দূরদর্শনে সাংবাদিক নিয়োগে কেলেংকারী, খড়গ ঝুলছে কলঙ্কিত এস পি মন্ডলের উপর

EDUCATIONনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ এপ্রিল৷৷ আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রে সাংবাদিক নিয়োগে কেলেঙ্কারীর মধ্যমণি শঙ্কর প্রসাদ মন্ডলের উপর খড়গ ঝুলছে৷ কেলেংকারী সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় তথ্য সম্প্রচার মন্ত্রকের অধীন প্রসার ভারতীর প্রধান কার্য্যালয়ে পৌঁছে গিয়েছে৷ বিভাগীয় স্তরে চলছে তদন্ত৷ যেকোন সময় শঙ্করবাবুর ঘাড়ে কোপ পড়তে পারে বলে সূত্র অনুসারে জানা গিয়েছে৷ সেই সঙ্গে আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রে সাংবাদিক নিয়োগের যে কেলেংকারী হয়েছে সে বিষয়ে খুব শীঘ্রই আদালতে মামলা করা হবে বলেও সূত্রের খবর৷ স্বাভাবিকভাবেই নিয়োগ প্রক্রিয়ার নির্বাচন কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকা শঙ্কর বাবুকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে বলে খবর৷ বেশ কয়েকজন যোগ্য বঞ্চিত প্রার্থী তথ্য জানার অধিকার আইনের মাধ্যমে নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করার জন্য আবেদন করেছেন৷ তথ্য হাতে পেলেই বঞ্চিতরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন বলে জানা গেছে৷
আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রের বার্তা বিভাগের প্রধান শঙ্কর প্রসাদ মন্ডলের প্রায় কুড়ি বছর যাবত রাজ্যের সাথে কর্মসূত্রে যোগাযোগ৷ কখনো তিনি প্রসার ভারতীর আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রে আবার কখনো তিনি আকাশবানী আগরতলা কেন্দ্রের দায়িত্বে৷ আকাশবানীতে থাকার সময়ও তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে লোক নিয়োগে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷ নিয়োগ নীতিকে বিসর্জন দিয়ে শ্রী মন্ডল তাঁর পছন্দের লোককে আকাশবানীতে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, এমন অভিযোগ আগেও উঠেছে৷ প্রসার ভারতীর দূরদর্শন এবং আকাশাবানী দুটোই রাজ্যে ঐতিহ্য হারিয়েছে৷ এই দুটি কেন্দ্রেই স্বার্থান্বেষী মহল থাবা বসিয়েছে৷ অর্থ দোহনের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে৷ প্রোগ্রামের মান দিনে দিনে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে৷ দর্শক স্রোতারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন৷ লুটপাটের বাণিজ্য চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷
আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রে জেলা স্তরে সাংবাদিক নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাপক কেলেংকারীর খবর ছড়িয়ে পড়তেই বিভিন্ন জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ চরম আকার ধারণ করেছে৷ ধীরে ধীরে কেলেংকারীর আরও তথ্য প্রকাশ্যে আসছে৷ অযোগ্যদের নগদ নারায়ণের বিনিময়ে নিয়োগ করার আরও একটি তথ্য সামনে উঠে এসেছে৷ সিপাহীজলা জেলায় যে ভাগ্যবানকে সাংবাদিক হিসেবে নির্বাচন কমিটি নিয়োগ করেছেন সেই সাংবাদিকের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ণ উঠেছে৷ অভিযোগে জানা গিয়েছে, সিপাহীজলা জেলার ভাগ্যবান সাংবাদিকের বাড়ি সংশ্লিষ্ট জেলাতেই নয়৷ যদিও নিয়োগের যোগ্যতার মানদন্ডে তথা প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ ছিল প্রার্থীকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট জেলার স্থায়ী বাসীন্দা হতে হবে৷ কিন্তু, সিপাহীজলা জেলায় যাকে নিয়োগ করা হয়েছে তিনি ঐ জেলার বাসীন্দা নন৷ শুধু তাই নয় রাজ্য সরকারের কালো তালিকাভুক্ত একটি প্রোডাকশন সংস্থার সাথে যুক্ত প্রার্থীকে নিয়োগ করা হয়েছে৷ প্রতিটি জেলাতেই সাংবাদিক নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে৷ এদিকে, জানা গিয়েছে, উত্তর জেলায় দূরদর্শনের সংবাদ প্রেরক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন তপন বনিক৷ শ্রী বনিকের নিয়োগ নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে৷ তিনি ঊনকোটি জেলার কুমারঘাটের বাসিন্দা৷ তাঁকে নিযুক্ত করা হয়েছে উত্তর জেলার সংবাদ প্রেরক হিসেবে৷ নিয়োগ নীতি মোতাবেক জেলা মুখ্যালয় থেকে দশ কিলোমিটারের মধ্যে প্রার্থীর স্থায়ী ঠিকানা হতে হবে৷ এদিকে, ঊনকোটি জেলায় দূরদর্শনের জেলা সংবাদ প্রেরক হিসেবে রয়েছেন অনুপম ভট্টাচার্য৷ কিন্তু, ঊনকোটি জেলার বাসিন্দা হয়েও উত্তর জেলার সংবাদ প্রেরক হিসেবে তপনবাবুর নিযুক্তির বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকদের মধ্যে নানা প্রশ্ণ উঠতে শুরু করেছে৷ নিয়োগ নীতি মোতাবেক যেখানে দশ কিলোমিটারের মধ্যে স্থায়ী ঠিকানা হতে হবে সেখানে উত্তর জেলা মুখ্যালয় থেকে অন্তত ৩৫/৪০ কিলোমিটার দূরে তপনবাবুর বাড়ি৷ সেক্ষেত্রে তিনি নিয়োগ নীতি মোতাবেক নিযুক্তি পাওয়ার যোগ্য নন বলেও অভিমত সাংবাদিকদের৷ অভিযোগ নিয়ম নীতি উলঙ্খন করে আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রের বার্তা বিভাগের প্রধানকে দুই লক্ষ টাকার বিনিময়ে উত্তর জেলায় সংবাদ প্রেরকের দায়িত্ব তথা চাকুরীটি বাগিয়ে নেওয়া হয়েছে৷ আরও অভিযোগ তপনবাবু বেশীদিন হয়নি সাংবাদিকতা পেশায় এসেছেন৷
সমস্ত নিয়ম নীতি বিসর্জন দিয়ে দূরদর্শনে সাংবাদিক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিরাট টাকার খেলা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মধ্যমণি হিসেবে রয়েছেন আগরতলা দূরদর্শন কেন্দ্রের বার্তা বিভাগের প্রধান৷ তিনি অনেক ধরাধরি করে আসাম থেকে ত্রিপুরায় এসেছেন এই বাণিজ্যের ধান্দাতেই, এমন অভিযোগ আজ রাজ্যে সাংবাদিকদের মধ্য থেকে উঠেছে৷ দূরদর্শন কেন্দ্র আগরতলা এবং আকাশবানী আগরতলা, এই দুটি সরকারী প্রচার মাধ্যমে এই ধরনের কেলেংকারীর সুষ্ঠু তদন্ত হলে বেশ কয়েকজনের পায়ের তলার জমি সরে যাবে বলে সাংবাদিকদের অভিমত৷