস ওসি বলছেন তিনি কিছু জানেন না৷ নিকুঞ্জকে জিবি পাঠানোর পূর্বে সাব ইন্সপেক্টর রণজিৎ দেববর্মাকে কে মেরেছে জানতে চাইলে নিকুঞ্জ পাঁচটি নাম বলে যায়৷ এই হত্যাকান্ডে জনৈক ব্যবসায়ী ও গাড়ি শ্রমিকদের নাম উঠে আসায় খোয়াই থানার ওসি বলছেন নিকুঞ্জ পুলিশকে কোন নাম জানায়নি৷ অথচ রণজিৎবাবু স্বয়ং খোয়াই থানাতেই সংবাদ মাধ্যমের কর্মীদের কাছে পাঁচটি নাম এর সত্যতা স্বীকার করেন৷ নিকুঞ্জকে পিটিয়ে হত্যা করার ঘটনায় মৃতের পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে৷ নিকুঞ্জের মৃতদেহ লালছড়া বাড়িতে আনা হলে তার বড় ভাই নৃপেন্দ্র বর্মণ জানান এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত গাড়ির মালিকের নাম সুধীর দাশগুপ্ত৷ মঙ্গলবার রাতে রক্তাক্ত অবস্থায় নিকুঞ্জকে হাসপাতালে আনার পর নিকুঞ্জ তার বড় ভাইকে জানায় এলাকার সুধীর দাশগুপ্ত সহ আরো চারজন মিলে তাকে মেরে জখম করে৷ নিকুঞ্জের ভাই জানায় তার স্ত্রী পাঁচমাসের গর্ভবতী৷ বর্তমানে তার স্ত্রী আগরতলা যোগেন্দ্রনগর বাপের বাড়িতে ছিল৷ এদিকে তাদের বিধবা মা হেমলতা বর্মণকে হাঁপানিয়া ভর্তি করা হয় চোখের অপারেশন করার জন্য৷ গতকালই তার ভাই মায়ের সঙ্গে ছিল৷ অপারেশন শেষে সে তার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়িতে আসার কথা৷ তার স্ত্রী না আসায় সে রাগে কিছু মদ্যপান করে রাধানগর থেকে একটি বাসে উঠে৷ মদের নেশায় সে বাসের ড্রাইভার সহ অন্যান্য শ্রমিকদের গালাগাল করে৷ গাড়িটি প্রায় আটটায় লালছড়া এলাকায় পৌঁছলে সে নামতে চায় বাড়িতে যাওয়ার জন্য৷ কিন্তু গাড়ির শ্রমিকরা তাকে জোর করে নিয়ে যায় পুরাতন বাজার বাসস্ট্যান্ডের সামনে৷ তারপরই তাকে নামিয়ে শুরু করে ধোলাই৷ এভাবে প্রকাশ্যে একটি জীবন্ত মানুষকে হত্যা করা হলেও তার হত্যাকারীদের আড়াল করতে পুলিশ যে নগ্ণ খেলায় মেতেছে তাতে পুলিশের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ জাগছে সাধারণ মানুষের মধ্যে৷