নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ এপ্রিল৷৷ প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক পরিমল সাহা হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ১৭ জনের মধ্যে ৫ জনকে বেকসুর খালাস এবং বাকি ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করল পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলা ও দায়রা আদালত৷ আগামীকাল

শনিবার দোষী সাব্যস্তদের সাজা ঘোষণা করবে আদালত৷ পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এসবি দত্ত এই রায় দেন৷
৩৩ বছর আগের চড়িলাম বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক প্রয়াত পরিমল সাহা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করল আদালত৷ এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অভিযুক্ত ১৭ জনের মধ্যে ৫ জনকে আদালত বেকসুর খালাস করে৷ বাকি ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে পশ্চিমজেলার জেলা ও দায়রা আদালতের বিচারক এস বি দত্ত৷ আগামীকাল দোষী সাব্যস্তদের সাজা ঘোষণা করা হবে৷ যে ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তারা হলে ষষ্ঠি চক্রবর্তী, উত্তম সাহা, মৃণাল সেনগুপ্ত, বিজয়কুমার দাস, কাজল রায়, অভয়কান্তি ভূষণ, চিন্ময় ঘোষ, হিরন্ময় ঘোষ, সুখেন্দু বিকাশ দাস, বাবুল দাস, সজলকুমার সরকার এবং প্রদুল সেনগুপ্ত৷ [vsw id=”ojDa1xa-pVg” source=”youtube” width=”425″ height=”344″ autoplay=”yes”]অপরদিকে যে৫ জনকে আদালত বেকসুর খালাস বলে ঘোষণা করেছে তারা হলেন, অরুণ কুমার সাহা, তপন কুমার দাস, সত্যরঞ্জন দাস, চাঁন্দ মিয়া এবং উত্তম কুমার সাহা৷
এদিন এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রায় শুনতে আদালত চত্বর জনারণ্যের রূপা ধারণ করেছিল৷ অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আদালত চত্বরে পুলিশী ব্যবস্থাও ছিল লক্ষণীয়৷ বেলা সাড়ে বারটায় রায় ঘোষণা হতেই আদালত কর্তৃক ঘোষিত দোষী সাব্যস্তদের আত্মীয়পরিজনরা আদালত চত্বরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন৷ আগামীকাল দোষী সাব্যস্ত ১২ জনের সাজা ঘোষণা করবে আদালত৷
এদিকে, দাদার হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অভিযুক্ত ১৭ জনের মধ্যে ৫ জন বেকসুর খালাস হয়ে যাওয়ায় আদালতের রায়ে পুরোপুরি খুশি হতে পারলেন না প্রয়াত পরিমল সাহার ছোট ভাই প্রাক্তন মন্ত্রী মতিলাল সাহা৷ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়াত কংগ্রেস বিধায়ক পরিমল সাহার ভাই তথা এই হত্যাকান্ডের অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী মতিলাল সাহা নিজ প্রতিক্রিয়ায় জানান দোষী সাব্যস্ত ১২ জনের ফাঁসি চান তিনি৷
চড়িলাম বিধানসভা কেন্দ্রের প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক প্রয়াত পরিমল সাহার চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার রায় শুক্রবার ঘোষণা করল পশ্চিম জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালত৷ এদিন আদালতের মাননীয় বিচারক এস বি দত্ত এ রায় ঘোষণা করেন৷ অভিযুক্ত ১৭ জনের মধ্যে ৫ জনকে বেকসুর খালাস এবং বাকি ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত৷ ৫ জন অভিযুক্ত বেকসুর খালাস হয়ে যাওয়ায় এই রায়ে পুরোপুরি খুশি হতে পারেনি প্রয়াত পরিমল সাহার ছোট ভাই তথা এই ঘটনার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী প্রাক্তন মন্ত্রী মতিলাল সাহা রায়৷ ঘোষণার পর নিজ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে মতিলাল জানান, আগামীকাল অর্থাৎ শনিবার ঘোষণা করা হবে তাতে দোষী সাব্যস্ত ১২ জনকেই ফাঁসির আদেশ দেওয়া হলেই তিনি খুশি হবেন৷ ১৯৮৩ সালের ৭ই এপ্রিল বিশালগড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন হয়েছিলেন চড়িলামের কংগ্রেস বিধায়ক পরিমল সাহা৷ দাদা পরিমল সাহার সাথে একই গাড়িতে ছিলেন দুই ভাই জীতেন সাহা এবং মতিলাল সাহা৷ এই ঘটনায় জীতেন সাহাও খুন হন৷ বোমা এবং আক্রমণকারীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হয়েও প্রাণে বেঁচে যান মতিবাবু৷ সেই বিভীষিকাময় ঘটনার স্মৃতি চারণ করে শ্রী সাহা জানান, বিশালগড় ব্লকের বিডিসি নির্বাচনের জন্য জিপে করে ব্লকে যাচ্ছিলেন তারা৷ ব্লকের কিছুটা আগে একটি ট্রাক উনাদের গাড়ির গতিরোধ করে৷ গাড়ি থামতেই শুরু হয় বোমাবৃষ্টি৷ বোমাবৃষ্টির মধ্যেই ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে আক্রমণকারীরা৷ তাদের প্রথম শিকার ছিল আরেক ভাই জীতেন সাহা৷ গাড়ি থেকে নামামাত্রই বোমা ও অস্ত্রের আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন পরিমল সাহা৷ তারা দুইভাই প্রাণ বাঁচাতে দৌড়তে থাকেন৷ কিন্তু প্রাণ বাঁচাতে পারেননি দাদা পরিমল সাহা৷ উল্লেখ্য, দোষী সাব্যস্ত ১২ জনের সাজা ঘোষণা হবে আগামীকাল৷ এই সাজা শুনতে আগামীকালও আদালত চত্বরে জনসাধারণের ভিড় যে থাকবে তা বলাইবাহুল্য৷
এদিন, পরিমল সাহা হত্যা মামলায় দোষী সাব্যস্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি হতে পারে মৃত্যুদন্ড এবং সর্বনিম্ন শাস্তি হতে পারে যাবজ্জীবন কারাদন্ড৷ শুক্রবার এই মামলার স্পেশাল পিপি সম্রাটকর ভৌমিক এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷
তিনি জানান ভারতীয় দন্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ৩০৭, ৩০২, ৩২৬, ১২০-এর (বি) এবং এক্সক্লুসিভ সাবটেন্ড অ্যাক্টের তিন নম্বর ধারায় তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ তিনি আরো জানান, যেসমস্ত ধারায় ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে তাতে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির বিষয়টি বিচারকই চূড়ান্ত করবেন৷ দোষী সাব্যস্তদের সাজা শনিবার ঘোষণা করা হবে৷ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে পরিমল সাহা হত্যা মামলায় মোট ২৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠন করা হয়েছিল৷ এর মধ্যে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ ১ জন অভিযুক্ত পলাতক৷ মামলা চলাকালীন সময়ে যে ৭ জন মারা গেছেন এরা হলেন গুলজার হরিজন, কালী হরিজন, দুদোল সেনগুপ্ত, অজিত কুমার দে, বিশ্বজিৎসাহা, রঞ্জিত দাশগুপ্ত এবং সাধন কর্মকার৷ এছাড়া মফিজ মিয়া এখনো পলাতক বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে৷
উল্লেখ্য, রাজ্যে দীর্ঘদিন ধরে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা মামলাগুলি খোঁজে বের করে উচ্চ আদালত৷ তাতেই উঠে আসে ৩২ বছর ধরে বিশালগড়ে কংগ্রেস বিধায়ক পরিমল সাহা হত্যা মামলাটি৷ এরপরই উচ্চ আদালত মামলাটি শুরু করার জন্য নির্দেশ দেয়৷ সে মোতাবেক পশ্চিম জেলা দায়রা ও জজ আদালতে মামলার পুনরায় শুনানি শুরু হয়৷ আজ এই মামলায় ১২ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়৷

